পাহাড়ি ছড়ার পানি পান করে ত্রিপুরা পাড়ার শিশুরা

চট্টগ্রাম, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 17:35:32

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে অজ্ঞাত রোগের মহামারি আকার ধারণ করা সেই ত্রিপুরা পাড়ার শিশুরা পাহাড়ী ছড়ার পানি পান করে। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দুরে দুর্গম, পাহাড়ে বসবাস করা এই পাড়ার বাসিন্দারা সার্বিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আধুনিকতার ছোঁয়া তো দুরে থাক মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত এখানকার বাসিন্দারা। অতিরিক্ত পুষ্টিহীনতায় ভোগে শিশুরা।

হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের জঙ্গল উদালিয়ার সোনাইছড়ি ত্রিপুরা পাড়া বিশুদ্ধ পানির সংকট নিরসনে নলকূপ বসানো হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ওই পাড়ার জন্য একটি কলকুপ প্রদান করেন। মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) সকাল থেকে এ নলকূপ স্থাপনের কাজ শুরু হয়।

জানা গেছে, ত্রিপুরা পাড়ার ৪০০ জনের ৫৫টি পরিবার রয়েছে। কিন্তু সেখানে সরকারিভাবে মাত্র একটি নলকূপ থাকলেও তা দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। অপর একটি নলকূপ রয়েছে তবে সেটিও পানি উত্তোলণের জন্য যথেষ্ট নয়। ত্রিপুরাবাসীরা কোনভাবে ছড়া থেকে পানি সংগ্রহ করে পান করে থাকে। এছাড়া তাদের নেই কোন স্যানিটেশন ব্যবস্থা। খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত এখানকার শিশুরাও। এখানের বাসিন্দাদের কাছে নেই জনসচেনতার সাধারণ কোন জ্ঞান।

ত্রিপুরা পাড়ার লক্ষ্মিরাণী জানান, এখানে রোগ ব্যাধি হলে ঝাড়ফুঁক করা হয়। এ চিকিৎসা দিয়ে মানুষ ভালো হয়ে যায়। বেশী অসুখ হলে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এখানে রাস্তাঘাট ঠিক নেই । দুরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়।

তিনি জানান, এখানকার অনেক বাসিন্দা উপজেলা সদরের ছাড়াও নিকটতম হাটবাজারও চিনে না। পাহাড়ের গাছের ডালপালা , বাশঁ কেটে বিক্রি করে সংসার চালান তারা।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে চার শিশু মারা গেছে।  ২৪ শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোগটি নির্ণয়ের জন্য নমুনা ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। এঘটনায় এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। রোগ নির্ণয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং এনজিও সংস্থা কাজ করছে।

মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় অনেক ত্রিপুরা স্বেচ্ছায় এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন সোমবার তিনজন ত্রিপুরা ফুসফুসে আক্রান্ত হয়ে এবং তিনজন মেয়ে মহিলাজনিত রোগে স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন বলে জানান স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের প্রধান ডা  ইমতিয়াজ হোসাইন।

ফৌজদারহাট বক্ষব্যাধী হাসপাতালে চিকিৎসারত গুরুতর অসুস্থ হওয়া তিন শিশু এবং গতকাল চমেকে পাঠানো মারা যাওয়া তিন শিশুর মা শ্যাম লক্ষ্মীর অবস্থাও উন্নতির দিকে বলে জানান ইমতিয়াজ হোসাইন।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, এ রোগের জন্য আতংকিত হওয়ার কোন কারণ নেই। বর্ষার এ মৌসুমে একটু অসুখবিসুখ হয়ে থাকে। তবে পাহাড়ী পোকা মাকড়ের বিভিন্ন রোগব্যাধি হয়ে থাকে। ত্রিপুরা পাড়ার শিশুদের জ্বর সর্দি ব্যাথা ও লালছে দাগ, গুটি আছে। তবে এগুলোর জন্য চিকিৎসা চলছে। শিগগির সবাই সুস্থ হয়ে যাবে।

হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তারুন্নেছা শিউলী বলেন,  অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত শিশুদের ওই ত্রিপুরা পাড়াটি দূর্গম এলাকায় হওয়ায় অনেক সময় শত ভাগ স্যানিটেশনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এখন সরকারি ভাবে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ হাতে নেওয়া হচ্ছে। 

স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ত্রিপুরাদের দেখতে যাওয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম চৌধুরী প্রতিবেদককে বলেন উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক তাদের খবরাখবর নিচ্ছে ইতোমধ্যে আমরা মিটিং করে দ্রুত তাদের বিশুদ্ধ পানির জন্য একটি গভীর নলকূপ, বিশটি টয়লেটের জন্য রিং স্লেপ এবং তাদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ত্রিপুরা সংযোগ সড়কের ব্যবস্থা করছি ইতিমধ্যে আজ ঐ পাড়ায় জায়গা নির্ধারণের জন্য প্রতিনিধি কাজ করছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর