ভাইয়ের লাশ নিতে অস্বীকৃতি বোনের!

চট্টগ্রাম, জাতীয়

মুহিববুল্লাহ মুহিব, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 22:41:09

কক্সবাজার: মা-বাবার মৃত্যু’র পর যে বোনের জন্য সবকিছু উজাড় করে দিয়েছিলেন ভাই স্বপন সিকদার (২৬)। সেই বোনেই আজ ভাইয়ের লাশ নিতে অনিহা প্রকাশ করলো। যা হতবাক হয়েছে রামুবাসী ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা।

পুলিশ সুত্রে জানা যায়, গত বুধবার (২৯ আগস্ট) রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে রামু উপজেলার সৃ-কোল এলাকার মৃত স্বাধন সিকদারের ছেলে স্বপন সিকদারকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) ভোরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। কিন্তু মৃত্যু’র পর তার বাবা-মা না থাকায় বোনের হাতে লাশ বুঝিয়ে দিতে চাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ভাইয়ের লাশ নিতে অনিহা প্রকাশ করে মৃত স্বপনের বড় বোন বিউটি প্রবাহ সিকদার।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ২ বোনের এক বোন মানসিক ভারসাম্যহীন। সে স্বপনের সঙ্গেই থাকত। একমাত্র ভাই স্বপন সিকদার একটি ওষুধ কোম্পানীতে চাকরি করতেন। বোন বিউটি প্রবাহ সিকদার বিয়ের পর থেকে শ্বশুরবাড়িতে রয়েছেন। একটি সরকারি চাকরিও করেন তিনি। বিয়ের আগে বাবা-মা মারা যাওয়ার পর থেকে বিউটির সবকিছু ছিল স্বপনের কাঁধে। যে বোনের জন্য নিজের সংসার পর্যন্ত করেননি সেই বোন আজ স্বপনের লাশ নিতে অনিহা প্রকাশ করলো।

স্বপনের মানসিক ভারসাম্যহীন বোন হাসপাতালেই রয়েছে। সে কিছু বোঝে না বলে বড় বোন বিউটি প্রবাহ সিকদারের হাতে লাশ বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোনভাবেই লাশ নিতে রাজি নন সে। হাসপাতাল থেকেরেব হওয়ার পর তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে স্থানীয়রা জানান।

এ বিষয়ে বিউটি প্রবাহ সিকদারের স্বামী প্রদীপ কুমার মল্লিক বার্তা ২৪.কমকে বলেন, সকালে আমার স্ত্রী তার ভাইকে দেখতে যায়। কিন্তু কেন লাশ আনতে চাইনি সেটা আমি জানি না। নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে কয়েকজন স্বজন স্বপনের লাশ নিতে আসছে বলে জানান তিনি।

কিন্তু ‘স্বপনের বোনও তো লাশটি নিতে পারতো প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে কোন সঠিক উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা রামু থানার উপপরিদর্শক মো. ইকরাম হোসেন বার্তা ২৪.কমকে জানান, মৃত্যু’র পর ওই যুবকের স্বজনদের কেউই তার লাশ নিতে রাজি হচ্ছে না। এই অবস্থায় হয়তোবা কেউ যদি লাশ না নেয় তাহলে লাশ আনজুমানে দিয়ে দেওয়া হবে। তবে পারিবারিক বিরোধের জের ধরে তার লাশ নিতে চাচ্ছে না কেউ এমনটাই ধারণা করছে পুলিশ।

এদিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল পুলিশ বক্সে’র ইনচার্জ আপন হোসেন মানিক বার্তা ২৪.কমকে জানান, স্বপনের স্বজনরা তার লাশ নিতে অনিহা প্রকাশ করায় লাশটি মর্গে রাখা হয়েছে। তাকে অসুস্থ অবস্থায় নিয়ে আসা দুইজনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর