বিপন্ন মদনটাকের দেখা মিলছে পঞ্চগড়ে

রংপুর, জাতীয়

কান্ট্রি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 21:25:41

পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার একটি গ্রামের নাম হারাগঞ্জ। সুন্দরবনের পরে একমাত্র হারাগঞ্জেই বিচরণ করছে মহাবিপন্ন পাখি মদনটাক। বাংলাদেশের আর কোনো গ্রামে এই পাখির দেখা মিলছে না। তবে যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে এখানেও অসাধারণ সুন্দর এই পাখিটি এখন বিলুপ্তির পথে।

বন্যপ্রাণী অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০১২ সালে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে মদনটাকের প্রজনন করা হয়েছিল। এরপর সেখান থেকেও এক সময় পাখিটি হারিয়ে যায়। সর্বশেষ পঞ্চগড়ের বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবা ২০১৫ সালে হারাগঞ্জে মদনটাকের সন্ধান পান। দুই মাস পর্যবেক্ষণ করে তিনি আট থেকে দশটি মদনটাকের দেখা পান।

এরপর ওই এলাকায় তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে মদনটাক পাখিগুলোকে রক্ষার জন্য গ্রামবাসীদের মধ্যে সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করেন। এলাকাবাসীদের সঙ্গে নিয়ে শিমুল গাছের চারা রোপন করেন। এসব কার্যক্রম পরিচালনা করার ফলে এলাকাবাসীর মধ্যে মদনটাক পাখির ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি হয়।

ফলে এলাকাবাসী আর কাউকে মদনটাক শিকার করতে দেয় না। সবার প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালে যেখানে মাত্র ৮ থেকে ১০টি পাখি দেখা যেত তার সংখ্যা এখন বেড়ে গেছে। এ এলাকায় বর্তমানে ১৫ থেকে ২০টি মদনটাক বিচরণ করছে।

মদনটাক একমাত্র শিমুল গাছেই প্রজনন করে। স্থানীয়রা জানায়, প্রায় বিশ-পঁচিশ বছর ধরে এই এলাকায় মদনটাক বিচরণ করে আসছে । তবে গত এক দশক আগেও প্রায় শতাধিক মদনটাক দেখা যেত। কিন্তু শিকারিদের অত্যাচার আর বসবাসের জন্য নিরাপদ বড় শিমুল গাছ কমতে থাকায় মদনটাকের সংখ্যাও দিন দিন কমতে থাকে। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে সবচেয়ে উঁচু শিমুল গাছটিও কেটে ফেলা হয়। বর্তমানে ২টি ছোট ছোট শিমুল গাছই মদনটাকের একমাত্র প্রজনন স্থান।

হারাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন,‘মদনটাককে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় হাটগোলা। এই পাখিটির গুরুত্ব আমরা বুঝতাম না। ফিরোজ আল সাবা এসে সেমিনার করার পর স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হয়। এখন আর কেউ পাখিটিকে মারে না। তবে পাখিটিকে সংরক্ষণের জন্য সরকারের এগিয়ে আসা দরকার।

এদিকে বড় মদনটাক বা হাড়গিলা বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। মদনটাকও বিলুপ্তের পথে। চাষি বান্ধব পাখি মদনটাক। ক্ষেত খামারের ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে চাষিদের ব্যাপক উপকার করে এই পাখি। তাই স্থানীয়দের আশা এই এলাকায় মদনটাক সংরক্ষণে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবা বলেন, ‘২০১৫ সালে পাখিটিকে আবিষ্কারের পর এটি সংরক্ষণে ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু এটি যথেষ্ট নয়। এরপর সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে গিয়ে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া। তা না হলে এই কয়েকটি পাখিও আমরা হারিয়ে ফেলব।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর