পাঠাও-তে হাজারতম রাইডের পর সাইফুলের যে অভিজ্ঞতা

ঢাকা, জাতীয়

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | 2023-12-12 20:40:46

ঢাকা: সাইফুল ইসলামের পেশা এবং নেশা রাইড শেয়ারিং। উবারের পর পাঠাও এখন তাকে ‘মডেল চালক’ হিসেবে তুলে ধরছে। এরমধ্যে সাইফুল প্রাইভেট কার রাইড শেয়ারিং সেবায় একজন ‘আইকনিক’ ড্রাইভার হিসেবে ঢাকায় পরিচিত পেয়েছেন।

মাত্র চার মাসে পাঠাও অ্যাপে তিনি এক হাজার রাইড দিয়েছেন। সম্প্রতি তার হাজারতম রাইডের সঙ্গে ছিলেন বার্তা২৪.কম এর সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট সাব্বির আহমেদ। কথা বলেছেন রাইড শেয়ারিং সেবার বিভিন্ন দিক নিয়ে।

সাইফুল বলেন, ‘গাড়ির মালিককে টাকা দেওয়া এবং মেইনটেনেন্স খরচ বাদে মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয়ের লক্ষ্য থাকে আমার। কোনো কোনো দিন ৮ থেকে ১০টি ট্রিপ, আবার রাস্তা ফ্রি থাকলে দিনে সর্বোচ্চ আমি ২০ ট্রিপ দিয়েছি।’

দৈনিক কখনো ১২শ, ১৫শ, ২ হাজার, ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা আয় করেছেন সাইফুল। গত ঈদে রাস্তা ফাঁকা থাকায় একদিনে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেছেন তিনি।

 

সাইফুল মনে করেন, ঢাকায় এখন ৫০ থেকে ৬০ হাজার প্রাইভেট কার রাইড শেয়ারিং সেবা দেয়। এরমধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার গাড়ি শুধু উবারের। বাকিটা পাঠাওসহ অন্য কোম্পানির। তবে উবার-পাঠাও ছাড়া অন্যদের পরিচিতি ও ব্যবহারকারী একেবারে কম।

রাইড শেয়ারিং-এ এসে আবার অনেক চালক ফিরে গেছেন আগের রেন্ট এ কার বা কোম্পানির গাড়ি চালাতে। এটা কেন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বোনাস এবং ট্রিপ বোনাস যে আছে এটা অনেক চালক বুঝেন না। ট্রিপ সংখ্যা বা টার্গেট পূরণ করতে পারলে ট্রিপ বোনাস পাওয়া যায়। দেখা যায় গাড়ি না চালিয়েও কিন্তু আমি বোনাস পাচ্ছি। যারা এগুলো বুঝতে পারছে না তারা রাইড শেয়ারিং থেকে বেরিয়ে আবার প্রাইভেট কার চালাচ্ছে।’

যারা রেন্টে-এ কার আগে চালিয়েছেন তারা দিনে ২ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা বা তার বেশিও আয় করেছেন। আর রাইড শেয়ারিংয়ে ৫০ টাকা, ১০০ টাকা ৩০০ টাকা বা ৪০০ থেকে ৫০০ পাচ্ছেন একটা ট্রিপে। এই ছোট ছোট ট্রিপ দিতে অনেকের পছন্দ হয় না- জানালেন পাঠাও চালক সাইফুল।

তার মতো নেশা এবং পেশা হিসেবে যারা এটা নিয়েছেন তারাই ভালো করছেন জানিয়ে সাইফুল বলেন, এখানে যতটুকু প্রয়োজন তার চেয়ে বেশিও আয় করার সুযোগ আছে। স্বাধীনতা পান চালকরা।

ভাড়ার বিভ্রান্তি কেন তৈরি হয় পাঠাও-এ তার জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেকেই একটি গন্তব্যে যেতে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে যায়। অতিরিক্ত ঘুরে যাওয়ার পর পাঠাও অ্যাপসে বিল কিন্তু অতিরিক্ত আসেনা। শুধু সময়ের বিলটা আসে। আবার জিপিএস সমস্যার কারণে অনেকের ভাড়া বেশি আসে।’

এ ধরনের ক্ষেত্রে অ্যাপসের ভেতরে অভিযোগ করা যায়। এখানে যাত্রী যেমন অভিযোগ দিতে পারে, তিনিও একই ভাবে অভিযোগ দিতে পারেন বলে জানালেন সাইফুল ইসলাম।

ঢাকায় যাত্রীরা রাইড শেয়ারিং সার্ভিস পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে গেছেন বলেও যোগ করেন সাইফুল। এক্ষেত্রে তিনি বন্ধুত্বমূলক মানসিকতার মাধ্যমে সেবা দিয়ে থাকেন যাত্রীদের।

সাইফুল বলেন, ‘রাইড শেয়ারিং সার্ভিসগুলো তাদের নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতার কারণে ডিসকাউন্ট দিচ্ছে। যে কারণে ব্যবহারকারীরা সুবিধা পাচ্ছে। আর চালকদের ট্রিপ বোনাস দিচ্ছে। বিভিন্ন ভাবে একেকজন একেক ভাবে ট্রিপ বোনাস পাচ্ছে। যে যেরকম ট্রিপ টার্গেট ফিলাপ করবে সে সেরকম ট্রিপ বোনাস পাবে। আমি পাঠাও থেকে এক সপ্তাহে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৫শ টাকা পর্যন্ত ট্রিপ বোনাস পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘শুরুতে উবারে ছিলাম। গত ৮ মাস ধরে উবার চালাই না। উবার সার্ভিসও ভালো। তাদের পাশাপাশি আছে পাঠাও। এরপর যেগুলো আসছে তারা র্মাকেটে প্রভাব ফেলতে বা পরিচিত হতে পারেনি। তাদের গাড়ি সংখ্যাও সীমিত।’

পাঠাও পে ব্যবহারের সুবিধা জানিয়ে তিনি জানান, পাঠাও অ্যাপের পে একাউন্টে রিচার্জ করে রাখলে যখন রাইড শেষ হয়, তখন অটোমেটিকভাবে এমাউন্টটা পিন নাম্বার দিয়ে পে করা যায়। এমনও যাত্রী আছে ৮০ থেকে ৯০ টাকার ভাড়া আসে, অথচ ১০০০ টাকার নোট দেয়। তখন বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়। পাঠাও পে থাকলে এ সমস্যা একদম হয় না। আবার যেকোনো ড্রাইভারের মোবাইল থেকেও রিচাজ করে নেয়া যায়।

তবে অনেক ব্যবহারকারী অভিযোগ পাওয়া এমনটা যে- ভুল করে পাঠাও অ্যাকাউন্টে পেমেন্টের পরিবর্তে এয়ারটাইম হিসেবে রিচার্জ করার পর পাঠাও সে টাকা ফেরত দেয়নি।

আবার ড্রাইভাররা পাঠাও পে-এর টাকা দেরিতে পেয়ে থাকে। যেমন পাঠাও পে-এর টাকা উত্তোলন করতে গেলে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা লাগে- নিজেও স্বীকার করলেন সাইফুল।

এক হাজার রাইড দিয়েও রেটিংয়ে সেরা অবস্থান ধরে রেখেছেন উবারের সাবেক ফাইভ স্টার চালক এই সাইফুল ইসলাম। তার রেটিং এখন ৯৭ ভাগ। এতো যাত্রী কীভাবে সন্তুষ্ট করলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যখন রিকোয়েস্ট আসে তখন আমি কলব্যাক করে যাত্রীকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করি। যাত্রীও বুঝতে পারে একজন ভালো মানুষের সঙ্গে রাইড হচ্ছে। গাড়িতে উঠার পরে যদি শিশু থাকে তাহলে তাদের আমি চকলেট দেই। একটি বক্সে চকলেট রাখা আছে। এছাড়া যাত্রীদের আমি বোতলজাত ফ্রেশ পানি দেই। অনেকের বমির সমস্যা থাকে। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত পলিথিন রেখেছি। আছে এন্ড্রয়েড ও আইফোনের আলাদা মোবাইলের চার্জার এবং পাওয়ার ব্যাংক।’

তিনি বলেন, ‘গাড়িটি পরিষ্কার রাখি সব সময়। এয়ার ফ্রেশনার দিয়ে রাখি। পেছনে টিস্যু রাখা আছে, যাতে যাত্রীরা তাদের প্রয়োজনে এগুলো ব্যবহার করেন। আর এসব কারণেই যাত্রীরা আমাকে পছন্দ করেন, সেবা পেয়ে সন্তুষ্ট হন।’

ঢাকায় প্রাইভেট কার চালকদের মধ্যে রাইড শেয়ারিং কী কোনো পরিবর্তন এনেছে এমন প্রশ্নে তিনি জানান, আগে চালকরা বিভিন্ন বাসা বাড়ি এবং কোম্পানির গাড়ি চালাতেন। রাইড শেয়ারিং কোম্পানি হচ্ছে স্বাধীন পেশা। একজন মালিকের গাড়ি কন্ট্রাকে নিয়ে আরও স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করতে পারেন চালক।

আগে যে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন পেতেন এখন রাইড শেয়ারিং অ্যাপে সে আয়টা অনেক বেড়েছে। এমনও চালক আছেন যারা মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়মিত আয় করছে। এর মাধ্যমে একটা স্ট্যান্ডার্ড ক্যাটাগরির চালক বের হচ্ছে। চালকদের বেতন বাড়ছে, জীবনযাত্রার মান বাড়ছে- জানালেন পাঠাও আইকনিক ড্রাইভার সাইফুল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর