বাজেট আলোচনায় রাজনৈতিক উত্তাপ

, সংসদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা, জাতীয় সংসদ ভবন থেকে | 2023-08-22 16:58:27

চলতি অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় রাজনৈতিক তিনটি পক্ষের মধ্যে তুমুল বির্তক হয়েছে।

এর মধ্যে সরকারি দলের সদস্য আর বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্যরা এক হয়ে বিএনপির সদস্যদের বিপক্ষে কথা বলেন। এতে কিছু সময় সংসদে মৃদু উত্তপ ছড়ায়। বাজেট বক্তৃতা ছাপিয়ে চলতে থাকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈধতা ও স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে বির্তক।

রোববার (১৬ জুন) বিকেলে একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচানায় অংশ নিয়ে এ উত্তাপের সূত্রপাত করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ। এরপর তাতে তাপ বাড়ান একই দলের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তাদের বিরোধিতা করে বক্তব্য রাখেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ ও পীর ফজলুর রহমান।

বিএনপির হারুনুর রশীদ বক্তৃতার শুরুতে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক ও একাদশ সংসদ নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এছাড়া নির্বাচন কমিশনকে অযোগ্য ও ব্যর্থ বলে উল্লেখ করেন। রুমিন ফারহানাও সংসদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আন্দোলনের নামে অগ্নিসন্ত্রাসের মাধ্যমে বিএনপি শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। সারাদেশে ভয়াল নাশকতা চালিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় বিএনপি নেতারা নানা হুমকি দিয়েছেন। বিএনপি নেত্রী দুর্নীতি করেছেন, আদালতের রায়ে দণ্ডিত হয়েছেন। সেখানে সরকারের কী অপরাধ? বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে ও সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় রয়েছে। জনগণ থেকে আপনারা (বিএনপি) প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপির অনেকে এখনও জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক বলতে চান। কিন্তু কট্টর বিএনপি-জামায়াত যাদের ঘাড়ে এখনও পাকিস্তানের ভূত চেপে বসে আছে, তারাও যদি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়েন, তারাও স্বীকার করতে বাধ্য হবেন যে স্বাধীনতার ঘোষণাসহ প্রতিটি কার্যক্রমে রয়েছে একটি মাত্র নাম- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীনতার দীর্ঘ আন্দোলন ও ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার আগে কেউই জিয়াউর রহমান নামটি পর্যন্ত জানতো না।’

আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘বাংলাদেশের যেদিকেই তাকাই চারদিকে শুধু উন্নয়ন ও অগ্রগতি। সারাবিশ্ব আমাদের প্রতিটি সেক্টরের এই উন্নয়নের কথা স্বীকার করেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে সৎ, কর্মঠ ও পরিশ্রমী পাঁচ প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে শেখ হাসিনা অন্যতম। সরকারের পরিকল্পনা তৃণমূলে শতভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দেওয়া বাজেট গোটা দেশের চিত্রকেই পাল্টে দিয়েছে। প্রতিটি মানুষের ঘরে এখন বিদ্যুতের আলো। জ্ঞানভিত্তিক ও প্রযুক্তিভিত্তিক সমাজ বিএনপি বিশ্বাস করে না বলেই তারা সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হয়নি। বিএনপির মুখে সমালোচনা মানায় না। কারণ তাদের সময় দেশে কোনো উন্নয়নই হয়নি।’

বিএনপি নেতার বক্তব্যের জবাবে পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘এই সংসদ অবৈধ হলে তারা (বিএনপি নেতাকর্মীরা) আসেন কীভাবে? সংসদে থাকা আপনারা সবাই তো অবৈধ। সংসদ কখনো অবৈধ হতে পারে না, ব্যর্থতা থাকলে সেটা বিএনপির। সংসদ বৈধ বলেই তারা শপথ নিয়েছেন, কথা বলছেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধে ইনডেমনিটি দিয়েছিলেন। কেননা বঙ্গবন্ধু হত্যার বেনিফিশিয়ারি একমাত্র বিএনপি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, বৃটিশ রাষ্ট্রদূতের ওপর গ্রেনেড হামলা, সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়াকে গ্রেনেড হামলা করে হত্যা, অগ্নিসন্ত্রাস, পুড়িয়ে মানুষ হত্যার কথা কি বিএনপি নেতারা ভুলে গেছেন? আগে আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখে পরে কথা বলুন।’

সরকার দলের সংসদ সদস্যদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘বিএনপির এক নেতা নিজেকে ইমানদার দাবি করেছেন। যদি তাই হয়, তবে শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু করছেন, মেট্রোরেল করছেন, বড় মহাসড়কগুলো চার লেনে উন্নীত হচ্ছে- এসব কথা সংসদে বলুন, সত্যকে সত্য বলুন। বিনা ভোটে সংসদে এসে সংসদকে অবৈধ বলা ঠিক হয়নি। আমরা সবাই নির্বাচন করে জনগণের ভোট নিয়ে এসেছি।’

প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে গণফোরামের মোকাব্বির খান বলেন, ‘সাধারণ মানুষ নয়, কয়েকটি স্বার্থান্বেষী ও ব্যবসায়ী মহলের দিকে তাকিয়ে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারের নানা পর্যায়ে দুর্নীতি হচ্ছে। তাই সরকারের ব্যয় সঠিকভাবে করতে হবে। রাজনৈতিক মহলের সঙ্গে উচ্চ মূল্যে চুক্তির কারণে বিদ্যুৎ খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার ওপর ক্ষতি হচ্ছে। স্মার্ট বাজেটের নামে গরিবকে আরও গরিব, ধনীকে আরও ধনী করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর