রাজনীতির স্পেস নাই বলা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে

, সংসদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা, জাতীয় সংসদ ভবন থেকে | 2023-08-12 18:43:29

বিএনপিকে জঙ্গির দোসর, সাম্প্রদায়িক শক্তি বলে আখ্যায়িত করে সাবেক মন্ত্রী ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি বলেছেন, ‘এখন রাজনীতির স্পেস নাই বলাটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। শান্তির শত্রুদের জন্য কোনো রাজনৈতিক স্পেস দেওয়া যায় না।’

‘গণতন্ত্রের সুযোগ নিয়ে যারা গণতন্ত্রের পিঠে ছোবল মারে, তাদের জন্য মায়া কান্না গণতন্ত্রকে ধ্বংসই করে। এ ধরনের রাজনৈতিক শক্তিকে ক্রেন দিয়ে তুলে বিরোধী দলে বসানো, এটা দেশের জন্য এবং গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গলজনক না,’ মন্তব্য ইনুর।

সোমবার (২৪ জুন) বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এভাবেই বিএনপির সমালোচনা করেন তিনি। এর আগে বিকেল সোয়া ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দিনের কার্যসূচি শুরু হয়।

হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘অর্থনীতির সমৃদ্ধির জন্য রাজনীতির শান্তি দরকার। শেখ হাসিনার সরকারকে অনেক মূল্য দিয়ে সেই শান্তি অর্জন করতে হয়েছে। তাই শান্তির শক্তিতে অশান্তির হোতাদের কোনো ছাড় নাই। দমন ওদের করতেই হবে। আগুন সন্ত্রাস, জঙ্গি, খুনি, যুদ্ধাপরাধী ও দুর্নীতির বিচার প্রতিহিংসা না। এসব ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া উচিত না।’

‘এমনও রাজনৈতিক শক্তি বিদ্যমান, যারা সামরিক শাসনের আমলে রাজনৈতিক বিষবৃক্ষ হিসেবে কাজ করেছে। বিএনপি হচ্ছে সেই দল, যে দলে খুনি, জঙ্গি, সাম্প্রদায়িক মহলকে রাজনৈতিক ছায়া দেওয়া হয়। এটি সাম্প্রদায়িক দল। সংসদে বা বাইরে যেখানেই থাকুক না কেন বিএনপি এখনো যুদ্ধাপরাধের বিচার মানে না, বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা মানে না। সংবিধানের চার নীতি মানে না। স্বাধীনতার ঘোষণা মানে না। সুতরাং এটি একটি সংবিধান এবং দেশ বিরোধী রাজনৈতিক দল। ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিন পালন করা হয়। জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে বলার চেষ্টা করেন তারা। এ ধরনের রাজনৈতিক শক্তিকে ক্রেন দিয়ে তুলে বিরোধী দলের বসানো দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গলজনক না। অর্থনীতির উন্নতীর ধারা অব্যাহত রাখতে হলে বিএনপির মত সাম্প্রদায়িক জঙ্গির দোসর রাজনৈতিক দলকে বাংলাদেশের রাজনীতির ময়দান থেকে মাইনাস করতে হবে,’ যোগ করেন ইনু।

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা অর্জন করেছে। সেই জন্য শেখ হাসিনা এবং তার সরকার জিপিএ-৫ এবং গোল্ডেন-৫ পাবেন। প্রতিবারই বড় বাজেট দিচ্ছেন এবং প্রতিবারই বড় বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা প্রদর্শন করছেন। সেই সক্ষমতা প্রদর্শন করতে পেরেছেন বলেই এবার পাঁচ লাখ কোটি টাকার ওপরে বাজেট দেওয়া হয়েছে। বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা শেখ হাসিনা সরকারের আছে।’

জঙ্গি-সন্ত্রাসের পুনরুদ্ধারে সব ফাঁক ফোকর বন্ধ করে রাজনৈতিক শান্তির ধারাকে টেকসই করা দরকার। ঋণ খেলাপি ও লুটেরাদের কবল থেকে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতকে মুক্ত করতে হবে। দুর্নীতি ও লুটপাট লোকসানের দুষ্ট চক্রের হাত থেকে রাষ্ট্রীয় খাতকে রক্ষা করতে হবে। কর ও রাজস্ব ফাঁকির ধারা বন্ধ করে জিডিপির অনুপাত এবং করের অনুপাত ১০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। শিক্ষা খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে বলেও উল্লেখ করেন সাবেক এই তথ্যমন্ত্রী।

মোবাইল ফোনের টক টাইম এবং স্মার্ট ফোনে শুল্ক আরোপের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘টক টাইমে বাড়তি কর চাপানোর জন্য এবং স্মার্টফোনে উচ্চহারে কর চাপানোর জন্য ক্ষতি হবে। সঞ্চয়পত্রের ওপরে উৎসে করটা পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ করাটা নেতিবাচক হবে। অপ্রদর্শিত এবং কালো টাকা বৈধ করার ব্যাপারটা গ্রহণ করি না। এটা অনৈতিক মনে করি।’

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘কালো টাকা বিনিয়োগের নামে বৈধ করার সুযোগ দিয়ে গত ১০ বছরে কোনো সুফল আসেনি। অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়েনি। ড. কামাল হোসেন এবং খালেদা জিয়া ছাড়া এই সুযোগ আর কেউ নেননি। আর কারা কারা নিয়েছেন জানি না। কারা কারা সুযোগ নিয়েছেন সেই তালিকা সংসদে প্রকাশের দাবি জানাচ্ছি। কালো টাকা ব্যবহার করার পক্ষে যতই ছাফাই থাক না কেন এটা অনৈতিক এবং সংবিধানের চেতনা বিরোধী। তাই মনে করি, এই কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাব প্রত্যাহার করা উচিত।’

‘কালো টাকার কোনো ভূমিকা ছাড়াই আট শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। সেখানে কালো টাকা থেকে সাদা হওয়া অল্প টাকা এত বড় সাদা অর্থনীতির গায়ে কলঙ্ক লেপন করবে। আমি চাই না শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাদা অর্থনীতির গায়ে কালো টাকার কলঙ্ক লাগুক। তাই কালো টাকা সাদা করার সুযোগের প্রত্যাহার চাই,’ যোগ করেন হাসানুল হক ইনু।

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের আইন সংশোধন করা দরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনতা প্রয়োগ করুক। ব্যাংক কমিশন গঠন করার প্রস্তাব কার্যকর করা দরকার। ব্যাংকিং খাতের বিষফোঁড়া সার্জারি করার ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করার অধিকার দেওয়া হোক। যতক্ষণ পর্যন্ত ব্যাংকিং কমিশন না হচ্ছে, ততক্ষণ কেন্দ্রীয় ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া হোক।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর