খানাখন্দে ভরা রসিকের সড়ক, ক্ষুব্ধ নগরবাসী

জেলা, জাতীয়

কান্ট্রি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 22:55:42

রংপুর: শিডিউলের নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ হয়নি রংপুর মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর। এতে প্রতিদিনই ছোট ছোট দুর্ঘটনা ঘটছে। খানাখন্দে ভরা বেশির ভাগ সড়কের বেহাল দশায় বেড়েছে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ। প্রায় ২০৫ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত রংপুর সিটির অর্ধেকেরও বেশি সড়ক এখনও কাঁচা রয়েছে। পাকা সড়কগুলোর কোথাও কোথাও নিম্নমানের কাজ হওয়ায় সেখানে ফের সংস্কার প্রয়োজন।

যোগাযোগ ব্যবস্থায় রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) কোনো পরিকল্পনা না থাকায় এই দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ সচেতন মহলের। তবে সিটি মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর গাফিলতির কারণেই কিছু এলাকায় সড়ক ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ ব্যাহত হওয়ায় এ দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।

রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকার ১ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে এখনও কাঁচা রয়েছে ৭২১ কিলোমিটার। বাকি ৭০৬ কিলোমিটার সড়ক পাকা হলেও ঝুঁকিমুক্ত নয়। বিশেষ করে সিটির নতুন এলাকাগুলোতে এখনো পৌঁছায়নি উন্নত সড়কের সংযোগ। আধা কাঁচা সড়কই বেশি রয়েছে সিটির বর্ধিত এলাকাজুড়ে। আর নগরীর প্রাণকেন্দ্রের সড়কগুলোর অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। বেশির ভাগ সড়কই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে রংপুর মহানগরীর ব্যস্ততম সড়ক স্টেশন রোডে দাঁড়ালেই চোখে পড়বে বেহাল দশার চিত্র। এই রোডে প্রতিদিন প্রায় লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত। রংপুর রেলওয়ে স্টেশন, র‌্যাব-১৩ আঞ্চলিক কার্যালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যালয়, তাজহাট ও মাহিগঞ্জ যাতায়াতে এ সড়কটি ব্যবহার করা হয়।

১২ কোটি টাকার টেন্ডারে তিন কিলোমিটার এই সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে। কাজ পেয়েছিল রাকা এন্টারপ্রাইজ নামে রাজশাহীর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সড়কটির বেশ কিছু স্থানে পাথর তুলে খোয়া দিয়ে মেরামতসহ নামে মাত্র কাজ করে প্রায় ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সটকে পড়ে ওই প্রতিষ্ঠানটি। এতে করে ওই বছরই বর্ষা মৌসুমে সড়কটির বেহাল দশা সৃষ্টি হয়।

এখন এই সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে পানি জমে গিয়ে সড়কে চলাচল দুষ্কর হয়ে পড়ে। এছাড়া গোটা সড়কই ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় প্রতিদিনই ঘটছে ছোট ছোট দুর্ঘটনা। সেই সঙ্গে রোগীদের যাতায়াত, পণ্য পরিবহনে বেড়েছে ভোগান্তি। অটোচালক থেকে শুরু করে রিকশা চালক পর্যন্ত সবাই সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করে বেশি ভাড়ায় ভাঙাচোরা এই সড়কে চলাচল করছে। এই ভাঙা সড়কের খানাখন্দে পড়ে অটোরিকশা, রিকশা, গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহন প্রতিদিন বিকল হচ্ছে।

একই অবস্থা নগরীর শাপলা চত্বর থেকে তাজহাট, কামারপাড়া থেকে টার্মিনাল রোড, জাহাজ কোম্পানি মোড় থেকে পিটিসি মোড় যাওয়ার সড়কটিতেও। এছাড়াও নগরীর বাবুখাঁ, গণেশপুর, মুলাটোল, বেতপট্টি দেওয়ানবাড়ি রোড, গুপ্তপাড়া, সেনপাড়া রোড, সুপার মার্কেট রোড, মাহিগঞ্জ আমতলা রোড, দর্শনা মোড় থেকে রাণীপুকুর রোড, দক্ষিণ কামারপাড়া থেকে মন্দিরের মোড়, বাবুখাঁ নজরুল পাঠাগার মোড়, ঠিকাদারপাড়া বিকনের মোড়, হাবিবনগর কলেজ রোড, শালবন থেকে হারাগাছ সড়ক, বেগম রোকেয়া কলেজ সড়কসহ নগরীর অধিকাংশ সড়কের সংস্কার না হওয়ায় দুর্ভোগ পিছু ছাড়ে না নগরবাসীর।

প্রতিদিন অটোরিকশায় যাতায়াত করেন মোখলেছুর রহমান, শহীদুল ইসলাম ও মিরা হুসাইন। তারা বলেন, ‘রংপুর মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর বেহাল দশা দেখে মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে সিটি করপোরেশনের প্রতি। বেশ কয়েকটি সড়ক বছরের পর বছর ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। আমরা সিটি করপোরেশনে ট্যাক্স দিয়ে থাকি, এ সড়কগুলো কী তাদের নজরে আসে না। ভাঙাচোরা সড়কে চলাচল করে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। জরুরি কোনো কাজে সময় মতো পৌঁছানো সম্ভব হয় না। কোনো সংকটাপন্ন রোগী থাকলে অনেক দূর ঘুরে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।’

অন্যদিকে রিকশা চালক বাবুল মিয়া জানান, রংপুর শহরের অনেক রাস্তাই ভাঙা। রিকশা চালাতে অনেক কষ্ট হয়। প্রতিদিনই রিকশা মেরামত করতে হয়। যাত্রীরা তো ভাড়া বেশি দেয় না। রোদ বৃষ্টি ঝড়ের মধ্যেই এসব ভঙ্গুর সড়ক দিয়েই প্রতিদিন চলাচল করতে হচ্ছে।



এ ব্যাপারে স্টেশন রোড এলাকার বাসিন্দা ও সাবেক কাউন্সিলর আকরাম হোসেন বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির কাজ শেষ না করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কীভাবে ৫ কোটি টাকার বিল উত্তোলন করে নিয়ে গেল তা আমার বোধগম্য নয়। দ্রুত সিটি করপোরেশনকে উদ্যোগ নিয়ে সড়কটির সংস্কার করার দাবি জানাচ্ছি।’

এদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী এমদাদ হোসেন জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যে সিকিউরিটি আছে তা থেকে জরিমানা করা হবে এবং আইনের বিধান অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘শাপলা চত্বর থেকে তাজহাট পর্যন্ত, জাহাজ কোম্পানি মোড় থেকে পিটিসি মোড় পর্যন্ত সড়কটির কাজ শিডিউল সময়ে শেষ হয়নি। এছাড়া যারা ঠিকাদার তারা একজন কাজ নিয়ে আরেকজন ঠিকাদারকে দিয়েছে। যারা কাজ নিয়েছে তাদের তেমন আর্থিক সামর্থ্য নেই। তাই বিভিন্ন সময়ে নেয়া কাজগুলো এভাবে পেন্ডিং অবস্থায় পড়ে আছে। ঠিকাদারদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেও তাদের কাজে ফিরিয়ে আনতে পারিনি। যেহেতু অর্থবছর শেষ, আমরা তাদের কাজের ফিডব্যাক না পেলে দ্রুতই তা বাতিল করা হবে। নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করব এবং অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করব।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর