ঘরে খাবার নেই, বাড়ি ভাড়ার বাড়তি চাপে ভাড়াটিয়া

ঢাকা, জাতীয়

মাহিদুল মাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা) | 2023-09-01 18:55:30

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ভয়ংকর থাবায় গোটা পৃথিবীর মতো দেশও যখন থমকে গেছে, তখন বাড়ি ভাড়ার চাপে দিশেহারা সাভারের দিনমজুরসহ লাখো ভাড়াটিয়া। দৃষ্টিগোচরে আসতে সাভারে দুই একজন ভাড়া মওকুফ করে দিলেও ঋণ করে বাড়ি করার দোহাই দিয়ে ভাড়ার টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন বাড়িওয়ালারা। এই এলাকা শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এখানে ভাড়া থেকে কাজ করে লাখ লাখ শ্রমিক। কেউ করে বিভিন্ন ব্যবসা। অঘোষিত লকডাউনের প্রভাবে যখন দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট তখন ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা দোকান ও বাসা ভাড়ার চাপে ভুলে গেছেন প্রাণঘাতী করোনার কথা। বাধ্য হয়ে অনেকেই রাস্তায় নেমেছেন রিকশা নিয়ে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে দেশ ও জনগণকে বাঁচাতে অনেক আগেই সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিল্পকারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না সচেতন ব্যক্তিরা। কর্মহীন হয়ে পড়েছে দিন ভিত্তিক চুক্তিতে কাজ করা শ্রমিকসহ পরিবহন, হোটেল-রেঁস্তোরা, ফুটপাত দোকানিসহ ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা। তারা ঠিকঠাক যোগাতে পারছেন না দুই বেলা দু মুঠো খাবার। তাদের কর্ম না থাকায় বন্ধ হয়েছে আয়ের পথ। আর এমন সময় বাড়ি ভাড়ার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছেন বাড়িওয়ালারা।

মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন ভাড়াটিয়া শ্রমজীবী মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা মানসিকভাবে অনেক চাপে রয়েছেন। করোনাভাইরাসের কারণে দেশব্যাপী চলছে অঘোষিত লকডাউন। ফলে দিনমজুরদের ঘরের খাদ্য ফুরিয়ে গেছে। এতেই তারা আছেন চরম বিপদে। এমনিতেই তারা দরজার দিকে তাকিয়ে আছেন ত্রাণের জন্য। এর মাঝে বাড়ি ভাড়া যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা।

গেটের সামনে কোন একজনের পথ চেয়ে বসে আছে রিজু নামের এক ব্যক্তি। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমি বাড়ির গেটের সামনে বসে আছি খাবারের আশায়। বাসায় খাবার নেই। ছোট ছোট দুইটি সন্তান আছে। তাদের কিছু কিনে দিতেও পারছি না। আমি হোটেলে খাদ্য সরবরাহের কাজ করতাম। কিন্তু হোটেল বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ১ মাস হলো। কোন ইনকাম নাই, এমনি ঘরে খাবার নেই তার মধ্যে বাড়ি ভাড়া চাইতে এসেছিলো বাড়িওয়ালা। কিন্তু আমার এমন অবস্থা দেখে বাড়ির মালিক ফিরে গেলেন, আর বললেন টাকা সংগ্রহ করে যেন তাকে নিজে গিয়ে দিয়ে আসি। তিনি আর টাকা চাইতে আসতে পারবেন না।

তাজরীন ফ্যাশন দুর্ঘটনায় আহত পারভিন বলেন, আমরা এখন কেউ কোনো জায়গায় কাজ করতে পারি না। কাজ চাইতে গেলে তাজরীনের শ্রমিক বলে কেউ কাজে নেয় না। তারা বলে আমরা নাকি কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি। কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে তিন সন্তান নিয়ে চলছি। প্রতি মাসেই বাসা বাড়া দিতে ঝামেলা হয়। সময় মতো দিতে পারি না। এবার তো দিতেই পারবো না। বাড়িওয়ালা বাসা ছেড়ে দিতে বলেছে। আর যদি এই বাসায় থাকি তাহলে প্রতি মাসের ৮ তারিখের মধ্যে ভাড়া দিতে হবে। সব মিলে মানসিক চাপের মহাসাগরে আছি, একবার মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেছি। করোনায় নয় মনে হয় মানসিক চাপেই মরে যাবো এবার।

সাভারের হোটেল ব্যবসায়ী মিস্টার বলেন, হোটেলের ভাড়া প্রতিমাসে ৩০ হাজার টাকা। মার্চ মাসে সমস্যা থাকার কারণে হোটেল ভাড়া দেইনি। এখন দুই মাসে ৬০ হাজার টাকা হয়ে গেলে, আর হোটেল বন্ধ আছে প্রায় ১ মাস ধরে। মনে হয় আমি আর ব্যবসা করতে পারবো না। কারণ ভাড়া দিতেই আমার সব মুলধন চলে যাবে। আমি যে এখন কি করবো কার কাছে যাবো কিছুই বুঝতে পারছি না। যদি এর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হয় তাহলে গলায় রশি দিয়ে মরা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাড়িওয়ালা বলেন, আমরা ঋণ করে বাড়ি করেছি। আজ পর্যন্ত সব টাকা কিস্তি দিতেই যাচ্ছে। একটি টাকা দিয়েও বাজার করে খেতে পারি নাই। আর ব্যাংক তো আমাদের ছাড় দেবে না, এ টাকা তারা নেবেই। সুতরাং বাড়ি ভাড়া ছাড় দেওয়া সম্ভব নয়। ব্যাংক যদি কিস্তি মওকুফ করে দিতো আমরাও বাড়ি ভাড়া মওকুফ করতাম। আর শ্রমিকরা কোথায় টাকা পাবে এটা চিন্তা করে লাভ নেই। তারা এতদিন চাকরি করে কি করেছে, কোনো টাকা জমায়নি কেন। বিপদের জন্য মানুষ ঠিকই টাকা জমায়। এখন সবার বিপদের সময় টাকা তো দিতেই হবে তাই না।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া ভাড়াটিয়া পরিষদের সভাপতি সারোয়ার হোসেন বলেন, প্রথমেই সাভার ও আশুলিয়ার সেই বাড়িওয়ালাদের কৃতজ্ঞতা জানাই যারা নিজ উদ্যোগে ভাড়া মওকুফ করে দিয়েছেন। আর যারা বাড়ি ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন আমি তাদের উদ্দেশ্য বলবো, 'আপনারা মানবিক হোন' এই দুর্যোগে আপনারাও যোদ্ধা হিসেবে যোগদান করেন। সব কিছু সরকারের আশায় থাকলে হবে না। নিজেদেরও এগিয়ে আসতে হবে। আপনাদের ব্যাংক ঋণ নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত পরিশোধ করতে হবে। বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল কোনো বিল আপনাদের দিতে হবে না এ মাসে। সরকার এতো ছাড় দিচ্ছে আপনারা ১ মাসের বাড়ি ভাড়া ছেড়ে দিতে পারেন না। তাই আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ শ্রমিকদের প্রতি একটু মানবিক হোন। তাদের পাশে দাঁড়ান। আপনারাও করোনা যুদ্ধে যার যার অবস্থান থেকে যোগ দেন। তাহলেই হয়তো আমরা এবারের মত জয়ী হতে পারবো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর