‘মানুষের বাঁচার আকুতি, রক্তের স্রোত আজও তাড়িয়ে বেড়ায়‘

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 14:55:02

 

ঢাকা: নেত্রী ভাষণ শেষে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’স্লোগান দিয়ে মাইক্রোফোন অন্যের হাতে দিবেন-সেই মুহূর্তে বিকট শব্দ। বুঝে উঠতে পারছিলাম না  কি হচ্ছে। শুধু দেখছি আগুন ও ধোঁয়ার কুণ্ডলী। আমি আচমকা মাটিতে পরে যাই।

অনেক কষ্ট করে উঠে বসলাম।মুহূর্তের মধ্যেই আরেকটি বিস্ফোরণ। সেখানে শুধু লাশ আর লাশ, আর রক্তের স্রোত। আহত নেতাকর্মীদের বাঁচাও বাঁচাও বলে আকুতি। এক সময় আমারও মনে হচ্ছিল আমি মনে হয় বেঁচে নেই। আজও চোখের সামনে ভেসে ওঠে এসব বিভৎসতা।

রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ২০০৪ সালের ২১ আগস্টে আওয়ামী লীগের সমাবেশে সেই লোমহর্ষক গ্রেনেড হামলার বর্ণনা বার্তা২৪.কমকে দিচ্ছিলেন তৎকালিন ঢাকা মহানগর মহিলা লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নাসিমা ফেরদৌসি।

সেই সময়ের বিরোধী দল আ.লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতাকর্মী নিহত হয়। বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির নেতাকর্মী আহত হয়। এই গ্রেনেড হামলার সঙ্গে বিএনপি জামাত সরকারের সম্পৃক্ততা আছেই বলে অভিযোগ আ.লীগের।

হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা দুইটি মামলার বিচার প্রক্রিয়া এখনও চলছে।

১৪ বছর পরেও সেই হামলায় শরীরে হাজার স্পিন্টারের যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন নাসিমা ফেরদৌসি।

অসুস্থ হয়ে দীর্ঘ দিন বিছানায় পড়েছিলাম; পরিবারের সবাই  অনেক কষ্ট করেছে তারা কোন দিনও বিরক্তবোধ করেনি বলেও জানান তিনি।

সেই যন্ত্রণা নিয়ে এখনও নির্ঘুম রাত কাটায় নাছিমা। ‘শরীরে এখনো স্প্লিন্টার আছে। কি যে অসহ্য যন্ত্রণা তা বলে বুঝানো যাবে না। সেই দিনের কথা এখনও মনে হলে মানসিক অস্বস্তিতে বোধ করি। দেখলে মনে হবে ভালো আছি, কিন্তু ভালো নেই। কোথাও বেশিক্ষণ দাঁড়াতে বা বসতে পারিনা; হাঁটতেও অনেক কষ্ট হয়। পা ফুলে যায় অবশ হয়ে আসে।’

ঘটনার দিনটি মনে করে নাছিমা বলেন, সেদিন আমার ডান পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন আইভি আপা। তিনি মাগো বলে চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল তার শরীর। তার এই আর্তনাদ শুনে তাকে গিয়ে যে ধরব সেই শক্তি আমরা ছিল না; নড়তেও পারছিলাম না।কারণ, বিস্ফোরণে আমার পেটে হাত দিয়ে দেখি স্পিন্টার ঢুকে গেছে। তখন পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখি স্প্লিন্টারের আঘাতে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। এক মুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিল পাগুলো বুঝি ছিঁড়ে যাচ্ছে।তাই তড়িঘড়ি পা গুটানোর চেষ্টা করছিলাম যেন ছিঁড়ে না যায়।’

কিছুক্ষণ পর চারদিকে তাকিয়ে দেখি শুধু লাশ আর লাশ, রক্ত আর রক্ত বন্যা। তখনও বুঝতে পারেনি কি হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এক ঝাঁক পাখির ওপরে গুলি করলে যেমন ছটফট করে; তেমনি নেতাকর্মীরা গ্রেনেডে স্প্লিন্টারের আঘাতে ছটফট করতে ছিল। তখন ভয়ে চোখগুলো বন্ধ করে ফেললাম। পরে অজ্ঞান হয়ে যাই।

এরপর জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি লাশের ট্রাকে; লাশের ট্রাকে বসেই চিৎকার করছিলাম।

’লাশের ট্রাকে বসেই নেত্রী কেমন আছে বার দেখার চেষ্টা করতে ছিলাম। কিন্তু তার দেখা পাচ্ছিলাম না ঘটনাস্থলে। উনি বেঁচে আছেন কিনা তাও জানতাম না। সেখানে মানুষের চিৎকার আর ছুটা ছুটি। তখন এক মূহূর্তের জন্য মনে হচ্ছিল আমিও বুঝি লাশ হয়ে গেছি। আমার জীবনে এত লাশ ও রক্ত কখনও দেখিনি। ওই যে একটা ভয় আর আতঙ্ক আজও আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায়- কাতার কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ২১ আগস্টের এই ভুক্তভূগী।

আহত অবস্থায় ঢামেক থেকে তেমন সুচিকিৎসা দুরে থাক আমাকে ঢাকা মেডিকেলের করিডরে ফেলে রাখা হয়। পরে এক সাংবাদিককে আমার ছেলের নম্বরটা দেই। উনি আমার ছেলে সঙ্গে কথা বলেন; যে আমি মৃত্যুশয্যায়। পরে আমার পরিবারের লোকজন হাসপাতালে আসে।’

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচারে দাবি জানিয়ে নাছিমা বলেন, ‘একাত্তরের পরাজিত শক্তি, পচাঁত্তরে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড জড়িত খুনিদের সঙ্গে ২১ আগস্টের হামলাকারীরা একই সূত্রে গাঁথা।তারা শেখা হাসিনাকে মারতে চেয়েছিল।তাদের বিচারও এদেশেই হবেই- আমরা আশাবাদী।

বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা সেদিনের গ্রেনেড হামলায় মারা গেলে আমরা সবাই শেষ হয়ে যেতাম। দলও শেষ হয়ে যেতে। সেজন্য একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও বিএনপি জামায়াতে দোসররা আওয়ামী লীগের দলীয় সমাবেশে এই বর্বর গ্রেনেড হামলা করেছিল বলে মনে করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর