রংপুরে ছড়িয়ে পড়ছে ‘পানের গ্রাম’

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 10:22:13

রংপুর: নাম সুরুজ মিয়া, একটা সময় তার জীবন যুদ্ধে লেগেছিল অভাব-অনটন। সংসারে দুঃখ ছিল তার নিত্য সঙ্গী। তখন কষ্ট দূর করতে স্বল্প পুঁজিতে পান চাষে মনোনিবেশ করেন তিনি। ধৈর্য আর পরিশ্রমে বদলে যেতে থাকে তার জীবন। সবুজ পানের ব্যাপক ফলনে তার জীবনে নেমে আসা দরিদ্রতা হয় নিরুদ্দেশ। পানের বরজে ভাগ্যের চাকা ঘুরে হাসি ফুটে তার পরিবারে। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া এই সুরুজ মিয়া রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার দানিশনগর গ্রামের বাসিন্দা।

তার মতো এই গ্রামের অনেকেই এখন সফল পান চাষি। দিন বদলের হাওয়ায় পান চাষে বদলে গেছে এই উপজেলার মানুষের জীবন চিত্র। শুধু সুরুজ মিয়া নয় এখন পীরগঞ্জ উপজেলার দুই হাজারের বেশি কৃষক পান চাষ করে তাদের সংসারে হাসি ফুটিয়েছে। এমন সাফল্যে পান চাষে ঝুঁকে পড়ছে রংপুরের চাষিরা। এতে করে এখন রংপুরে দিন দিন ছড়িয়ে পড়ছে পানের গ্রাম।

বর্তমানে রংপুরের আট উপজেলার মধ্যে পীরগঞ্জে সবচেয়ে বেশি পান চাষ হচ্ছে। এই উপজেলার ১৫ ইউনিয়নের মধ্যে অন্তত আটটিতে সাধারণ চাষিরা অন্যান্য চাষাবাদের সঙ্গে পান চাষ করছে। উৎপাদন খরচ বেশি হলেও বছরের অধিকাংশ সময়ই পানের দাম ভালো পাওয়া যায়। তাই অন্যান্য ফসলের সঙ্গে চাষিরা পান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

পীরগঞ্জ উপজেলার চৈত্রকোল ইউনিয়নের দানিশনগর গ্রামের সুরুজ মিয়া জানান, ২০১৩ সাল থেকে ৫০ শতক জমিতে পান চাষ করেন। সব খরচ বাদ দিয়ে এখন প্রতি বছরে ২ থেকে ৪ লাখ টাকা আয় হচ্ছে তার। সুরুজ মিয়ার পান চাষ দেখে বর্তমানে ওই এলাকার প্রায় ৭০ ভাগ চাষিই পান চাষ করছে।

চৈত্রকোল ইউনিয়নের পীরেরহাট ও দানিশনগর গ্রামের কৃষক আবদুল ওয়াহ আলী, আব্দুর রশিদ, মিজানুর রহমান, মিঠিপুর ইউনিয়নের একবারপুর গ্রামের আলামিন মিয়া, নুরুন্নবী সরকার, পাঁচগাছি ইউনিয়নের আমোদপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম বার্তা২৪ডটকমকে জানান, এ বছর পানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। বর্তমানে এক বিড়া পান ৫০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি করছেন তারা।

চাষিরা জানান, পান গাছ লাগানোর ছয় মাসের পর থেকেই ফলন পাওয়া যায়। আর একবার লাগানো গাছ থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর অনায়াসে সংগ্রহ করা যায় পান পাতা। ধানসহ অন্যান্য ফসলের তুলনায় পান চাষে লাভের পরিমাণ অনেক বেশি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পানের বাম্পার ফলন হয়। আর ফলন ভালো হলে বাজারে দাম ভালো পাওয়া যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, বর্তমানে রংপুরের পীরগঞ্জ, বদরগঞ্জ উপজেলাতে গ্রামে গ্রামে পানের বরজে ছেয়ে গেছে। এছাড়াও জেলার রংপুর সদর, তারাগঞ্জ, মিঠাপুকুর, পীরগাছা, কাউনিয়া ও গঙ্গাচড়া উপজেলার বেশ কিছু ইউনিয়নের চাষিরা পান চাষ করছে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সরওয়ারুল হক জানান, এ বছর রংপুর জেলায় সাড়ে তিনশ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়েছে। সরকারি সহায়তা ও স্বল্পসুদে ঋণ পেলে আগামীতে এ জেলায় পানের চাষ আরও বাড়বে। বর্তমানে রংপুরের পান চাষিরা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় পান সরবরাহ করছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর