রংপুরে বিনোদন স্পট জুড়ে ভিড়

রংপুর, জাতীয়

ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 12:26:45

রংপুর:ঈদ আনন্দে মেতে উঠেছে রংপুর। নগরীর বিনোদন স্পটগুলো এখন শিশু-কিশোরদের দখলে। পিছিয়ে নেই তরুণ-তরুণীসহ অভিভাবকরাও। সব বসয়ী মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে বিনোদন স্পট জুড়ে বইছে নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপনের বার্তা। 

ঈদের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার (২৩ আগস্ট) সকাল থেকেই রংপুর চিড়িয়াখানার সামনে দেখা যায় লম্বা লাইন। সবাই দাঁড়িয়ে টিকিটের অপেক্ষায়। চিত্তবিনোদন পিপাসু মানুষের দীর্ঘ এই লাইনে বার্তা২৪.কম এর সঙ্গে কথা হয় মাসুমা আকতার শাম্মির।

নগরীর শাপলা চত্বর এলাকার বাসিন্দা শাম্মি জানান, একমাত্র মেয়ে আদিলা মল্লিককে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। চিড়িয়াখানার ভেতরের শিশুপার্কে যাবেন। সেখানে মেয়েকে নিয়ে কিছুটা সময় কাটাবেন তিনি।

চিড়িয়াখানার ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসা আরেক দর্শনার্থী সোহেল রশীদের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ঈদকে ঘিরে এখানে পশু-পাখির নতুন কোনো সংযোজন নেই। তবে কর্তৃপক্ষ প্রত্যেকটি পশু-পাখি ও গাছগাছালির পরিচিতি তুলে ধরে যে কাজটি করেছেন তা অনেক সুন্দর ও তথ্যমূলক। সবুজে ঘেরা নিরিবিলি মনোরম পরিবেশ রয়েছে এর ভেতরে।

চিড়িয়াখানার মতো দীর্ঘ লাইন নেই রংপুরের তাজহাট জমিদার বাড়িতে। অনিন্দ্যসুন্দর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এই জমিদার বাড়িটি। এখানকার সিঁড়ি শ্বেতপাথরের, যা ইতালি থেকে আনা হয়েছিল। সিঁড়িটি নিচতলা থেকে দোতলা পর্যন্ত উঠে গেছে। চোখ জুড়ানো শৈল্পিক কারুকার্য রয়েছে জমিদার বাড়িকে ঘিরে। বিশাল আয়তনে ঘেরা সবুজ শ্যামল ফুলে ফুলে ভরা এই জমিদার বাড়িটি এরশাদ সরকারের আমলে সুপ্রিম কোর্ট হিসেবে ব্যবহার করা হলেও বর্তমানে এটি রংপুর জাদুঘর। এখানেও রয়েছে বিনোদন পিপাসু মানুষের ভিড়।


নগরীর নিসবেতগঞ্জ ঘাঘট নদের তীর ঘেঁষে রয়েছে সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত ‘প্রয়াস’ বিনোদন পার্ক। পাখির কিচিরমিচির শব্দের খেলাও কানে বাজবে। ইচ্ছে হলে পানিতে ভেসে বেড়াতে পারেন পালতোলা বা ডিঙি নৌকায়। এই পার্কেও টিকিটের জন্য ভিড় রয়েছে। এর ভেতরে রয়েছে কৃত্রিমভাবে তৈরি গোরিলা, বাঘ, ভাল্লুক, জিরাপ, ঘড়িয়াল, জেব্রা, কুমির, সাপ, বানর, হরিণ, ব্যাঙ, পাখিসহ গ্রামীণ ঐহিত্যের কলস নিয়ে নারী, রূপকথার পরি, শিশুদের ডরিমন।

এই পার্কে কথা হয় রুজিনা জামান রোজের সঙ্গে। বার্তা২৪.কমকে তিনি জানান, সুন্দরবনের আদলে সাজানো ছোট পরিসরে সবুজে ঘেরা গাছগাছির সমারোহ বিমোহিত করার মতো। সমুদ্র সৈকত, বালুর চর ছাড়াও এই বিনোদন কেন্দ্রে শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রয়াস পার্কটি অনেক সুন্দর। নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ ভালো। তবে পার্কের দোকানগুলোতে খাবারের দাম বেশি।

বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্রের কোল ঘেষে রয়েছে চিকলি বিল। আর এই বিলের ধারে গড়ে তোলা হয়েছে চিকলি সিটি বিনোদন পার্ক। সেখানেও বিভিন্ন রাইডে চড়ে লেকের সৌন্দর্য্য উপভোগ করছেন বিনোদন পিপাসুরা। স্পিড বোর্ডে করে বিলের বুকে দুরন্তপনায় মেতে উঠেছে ছোট-বড় সব বসয়ী মানুষ। এখানে আনন্দে মেতে উঠতে কোনো মানা নেই।

রংপুর মহানগর থেকে একটু দূরে ভিন্ন ধরনের বিনোদন স্পট ‘ভিন্নজগত’। এই স্পটের মতো অন্য কোনো বিনোদন স্পটে এতো বেশি ভিড় নেই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে ভিড় লেগেই থাকে। ভিন্নজগতের ভেতরে আরেকটি ভিন্নজগত রয়েছে, এটি সবাইকে কাছে টানে বারবার। যা না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারবেন না। সবুজের সমারোহে ঘেরা এ বিনোদন স্পটটি সব সময়ই মানুষের ভিড়ে মুখরিত থাকে। তবে ঈদ এলে এই মুখরিত কলোরব আরও র্দীঘ হয়। এখানে রয়েছে সৌরজগৎকে জানতে দেশের প্রথম প্ল্যানেটরিয়াম। আজব গুহা ছাড়াও রয়েছে তাজমহল, মস্কোর ঘণ্টা, আইফেল টাওয়ার, চীনের প্রাচীর। চলছে ট্রেন, উড়তে চাইছে উড়োজাহাজ।

এখানে শিশুদের বিনোদনেরও কমতি নেই। দিনভর হইহুল্লোড়, মাতামাতি। ক্লান্তি আসবে না সবুজ প্রকৃতির বুক চিরে বয়ে যাওয়া ছোট ছোট খাল-বিলের পথ ধরে চললে।

এছাড়াও রংপুর মহানগরীর কালেক্টরেট সুরভি উদ্যানে রয়েছে শিশু-কিশোর ও উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের ভিড়। ঈদ আনন্দে মেতে ওঠা চিত্তবিনোদন প্রিয় মানুষের আনাগোনা রয়েছে শতবছরের ইতিহাসের সাক্ষী প্রাচীন বিদ্যাপীঠ কারমাইকেল কলেজে। এই কলেজে দিগন্তজোড়া খোলা মাঠে ঘুরে বেড়ালে মনটা জুড়িয়ে যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরও আগে প্রতিষ্ঠিত কারমাইকেল কলেজে রয়েছে শতবর্ষী বিরল কাইজেলিয়া বৃক্ষটি। এর পাশেই রয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে ঈদকে ঘিরে আড্ডা প্রিয়দের ভিড় রয়েছে।

রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে কয়লা ও লোহার খনি সমৃদ্ধ পীরগঞ্জের বিনোদন স্পট আনন্দ নগরসহ কবি হেয়াত মাহমুদের সমাধি, মনোমুগ্ধকর বিশাল বিল ও সাড়ে তিনশ বছরের একটি প্রাচীন বৃক্ষরাজা, নীলাম্বরের জলমহাল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার বাড়িতেও আনন্দ প্রত্যাশী মানুষের ভিড় রয়েছে।

 

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর