সামাজিক দূরত্বকে গুরুত্ব না দিয়ে শ্রমিকদের ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকাণ্ড

ঢাকা, জাতীয়

মাহিদুল মাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা) | 2023-08-26 00:39:13

করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে ইতিমধ্যেই অবগত আছে বিশ্ববাসী। সামাজিক দূরত্ব ও ব্যক্তি সচেতনতাই একমাত্র এই ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে সারাদেশেই চলছে অঘোষিত লকডাউন। উপজেলা প্রশাসনও নিয়েছে কঠোর পদক্ষেপ। কিন্তু কে মানে কার কথা!

সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে যেখানে সারাদেশের প্রায় সবকিছুই বন্ধ রাখা হয়েছে, সেখানে শ্রমিকরা দূরত্বের তোয়াক্কা না করেই হুমড়ি খেয়ে টাকা উঠাতে ভিড় জমিয়েছে এটিএম বুথগুলোতে।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা যে কতটা প্রশস্ত তা আক্রান্ত উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালেই বুঝা যায়। যে কারণে দেশের সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণ-পরিবহন, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিল্পকারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে তা আসলে কতটুকু পূর্ণতা পেয়েছে তা বুঝতে হলে তাকাতে হবে সাভারের বিভিন্ন এলাকার এটিএম বুথে।

মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথগুলো ঘুরে দেখা যায়, টাকা তোলার জন্য শ্রমিকরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গা ঘেঁষে লাইন দিয়ে দাড়িয়ে আছেন। লম্বা লাইন দিয়ে তারা দাঁড়িয়েছেন ঠিকই কিন্তু মাঝে নেই কোনো দূরত্ব। যেই সামাজিক দূরত্বকে গুরুত্ব দিয়ে সকল শ্রমিকের বেতন ব্যাংক একাউন্টে দেওয়া হয়েছে, আর সেই দূরত্ব বজায় না রেখেই তারা বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করছেন।

দূরত্বকে গুরুত্ব না দিয়ে শ্রমিকদের ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকাণ্ড
সামাজিক দূরত্ব নেই কারো মাঝে

আশুলিয়ার বাড়ইপাড়া এলাকার ঢাকা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করে বের হয়েছেন মাহমুদা। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, চারপাশে করোনাভাইরাসের জন্য লকডাউন শুরু হয়েছে। এটিএম বুথের টাকা ফুরিয়ে গেলে ঝামেলায় পড়তে হবে। এমনি বাজারঘাট বন্ধ তাতে আবার টাকা না থাকলে তো খাবার কিনতে পারবো না। টাকা থাকলে কোনো না কোনো সময় দোকান থেকে কিছু কিনে খেতে পারবো। না থাকলে সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে।

অপর শ্রমিক আলপনা বলেন, আমরা ঘর থেকে বাহিরে বের হচ্ছি না। কিন্তু টাকার প্রয়োজনে আজ বের হতে বাধ্য হলাম। টাকা খুব দরকার ছিলো। আর সারাদিনই বুথে ভিড় থাকবে। ভিড় কমে যাওয়ার আশায় থাকলে আর টাকা তোলা হবে না। আগে এরকম সকালে টাকা উত্তোলন করতে এসে বিকেলে টাকা উঠাইছি। আজ এই ভুল করি নাই।

গ্রামে না যাওয়া শ্রমিক লিয়ন বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে গ্রামে পর্যন্ত যাইনি। কিন্তু আশেপাশের সব শ্রমিক সারাদেশ ভ্রমণ করে এসেছে। ঢাকায় থাকায় সারাদেশ ভ্রমণ করা শ্রমিকদের সাথে থাকা লাগছে। আমরা অনেকেই একই গোসলখানা ব্যবহার করছি। যারা ঢাকায় ছিলাম এখন দেখি তারাই বেশ ঝুঁকিতে আছি।

তিনি আরো বলেন, বাজারে, দোকানে এটিএম বুথে সব জায়গায় ভ্রমণ করা শ্রমিকেরাই আগে থাকছে। আসলে আমরা কোথায় যাবো কি করবো বুঝতে পারছি না। আমি সকালে এটিএম বুথে আমার বেতনের টাকা তুলতে এসেছি। এখনো দাঁড়িয়ে আছি। দেখছি উপচে পরা ভিড়। আজ মনে হয় আমার টাকা উত্তোলন করা হবে না।

এব্যাপারে গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু বলেন, শ্রমিকদের বেতন পরিশোধে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। তাদের নিজ একাউন্টে বেতন পরিশোধ করেছে। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি ব্যাংক কর্মকর্তারা। দেশে শুধু ব্যাংক সীমিত আকারে খোলা আছে। সেদিকে অবশ্যই তাদের তিন ফুট দূরত্বে চিহ্ন আঁকা উচিত ছিলো। তার পরেও শ্রমিকদের উদ্দেশ্য বলবো তারা যেন নিরাপদ দূরত্বে থেকে এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর