পুঁজিবাজারে সুবিধা দিয়ে অর্থবিল পাস

, সংসদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 17:26:13

জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: বহুল আলোচিত সঞ্চয়পত্রের উপর উৎসে কর, বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে টিআইএন বাধ্যতামলূক করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরিবর্তনে ইঙ্গিত না দিয়েই অর্থবিল-২০১৯ সংসদে পাস হয়েছে। তবে পাস হওয়া অর্থ বিলে পুঁজিবাজারের সুবিধার্থে কয়েকটি সংশোধনী গ্রহণ করা হয়েছে। সংসদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অর্থমন্ত্রীর অসুস্থতায় অর্থবিল পাসের প্রস্তাব করেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (২৯ জুন) রাতে সংসদে একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে অর্থবিল-২০১৯ পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও বিলটি জনমত যাচাই ও প্রচারের প্রস্তাব করেন বিরোধীদলীয় কতিপয় সদস্য। তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টির দলীয় সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম, পীর ফজলুর রহমান, কাজী ফিরোজ রশীদ, রওশন আরা মান্নান, মো. রুস্তম আলী ফরাজী, গণফোরামের মোকাব্বির খান, বিএনপির রুমিন ফারহানা নিজ নিজ সংশোধনী প্রস্তাবের উপর আলোচনা করেন। এছাড়া সরকারি দলের সদস্য আ স ম ফিরোজ, উপাধক্ষ্য আব্দুস শহীদ, শহিদুজ্জামান সরকার, ইসরাফিল আলমও প্রস্তাব দেন।

এর আগে গত ১৩ জুন সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপনের পর সংসদ সদস্যরা বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর পাঁচ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করায় অর্থমন্ত্রীর ব্যাপক সমালোচনা করেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছিলেন, ‘সঞ্চয়পত্র গ্রামের গরিব দুঃখীদের হক সেখানে আপনি হাত দিলেন কেন? এটা প্রধানমন্ত্রীর স্কিম। এটা সংশোধন করবেন।’

এছাড়া বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, বাজেটে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে গেলে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটা আসলে পুনঃবিবেচনা করা দরকার। এক্ষেত্রে তিনি প্রস্তাব করেছিলেন ৫০০ ইউনিটের বেশি ব্যবহারকারীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। এ রকম জনমুখী নানা প্রস্তাবের একটিও গ্রহণ করা হয়নি। তবে এসআরও জারি করে সংশোধন করার সুযোগ রয়েছে।

কতিপয় সংশোধনী গ্রহণ করে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থ বিল পাসের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে দিলে তা সর্বাধিক হ্যাঁ ভোটে পাস হয়। এ সময় সরকারি দলের সদস্যরা টেবিল চাপড়ে সমর্থন জানান।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটের (অর্থ বিলের) কয়েকটি বিষয়ে ব্যবসায়ী, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারী সাধারণ মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে কিছু সংশোধনী আনার প্রস্তাব করছি। এর মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি যে পরিমাণ স্টক ডিভিডেন্ট প্রদান করবেন, একই পরিমান নগদ ডিভিডেন্ট দেবেন। এক্ষেত্রে স্টক ডিভিডেন্টের পরিমান নগদ ডিভিডেন্টের চেয়ে বেশি দেয়া হয় সেক্ষেত্রে সকল স্টক ডিভিডেন্টের ওপর ১০ শতাংশ হারে করা প্রদান করতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে এটি ১৫ শতাংশ করার হয়েছিল।

এছাড়া পুজিবাজারে কোন কোম্পানির পরবর্তী নিট লাভের ৭০ শতাংশ রিটেইন আর্নিংস, রিজার্ভসহ বিভিন্ন খাাতে স্থানান্তর করতে পারবেন। বাকি ৩০ শতাংশ স্টক, ডিভিডেন্ট ও নগদ লভাংশ দিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে প্রতিবছর রিটেইন আর্নিংস ও রিজার্ভসহ স্থানান্তর মোট অর্থের উপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।

শেয়ারবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হোক।

স্থানীয় পর্যায়ে একাধিক মূসক হার প্রচলন করা হচ্ছে। তবে ১৫  শতাংশের নিন্মহার হারগুলোতে উপকরণ কর রেয়াত নেয়ার সুযোগ না থাকায় ব্যবসায়ীরা হ্রাসকৃত হারের পরিবর্তে উপকরণ কর গ্রহন করে ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদানে সুযোগ সৃষ্টির জন্য দাবি করেছেন। হ্রাসকৃত হারের  পাশাপাশি কেউ চাইলে যেন ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে রেয়াত পদ্ধতিতে অংশ গ্রহন করতে পারে আইনে সে বিধান আনা হবে।

দেশীয় শিল্পের রক্ষায় তাঁত শিল্পের ওপর পাঁচ শতাংশ মূসকের পরিবর্তে প্রতি কেজিতে চার টাকা হারে সুনির্দিষ্ট হারে মূসক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেশীয় শিল্প রক্ষায় প্রস্তাবিত বাজেটে বেশকিছু শুল্ক হ্রাস-বৃদ্ধি করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে দেশের কাগজ ও গ্যাস উৎপাদনকারী শিল্প যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দেশীয় মুদ্রন শিল্পে প্রণোদনা ও বন্ড ব্যবস্থার অপব্যবহার রোধ করতে দেশে উৎপাদন হয় না এমন পেপারগুলোর শুল্ক হার যৌক্তিক করা হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানিকৃত কতিপয় পণ্যের শুল্ক হার পুনঃনির্ধারন করা হবে।

গত ১৩ জুন সংসদে বাজেট উপস্থাপনের পর থেকে যেসব বিষয়ে বেশি আলোচনা সমালোচনা হয়েছে সেগুলো হলো- বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে টিআইএন নম্বর বাধ্যতামূলক করা এবং সঞ্চয়পত্রের উৎসে কর হার বৃদ্ধির প্রস্তাব। কিন্তু এ দুটি বিষয়ে কোন সংশোধী আনা হয়নি। প্রস্তাবিত বাজেটের প্রস্তাবই বহাল রাখা হয়েছে পাসকৃত অর্থবিলে।

অর্থবছর ২০১৯-২০ এর জন্য ১৩ জুন পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এরপর সংসদে ২৭০ জন সদস্য এতে আলোচনায় অংশ নেন। অবশেষে সংসদে বিলটি পাস করা হয়েছে। যা ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। রোববার (৩০ জুন) সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট পাস হওয়ার কথা রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর