মাত্র ৫০০ গজ দূরত্বের পথ। কিন্তু এই পথ যেতেই পুলিশের সময় লেগেছে সাড়ে ৭ ঘণ্টা! এই সময়ের মধ্যে ভুক্তভোগী ব্যক্তির জমি জবর দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। পুলিশের এমন দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) একেএম হাফিজ আক্তারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার মৃত. মোজাফফর হোসেনের ছেলে মোকছেদ আলী।
অভিযোগ পেয়ে দ্রুত এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তা অবহিত করতে নওগাঁর পুলিশ সুপারকে (এসপি) নির্দেশ দিয়েছেন ডিআইজি হাফিজ আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমি সঙ্গে সঙ্গে নওগাঁর এসপিকে ফোন করে দ্রুত এ ঘটনায় গাফিলতির বিষয়টি খতিয়ে দেখে দায়ীদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছি।’
লিখিত অভিযোগে মোকছেদ আলী উল্লেখ করেছেন, ১৯৭৮ সালে তার বাবা মহাদেবপুর মহল্লায় ২৪৬/১ খতিয়ানের ১, ২, ৩, ৪, ৬ ও ৭ নম্বর দাগে ৭ দশমিক ১২ একর জমি ক্রয় করেন। জমিটি বিক্রির পর বিক্রেতা ভারতে চলে যান। সেই জমিতে মোকছেদ ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বাগান, পুকুর, মসজিদ ও গরু এবং মুরগির খামার করেন।
নব্বই দশকে জমি বিক্রেতার ওয়ারিশরা একই জমি আবু তাহের মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। মালিকানা দাবি করে ১৯৯৫ সালে তিনি মামলা করেন। তবে আদালতের রায়ে তিনি হেরে যান। কিন্তু তার ওয়ারিশরা অবৈধভাবে জমিটি দখলের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন।
গত ১৬ জানুয়ারি ভোররাত ৪টার দিকে আবু তাহেরের ছেলে আজাদ (৪৯) ও বল্টুসহ (৪৫) আরও ৯/১০ জন ব্যক্তি জমিটি অবৈধভাবে দখলে নিতে যান। তাদের কাছে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র ছিলো। প্রাণভয়ে মোকছেদ ও তার সন্তানরা জমির কাছে যাননি।
তবে মহাদেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) মোবাইলে কল করেছেন ভোর সাড়ে ৪টায়। কয়েক দফা ওসির সঙ্গে কথাও হয়েছে। প্রতিবারই তিনি দ্রুত পুলিশ পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু পুলিশ যায়নি। অভিযোগ করার প্রায় সাড়ে ৭ ঘণ্টা পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের একটি দল। অথচ থানা থেকে ঘটনাস্থলের দূরত্ব মাত্র ৫০০ গজ। এই সময়ের মধ্যে দখলকারীরা তার জমিতে টিন দিয়ে ঘরও তৈরি করে ফেলে।
অভিযোগে আরও বলা হয়, দীর্ঘক্ষণ পর পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও দখলকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে অস্ত্র নিয়ে দখলকারীরা জমি পাহারা দিচ্ছেন। সেখানে গেলেই হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দিচ্ছেন। প্রাণভয়ে মোকছেদ জমিতে যেতে পারছেন না। এ বিষয়ে মামলা করতে পর পর দুই দিন থানায় গেলেও তার মামলা নেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত করে জমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁর মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নজরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘আমাকে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কল করেছিলেন এটা সত্য। আমিও সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের একটি দলকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলাম। তারা যেতে কিছুটা দেরি করেছে। তবে সেটা সাড়ে ৭ ঘণ্টা নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঝামেলা জমি সংক্রান্ত। আমরা ইতোমধ্যেই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী প্রকৃত মালিক জমির ভোগ-দখল করবে। পুলিশ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।’