খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়িতে গত ৮ মাসে ৯ কিশোরী ও শিশু ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। গত ২৮ জুলাই খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া এক শিশুকে ধর্ষণের পর নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। সবশেষ ৭ আগস্ট মাটিরাঙার গোমতিতে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে ধর্ষিতার পরিবার আইনের সহায়তা চাইতে পারেনি।
বেসরকারি একটি সংস্থার হিসেব মতে, ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি নতুন বই দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে খাগড়াছড়ি সদরের উত্তর গঞ্জপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির এক শিশুকে ধর্ষণ করে শিক্ষক। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন মাটিরাঙায় এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়। ২৯ মে মহালছড়িতে তিন কিশোরী এবং ২১ জুন খাগড়াছড়ি সদরের জেলা পরিষদ পার্ক বিনোদন কেন্দ্রে ঘুরতে এসে ধর্ষণের শিকার হয় দশম শ্রেণির এক ছাত্রী। ২৮ জুলাই দীঘিনালার নয়মাইলে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী পুনাতি ত্রিপুরাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ২ আগস্ট দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়ায় ৭ম শ্রেণির ছাত্রী এবং ৭ আগস্ট মাটিরাঙায় এক গৃহবধূ ধর্ষণের শিকার হন।
পাহাড়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় ধর্ষণের মতো ঘটনা বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
দীঘিনালার মেরুং ইউপির মেম্বার গণেশ ত্রিপুরা জানান, পুনাতি ত্রিপুরা হত্যাকাণ্ডের ১৩ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। তদন্তের দীর্ঘসূত্রতায় প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারে।
নারী মুক্তি কেন্দ্রের জেলা সংগঠক কৃষ্টি চাকমা জানান, নারীরা ঘরে বাইরে অনিরাপদ। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন দিন দিন বাড়ছে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের জেলা সংগঠক নাজির আহমেদ জানান, পাহাড়ে সাম্প্রদায়িকতার মাপকাঠিতে অনেক সময় অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। অপরাধীদের সাম্প্রদায়িকতার মাপকাঠিতে বিচার না করার দাবি জানান তিনি।
খাগড়াপুর মহিলা সমিতির নির্বাহী পরিচালক শেফালিকা ত্রিপুরা জানান, সামাজিক অবক্ষয় ও বিচার না হওয়ার কারণে ধর্ষণের মতো ঘটনা বাড়ছে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির প্রতিষ্ঠা করলে ধর্ষণের মতো সামাজিক ব্যাধি অনেকাংশ কমে যেত।
খাগড়াছড়ির পুলিশ আলী আহমদ খান জানান, অপরাধী যেই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ তৎপর। ৯ শিশু ও কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় ৫টি মামলা হয়েছে। প্রতিটি মামলায় আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।