পালদের মাটির কাজ অন্যদের উপার্জনের পথ দেখাচ্ছে

খুলনা, জাতীয়

কান্ট্রি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 09:39:00

মেহেরপুর: মেহেরপুরে মাটির রিং তৈরির কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য গর্ত বা কুয়া নির্মাণে মেহেরপুর জেলা ছাড়াও আশপাশের জেলায় ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। এই চাহিদা মেটাতে জেলার আমতৈল গ্রামে গড়ে উঠেছে অন্তত ৩৫টি রিং তৈরির কারখানা। ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এসব কারখানা এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

গাংনী উপজেলার আমতৈল গ্রামে একসময় কয়েকটি কুমার পরিবারের লোকজন তৈরি করতেন মাটির তৈজসপত্র। কিন্তু এর চাহিদা কমে যাওয়ায় ১৫ বছর আগে থেকে তারা রিং তৈরির দিকে ঝুঁকে পড়েন। মঙ্গল পাল ও তার তিন ভাই এবং জগা পাল ও তার ছেলে স্বল্প পরিসরে রিং তৈরি শুরু করলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামজুড়ে।

গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করলে দেখা যাবে রাস্তার দু’ধারে শুধু রিং তৈরির কারখানা। পাল পরিবার রিং তৈরি শুরু করলেও এখন তা তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। গ্রামের মুসলমান পরিবারের অনেকেই পাল পরিবারের কাছ থেকে রিং তৈরি শিখেছেন। নতুন পুরাতন কারিগররা এখন আলাদাভাবে কারখানা গড়ে তুলেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপযুক্ত মাটি সংগ্রহের পর তা পানি দিয়ে শক্ত আটার মতো কাদা তৈরি করা হয়। ওই কাদা নির্দিষ্ট ডাইস দিয়ে রিং তৈরি করে শুকাতে দেয়া হয়। ভালোভাবে শুকিয়ে গেলেই তা পোড়ানো হয়। ইট পোড়ানো ভাটা সদৃশ গোলাঘরে রিং সাজিয়ে নিচ থেকে আগুনের জ্বাল দেয়া হয়। নির্দিষ্ট জ্বাল দেয়ার পরে রিং পুড়ে ইটের রঙ ধারণ করলেই তা বিক্রির উপযুক্ত হয়। আগে শুষ্ক মৌসুমে রিং উৎপাদন করা হলেও এখন সারা বছরই তৈরি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে পলিথিন দিয়ে ঢেকে বিশেষ কায়দায় উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। প্রতি বছর এসব কারখানা থেকে ৬ থেকে ৭ লাখ রিং তৈরি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার কয়েকটি জায়গায় ব্যক্তি উদ্যোগে স্বল্প পরিসয়ে রিং তৈরি হয়। তবে আমতৈল গ্রামের মানুষের আয়ের প্রধান উৎস এখন রিং তৈরি ও বিক্রি। কারখানায় রিং তৈরির পর তা স্থানীয় অনেক ব্যবসায়ী কিনে নেয়। এছাড়াও মানিকদিয়া ও আমতৈল গ্রামে প্রায় শতাধিক গ্রুপ রয়েছে যারা গর্ত খুঁড়ে রিং বসানোর কাজ করেন। বাসাবাড়ি কিংবা অফিসের পয়ঃনিষ্কাশনের গর্তে ব্যবহার করার জন্য এখন ব্যাপকভাবে মাটির তৈরি রিং নির্মাণ করা হচ্ছে।

আমতৈল গ্রামের রিং কারিগর ইনামুল হোসেন বলেন,‘পাল পরিবারের কাছ থেকে কাজ শিখেছি। এখন আমি নিজেই তৈরি করি। আমার কারখানায় ৬ জন শ্রমিক কাজ করেন। রিং তৈরির কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এসেছে।’

পয়ঃনিষ্কাশনের গর্ত তৈরির কারিগর আমতৈল গ্রামের আদম আলী বলেন, ‘আমরা তিনজন মিলে বাসা বাড়ির গর্ত নির্মাণের কাজ করি। কোদাল দিয়ে গর্ত খুঁড়ে তাতে রিং বসিয়ে দিলে তা একশ বছর টিকবে।’

তিনি জানান, কংক্রিটের তৈরি রিংয়ের দাম মাটির তৈরি রিংয়ের চেয়ে অনেক বেশি। তাই নতুন বাড়িঘর তৈরি হলেও মালিকরা মাটির তৈরি রিং দিয়েই পয়ঃনিষ্কাশনের গর্ত বা হাউজ নির্মাণের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

গাংনী ভিটাপাড়ার জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমি মাটির রিং দিয়ে পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য দুটি কুয়া (গর্ত) তৈরি করেছি। ১০ ফুট গভীর ওই কুয়া তৈরি করতে খরচ হয়েছে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। ইট, সিমেন্ট-বালু দিয়ে তৈরির চেয়ে কয়েকগুণ খরচ কম হয়েছে।’

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমতৈল গ্রাম থেকে প্রতিদিনই রিং যাচ্ছে মেহেরপুরের আশপাশের জেলায়। জেলার চাহিদা মিটিয়ে কারখানা মালিকরা এখন বাইরের জেলায় ব্যবসা সম্প্রসারিত করছেন। কারখানা ঘিরে শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও গর্ত তৈরির সঙ্গে এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ জড়িয়ে পড়েছে। রিং এর ব্যাপক চাহিদা থাকায় এ ব্যবসা বেছে নিয়েছে এসব মানুষ।

শীত মৌসুমে ২৪ সাইজের প্রতিটি রিং পাইকারি ৩০ টাকা, ২৮ সাইজের দাম ৪০ টাকা এবং ৩২ সাইজের দাম ৬০ টাকা। এখন বৃষ্টির কারণে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে কিছুটা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কারখানা মালিকদের আর্থিক সমস্যার কারণে ধারদেনা ও ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে উৎপাদন চলছে। এসব কারখানার দিকে যদি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো জোর দেয় তাহলে আরও বড় পরিসরে সেগুলোকে মেলে ধরতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেন এর মালিকরা।

 

 

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর