সিলেটে ভোটযুদ্ধে কামরান-আরিফের প্রধান সারথি আসমা-সামা

, জাতীয়

নূর আহমদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-24 15:11:35

 

সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। তার পত্নী আসমা কামরান। বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। সামা হক চৌধুরী আরিফ পত্নী। কামরান- আরিফ দুজনই সিসিকের সাবেক মেয়র। এবারের নির্বাচনেও দু‘জন মূল প্রতিদ্বদ্বী। ছুটছেন নগরীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। আসমা- সামাও বসে নেই।

তারা শুধু এখন গৃহিনী নয়, ভোটের ময়দানেও আরিফ-কামরানের প্রধান সারথি। যাপিত জীবনেও এই দুই নারীর রয়েছে অনন্য মিল।

আসমা কামরানের বাবার বাড়ি বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে। টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল উপজেলার ময়তা গ্রামে। নানার বাড়িতে জন্ম হলেও  বাবার চাকুরি সূত্রে দুই মাস বয়স থেকে সিলেটে অবস্থান করছেন। বাবা ছিলেন পুলিশ অফিসার। ছাতক থানা থেকে অবসরে যান তিনি। এরপর থেকে সিলেটে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তবে বাবার বাড়ির স্বজনরা এখনো ছড়িয়ে আছেন বৃহত্তর ময়মনসিংহের জেলায় জেলায়। সেই সুবাদে সিলেটস্থ বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির প্রধান উপদেষ্টা আসমা কামরান।

সামা হক চৌধুরীর বাবার বাড়ি ময়মনসিংহ শহরে। তাদের বাসা শহরের নওমহালে। সেখানেই বেড়ে উঠা। বিদ্যাময়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও আনন্দমোহন সরকারি কলেজে পড়াশোনা। এরপর ১৯৯১ সালে বিবাহ সূত্রে সিলেটে আসা। বাবা এম এস হাসান ছিলেন ময়মনসিংহ বিসিক এর চেয়ারম্যান। দাদাও ছিলেন পাকিস্তান আমলে মিউনিসিপিলিটির সেক্রেটারী। একইভাবে সিলেটস্থ বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির উপদেষ্টা সামা হক চৌধুরী।

দু’জনের বাবার বাড়ির সূত্র ধরে সিলেটস্থ বিভিন্ন বাইরের জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় আসমা কামরান ও সামা হক চৌধুরী। ভোট এলেই দু’জন ছুটে যান দেশের মানুষের কাছে। ভোট ভিক্ষা করেন স্বামীর জন্য। ভোটাররাও দু’জনকে সমানভাবে তারা খুশি করার চেষ্টা করেন । এই ইস্যু নিয়ে কখনো আঞ্চলিক সমিতিতে ভাঙনও দেখা দেয়।

সিলেটে অবস্থানকারী বিভিন্ন জেলার লোকজনের ১৫/২০টি সংগঠন রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি সদস্য বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির। তাদের দাবি তাদের ভোটারও রয়েছে বেশি। এভাবে সিলেটে বৃহত্তর চট্টগ্রাম সমিতি, বৃহত্তর রংপুর সমিতি, বৃহত্তর বরিশাল সমিতি, বৃহত্তর খুলনা সমিতিসহ জেলা ভিত্তিক আঞ্চলিক সংগঠন রয়েছে। দাবি করা হয় সিলেট নগরীতে এসব সংগঠনের পক্ষে ৪০/৫০ হাজার ভোট রয়েছে। ফলে নির্বাচন এলে এই ভোট দুই প্রার্থীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।

ওয়ান ইলেভেন - কামরান ও আরিফের জন্যও অনেকটা-অভিশাপ হিসেবে এসেছিল । দু’জনের গুররুত্বপূর্ণ একাধিক বসন্ত কেটেছে কারাগারে। ২০০৮ সালে কারাগার থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে পাশ করেছিলেন কামরান। তার সঙ্গে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিলেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম এ হক।  স্বামীর অবর্তমানে সেই বিজয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন আসমা কামরান। স্বামীর মুক্তি ও মেয়র পদে জয় পেতে ছুটেছেন মানুষের কাছে। অন্যদিকে অশ্রু ফেলেছেন দু’চোখ দিয়ে। অবশ্য সেই সময়ে আরিফ কারাগারে থাকলেও নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন না।

২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হলে ভোটের মাঠে সামা হকের কদর বাড়ে। আসমা কামরান- সামা হক দুজন স্বামীর বিজয়ের জন্য ছুটে যান নিজ এলাকার মানুষের কাছে। বিশাল ভোটের ব্যবধানে কামরানকে পরাজিত করেন আরিফ। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলেও কামরান চলে যান নগর ভবনের বাইরে। ভালো থাকেন কামরান। তবে আবার ঘোর অমানিশা ভর করে আরিফের জীবনে। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায়  গ্রেফতার হয়ে ২৭ মাস কারাগারে চলে যান আরিফ। আবারও শুরু হয় সামা হকের দু:খ যাত্রা। অসুস্থ স্বামীর মুক্তির জন্য কারাগার-আদালতে ধরনা দেন তিনি। আরিফ বর্তমানে জামিনে কারাগারের বাইরে আছেন। নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। সঙ্গে আছেন সামা হক।

সিলেট জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী আসমা কামরান বলেন, জীবনে অনেক কষ্ট পোহাতে হয়েছে। সেদিনগুলোর কথা মনে হলে এখনো কান্না আসে। তিনি বলেন, মানুষের কাছে ছুটছি। বিশেষ করে একজন নারীর কাছে স্বামীর বাড়ি-বাবার বাড়ি দু‘টিই গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু বাবার বাড়ির লোকজন সিলেটে আছেন, তাদের কাছে যাচ্ছি। তারা অতীতেও হতাশ করেনি। আশা করছি এবারো করবে না। আর সিলেটের জনগণ তো আমার স্বামীর সঙ্গে আছেনই। 

সামা হক চৌধুরী রাজনীতিতে এখনো তেমন সক্রিয় হননি। তবে ভোটের মাঠে রয়েছেন একটু আগে-ভাগেই। তিনি জানান, বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমিতির উপদেষ্টা তিনি । গত নির্বাচনে বাবার বাড়ির এলাকার লোকজনের কাছে অনেকটা দাবি নিয়েই গিয়েছিলেন, তারা অসম্মান করেননি। এবারও ভোট চাইতে যাচ্ছেন। প্রত্যাশা এবারো খালি হাতে ফিরাবেন না। আর সিলেটের জনগণ এবারো আরিফকে পাশ করাবেন বলে প্রত্যাশা করেন সামা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর