আমি সাতবারের এমপি, একবারও প্লট নেইনি

, সংসদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 08:48:49

জাতীয় সংসদ ভবন থেকে: সংসদ সদস্যরা প্রত্যেকেই নিজের নামে প্লট চান, তবে এটি নিয়মে নাই উল্লেখ করে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, 'প্রত্যেকবার প্লট, আহ শুনতেই খুব ভাল লাগল। আমি সাতবারের সংসদ সদস্য, কিন্তু একটা প্লটও নেইনি। আমার নামে একটা প্লটও নেই। শুধু দল থেকে একবার একটি বুলেট প্রুফ গাড়ি কিনে দিয়েছিল। সেই গাড়ির কারণেই ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট হামলার পরেও রক্ষা পাই।'

সোমবার (১৭ জুন) বিকেলে একাদশ সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপর আনিত ছাঁটাই প্রস্তাবের জবাবে সংসদ নেতা এসব কথা বলেন। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ ও জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান প্লটের বিষয়ে যে দাবি করেন তার জবাবে সংসদ নেতা বলেন, 'যতবার এমপি হবেন ততবার প্লট পাবেন। ইস শুনে খুব ভাল লাগল আমি ৭ বারের এমপি এ পর্যন্ত একটাও প্লট পাইনি। আমি একটা প্লট এ পর্যন্ত নেইনি। আর মাত্র একবারই বুলেট প্রুফ গাড়ি কিনে দিয়েছিল আমার দল। আর ওটা দিয়েছিল বলেই বোধ হয় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আমার উপর যখন প্রকাশ্য দিবালোকে তৎকালীন সরকার বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার তাদের আমলে প্রকাশ্য দিবালোকে গ্রেনেড হামলা করা হয় বোধ হয় ওই গাড়িটির জন্যই রক্ষা পেয়েছিলাম। প্রতিবার নিতে হবে এটা কিন্তু ঠিক না। আর একটি বিষয় আছে সরকারের নিয়ম আছে সরকারি প্লট পরিবারের একজনই পায়। এখন স্বামীকেও দিতে হবে, স্ত্রীকেও দিতে হবে, সবাই সব সদস্য বলবে। যারা মহিলা আছেন তারা মনে করবে আমিও নেব আমার স্বামীও নেবে। পুরুষরা বলবে আমিও নেব আমার স্ত্রীও নেবে এটা তো হয় না।'

হারুনুর রশীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, 'একজন সদস্য খুব দুঃখ পেয়েছেন উনিও প্লট নিয়েছেন উনার স্ত্রীও প্লট নিয়েছেন, এই খবর শুনে স্ত্রীর প্লট বাতিল হয়েছে। আসলে ভুল করেছে স্ত্রীরটা রেখে উনারটা বাতিল করা উচিত ছিল। তাহলে উনি শান্তিতে থাকতে পারতেন। ঘরে শান্তি পেতেন ঘরে অশান্তি হত না।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বালিশ নিয়ে যে ঘটনার কথা বলা হচ্ছে। কথা হচ্ছে যিনি দায়িত্বে ছিলেন তার কিছু পরিচয় আমি পেয়েছি। এক সময় সে বুয়েটের ছাত্রদলের নির্বাচিত সহ সভাপতিও (ভিপি) নাকি ছিল। কাজেই কোথায় থেকে এল? যেহেতু ভদ্রলোক নেই, তাই নাম বলতে চাই না। তাকে সেখান থেকে সরানোও হয়েছে। এখানে এমন এমন লোক রয়ে গেছে যারা জন্ম থেকেই তারা দুর্নীতিবাজ। তার কারণও আছে এই দলটি বিএনপি যারা করেছিল।'

তিনি বলেন, 'বিএনপির যিনি নেতা, যিনি সামরিক সেনা প্রধান ছিলেন, সেনা প্রধান থাকা অবস্থায় সংবিধান লঙ্ঘন করে সামরিক আইন লঙ্ঘন করে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট খন্দকার মোশতাকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে জাতির পিতাকে সপরিবারের হত্যার সঙ্গে যিনি জড়িত। এই হত্যার পর খুনিদের ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সটাকে আইন হিসেবে বৈধতা দিতে ভোটারবিহীন সংসদে পাস করিয়ে নিয়েছিল। একটা রাজনৈতিক দল নিজে ক্ষমতায় বসে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে। অস্ত্রের মুখে সায়েম সাহেবকে হটিয়ে দিয়ে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল জিয়া। আর তার পর ক্ষমতায় এসে বলেছিল মানি ইজ নো প্রোবলেম, আই উইল মেক ডিফিকাল্ট ফর দ্যা পলিটিসিয়ান। অর্থাৎ টাকা কোনো ব্যাপার না। ক্ষমতা দখল করে যারা এই কথা বলেন তাদের হাত দিয়ে যে দল গড়ে ওঠে তাদের চরিত্রটাও জানা উচিৎ।'

রূপপুরের বালিশ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'সেখান থেকে যদি ধরি উৎসটাই হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। উৎসটাই দুর্নীতির মাধ্যমে গড়ে উঠেছে। সেই বালিশ তত্ত্ব আজকে একটা প্রশ্ন। বালিশ তত্ত্ব নিয়ে আমার একটা প্রশ্ন আছে। পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র সেখানে গড়ে উঠছে। আর কিছু না পেলেও সেখানে পেল বালিশ। কারণ সেই বালিশটা কোন বালিশ? এটা কি পালকের বালিশ? তুলার বালিশ? কোন তুলার কার্পাস তুলা? না শিমুল তুলা? নাকি সিনথেটিক তুলা? নাকি ঝুট তুলার বালিশ, কি বালিশ সেটাও একটা প্রশ্ন। দ্বিতীয় কথা বালিশ নিয়ে আন্দোলন করতে দেখলাম রাস্তায়। এত মানুষ এত বালিশ এক দিনে কিনে ফেলল! কোথা থেকে? এই টাকার যোগান দাতা কে? সেটাও একটা প্রশ্ন। হ্যাঁ, যখনই তথ্য পেয়েছি সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। যে দলেরই হোক আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।'

শেখ হাসিনা বলেন, '১৯৭৫ থেকে দুর্নীতিটাকে নীতি হিসেবে গ্রহণ করে এতদিন যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে সমস্ত জায়গায় জঞ্জাল ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে। আর একজন বললেন- একদিনেই দুর্নীতি দূর করবে, এটা কী সম্ভব? এত বছর ধরে চেষ্টা করে তো যাচ্ছি। আমার ওপর বার বার দুর্নীতির অপবাদ দেবার চেষ্টা বহুবার হয়েছে। মামলার কথা বলেন, আমার নিজের বিরুদ্ধে দিয়েছে এক ডজন মামলা। আর আমাদের নেতাকর্মীদের শত শত মামলা এবং অত্যাচার। কিন্তু একটাওতো প্রমাণ করতে পারেনি। এমনকি বিশ্বব্যাংক তারাও দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল কিন্তু প্রমাণ করতে পারেনি। এফবিআই থেকে শুরু করে পৃথিবীর এমন কোনো সংস্থা নাই যে তদন্ত না করেছে। কিন্তু কোনো দুর্নীতি আমার বা আমার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোন তথ্যই তারা পাইনি। বলতে বাধ্য হয়েছে সমস্ত কিছু ভুয়া। দুর্নীতি করতে এখানে আসিনি। তবে এটা ঠিক এই দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া একান্তভাবে প্রয়োজন। কিন্তু সরকারি চাকরিতে একবার ঢুকলে সেখান থেকে বের করা যায় না এটাও একটা সমস্যা।'

তিনি বলেন, 'এখন দুর্নীতি দমন কমিশন অন্তত স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। সেভাবে তারা শক্তিশালী সেটুক আমরা করেছি। তবে এই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বা অনুমোদন দিল একটা । বিশেষ করে যে ভবন টার কথা বলা হলো। যেখানে আগুণ লাগল। ওই ভবনের মালিক কে ছিল সেও ওই বিএনপি ঘরনার লোক। আর উপরে যে তিন চার তলা করল সেটাও বিএনপির শাসনামলে রাজউকের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এই তিন চার তালা করা হয়েছিল। বিএনপির একজন বলেছেন মনে রাখা উচিৎ। প্রথমে শুরু জিয়াউর রহমানের আমলে এরপরে খালেদা জিয়া এরপর এরশাদের আমলে। এই ঘটনাগুলি তারা ঘটিয়েছে কোন নিয়ম শৃঙ্খলা ছিল না। যার জন্য দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে আর তারপরে এই ধরনের অনিয়ম। এমনকি একটি প্লটে একটা পরিবার থাকার কথা সেখানে মাল্টি স্টোরেজ ভবন করার অনুমতি কারা দিয়েছেন? বিএনপির আমলেই দেওয়া ‍শুরু হয়। আমি প্রথম ক্ষমতায় আসার পর ধানমণ্ডিতে ১৫ তলা ভবন করার অনুমতি বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আবার ‍যখন ক্ষমতায় আসলাম না আবার বিএনপি এসে আবার দিয়ে দিল।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'রাজউকের অনিয়মগুলো প্রতিনিয়ত ধরি। আমি একমাত্র প্রধানমন্ত্রী, প্রতিটি একনেক বৈঠকে আমি বসি। অর্থনীতি প্রতিটি নকশা দেখি এবং বলি । তাদের মন মানসিকতাটাই এমন হয়ে গেছে সেখানে থেকে পরিবর্তন করে আনাটা অত্যন্ত কষ্টকর। তারপরেও যেখানে যত ভবন হচ্ছে সেখানে যেন প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা থাকে।'

গনফোরামের সাংসদ মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, 'সুশাসনের অভাব। উনি যে দল থেকে এসেছেন নবগঠিত দল। আসলে আওয়ামী লীগ ভেঙেই এই দল করা হয়েছিল। একসময় উনাদের নেতা আওয়ামী লীগ করতেন। আওয়ামী লীগ ছেড়ে এই দলটি করেছেন। তিনি তার দলে কী শৃঙ্খলাটা আছে? কোন গণতন্ত্রে আছে সেটাও আমার প্রশ্ন। তার দলেই সুশাসন নাই গণতন্ত্র নাই যেখানে কেউ কথা বলতে গেলে বলে খামোশ তার কাছ থেকে কি আসা করা যায়। আমাদের সুশাসন আছে বলেই বাংলাদেশ আর্থ সামাজিকভাবে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।'

গুলিস্তান ভবন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'প্রতিটি ভবন যেগুলো খুব ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো কী চট করে সম্ভব যেখানে মানুষ বসবাস করে চট করে ভবনগুলি ভেঙে ফেলা। যারা বসবাস করে তাদেরকেও তো ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এটা মনে রাখতে হবে। চট করে বাড়ি থেকে বের করা যায় না। এই মন্ত্রণালয় থেকে কুড়িল ফ্লাইওভারে দ্রুত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে পারেন। যে অ্যাপোলো হাসপাতাল যারা অর্থশালী যেখানে চিকিৎসা না নিলে তাদের নাকি সম্মানই থাকে না। মাত্র ১৫ মিনিটের পৌঁছাতে পারে, আগে যেখানে পৌঁছাতে গেলে তিন ঘণ্টা সময় নিত। এরকম অনেক স্থাপনা রাস্তাঘাট করেছি। সারাদেশেই উন্নয়ন হচ্ছে। তিনি বলেন, ঢাকাকে তিলোত্তমা করে দেওয়া কারো পক্ষেই সম্ভব না। এটা পুরানো শহর তারপরেও পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলো না থেকে রাস্তা ঘাট যা করার সেটার ব্যবস্থা করছি। উন্নত করা হচ্ছে করা হবে।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর