আগুনে ঝলসে গেল অর্ধশত শ্রমিক পরিবারের ঈদ!

খুলনা, জাতীয়

ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 18:54:23

খুলনা: রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল পরিবেশনকারী ‘মেঘনা’ তেল ডিপোতে কর্মরত অন্তত অর্ধশত শ্রমিক পরিবারে ঈদ আনন্দ ঝলসে গেছে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে।

এ ঘটনায় খুলনা মহানগরীর খালিশপুরের ডিপোতেই দুই জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া মারাত্মক দগ্ধ অবস্থায় তিনজনকে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া ৮ জন গুরুতর অবস্থায় কাতরাচ্ছেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। হতাহত শ্রমিক পরিবারের গগনবিদারী আর্তনাদে খুলনার আকাশ-বাতাস ভারী করে তুলছে।

স্পার্কিং (লোহায় লোহায় ঘর্ষণ), অতিরিক্ত গ্যাসের চাপ ও ট্যাংকলরির টায়ার বাস্ট হয়ে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

নিহতরা হলেন- দৌলতপুরের বণিকপাড়ার বাসিন্দা মৃত ইমাম হোসেনের ছেলে কামাল হোসেন শরীফ (৪৫) ও খালিশপুরের কাশিপুর পদ্মাগেটের মো. ফোরকান আলীর ছেলে মো. রাজুর (২৪)।

এদিকে প্রথমে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর অবস্থার অবনতি হলে মারাত্মক দগ্ধ অবস্থায় রুবেল, ইসমাইল ও সুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অগ্নিদগ্ধ হয়েছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন খালিশপুরের আনোয়ার হোসেন (৪০), ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের মোজাম্মেল হক (৪৫), একই এলাকার মৃত ফকির চানের ছেলে আব্দুল ওহাব (৪৫), দৌলতপুরের অদুদ মীরের ছেলে রুবেল মীর (২৬), দৌলতপুরের মো. মতলেবের ছেলে ইসমাঈল (৫৫), খালিশপুরের মো. আনু (২৫), রেলগেট এলাকার মো. সেলিম (২৮), ফুলতলার মোতাহার (৬০)।

নিহত কামাল হোসেন শরীফের স্ত্রী, দুই মেয়ের মা পাখি বেগম বলেন, ‘আজকে কাজ থেকে মজুরির টাকা নিয়ে বাসায় ফেরার কথা। বাসায় বড় মেয়ে ও জামাই আসছে। দু’দিন পর ঈদ! আর তুমি আজকে এভাবে চলে গেলে!’ কথা শেষ না করেই মূর্ছা গেলেন তিনি।

নিহত রাজুর স্ত্রী বৃষ্টি বেগমের কোল জুড়ে আড়াই বছরের ফুটফুটে মেয়ে শিশু ত্বোহা। অবুঝ শিশুটি বুঝতে পারছে না তার বাবা আর বেঁচে নেই।

নিহত রাজুর ছোট ভাই মো সুমন বলেন, ‘আমার ভাই ট্যাংকলরির হেলপার ছিল। আজকে সন্ধ্যায় তার সঙ্গে ঈদের কেনাকাটা করতে যাবার কথা ছিল। আর ঈদের শপিং করা লাগবে না ভাই। তুই এভাবে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলি।’

ট্যাংকলরি অ্যাসোসিয়েশনের নেতা খুলনা সিটি করপোরেশনের ৭নং কাউন্সিলর সুলতান মাহমুদ পিন্টু জানান, ধারণা করা হচ্ছে স্পার্কিং (লোহায় লোহায় ঘর্ষণ), অতিরিক্ত গ্যাসের চাপ ও ট্যাংকলরির টায়ার বাস্ট হয়ে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ডিপোর মধ্যে আগুন লাগার কোনো কারণ থাকতে পারে না। এতে হতাহত পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি সরকারেরও বিপুল অর্থের ক্ষতি হয়েছে।

খুলনাস্থ মেঘনা ডিপো ম্যানেজার জিয়াউল ইসলাম জিয়া জানান, এ ঘটনায় ঢাকা থেকে তদন্ত কমিটি আসছেন। এ জন্য এখনই কিছু বলা সম্ভব নয়।

ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা বলছেন, এ ঘটনায় কয়েক লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ট্যাংকলরি অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. এনাম মুন্সী জানান, মেঘনা ডিপোর সংরক্ষিত এলাকার মধ্যে তখন বিপুল সংখ্য শ্রমিক কাজ করছিল। মুহূর্তেই আগুনের ভয়াবহ লেলিহান শিখা পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। গুরুতর দগ্ধের বাইরে অন্তত অর্ধশত শ্রমিক আহত হয়েছেন।

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে খুলনা সদর দপ্তর, খালিশপুর ও দৌলতপুর ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ও কয়েকটি মোটরসাইকেল টিম ও স্থানীয়রা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তার আগেই আগুনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর