সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক পরিসরে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা

, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-07-28 22:16:48

 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক পরিসরে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, প্রত্যেকটি স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক পরিসরে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের ব্যবহার করবে ইসি। সংখ্যা নির্ধারণ না হলেও কমিশন ইতিমধ্যে বিপুল পরিমান ইভিএম তৈরির প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে সারাদেশের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ইভিএমের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু হয়েছে। নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করছে।

গত ১৫ মে খুলনা সিটি করপোরেশনের পর আসন্ন গাজীপুর নির্বাচনেও চারটি কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করে ইসি।

ঘোষিত তফসিল বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচনে স্বল্প পরিসরে যন্ত্রের সহায়তা নিয়ে নির্বাচন করার পর আগামীতে স্থানীয় নির্বাচনের যে কোনো সিটি, উপজেলা কিংবা পৌরসভায় এককভাবে ইভিএম ব্যবহার হতে পারে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের কাজে এই যন্ত্রকে যুক্ত করে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করছে কমিশন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইভিএম বিতর্ক নিরসনে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রশিক্ষণ প্রদান করবে ইসি।

এমনকি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টদেরও প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে। গণমাধ্যমে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ রোধে সাংবাদিকদেরও ইভিএমের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হতে পারে।

এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.)  শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ইভিএমের ওপর পর্যায়ক্রমে সকলকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। যেন এর সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর হয়।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মোস্তফা ফারুক বলেন, ইভিএমের ওপর প্রশিক্ষণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। শুধু সংসদ নির্বাচনকে টার্গেট করে নয়, সব নির্বাচনের জন্য কর্মকর্তাদের এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ থাকা উচিত।

গত শনিবার উপজেলা ও থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রথম ব্যাচের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। ওই অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ভবিষ্যতে ভোটগ্রহণে অধিক পরিমাণে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করা হবে। সোমবার দ্বিতীয় ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষে ইসির সচিব বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের টার্গেট নিয়ে কাজ চলছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখন হয়নি সময় আছে পরে কমিশন জানাবে। তবে প্রতিটি স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ইভিএমকে জনগণের কাছে পরিচিতি লাভের জন্যে কাজ করছে ইসি উল্লেখ করে সচিব বলেন, দশটি অঞ্চলে  মেলা করার চিন্তা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বরিশাল অঞ্চলে একটি মেলা করা হয়েছে সেখানে কিন্তু বেশ সাড়া পাওয়া গেছে। ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবেও একটি মেলার করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিটি জেলাতে দুটি করে ইভিএম মেশিন পাঠানোর পরিকল্পনা আছে। তিনি বলেন, শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচন নয়, প্রত্যেকটি স্থানীয় নির্বাচনে এটি ব্যবহারের চিন্তা রয়েছে।

একটি ইভিএম মেশিনের ব্যয় সম্পর্কে তিনি জানান, প্রতিটি ইভিএমে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা ব্যয় হয়। শুধু মেশিন নয় এর সঙ্গে কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিসহ নানা বিষয় যুক্ত থাকে।

এরআগে সিইসি কেএম নূরুল হুদা জানিয়েছিলেন, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তুতি নেই ইসির। রাজনৈতিক দল ও ভোটাররা সর্বসম্মতি দিলেই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হতে পারে। ইসির সঙ্গে সংলাপে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতা করেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে।

সূত্র জানায়, আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটির নির্বাচনে সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে ইভিএমের পরিধি বৃদ্ধি করেছে কমিশন। এর মধ্যে বরিশাল সিটিতে ১০টি এবং রাজশাহী ও সিলেটে দুইটি করে কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করে ভোট নেওয়া হবে। এর আগে সিটি নির্বাচনে বরিশাল, রাজশাহী ও সিলেট সিটিতে একটি করে ওয়ার্ডে ইভিএমে নির্বাচন করে। গত সিটি নির্বাচনে বুয়েটের তৈরি ইভিএমে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে রাজশাহী সিটির পিটিআই কেন্দ্রে রণক্ষেত্র তৈরি হয়। ইভিএমের কারণে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া বিতর্কিত হয়ে পড়ে। সর্বপ্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন স্থানীয় নির্বাচনে ইভিএমের প্রচলন ঘটায়।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর সহায়তায় প্রথমে ২০১০ সালে এ প্রযুক্তির ৫৩০টি মেশিন কেনা হয়। নির্বাচনে ব্যবহার করতে গিয়ে দেশের প্রধান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুত করা ইভিএমে নানা যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। পরে ২০১১ সালে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) প্রস্তুত করা ৭০০ ইভিএম কেনা হয়। এগুলো পুরোপুরি ত্রুটিমুক্ত ছিল না।

শামসুল হুদা কমিশন ২০১১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ২১ নং ওর্য়াডে বুয়েটের ইভিএম ব্যবহার করে। পরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, নারায়ণগঞ্জ সিটি, টাঙ্গাইল পৌরসভা ও নরসিংদী পৌরসভায় এ প্রযুক্তি ব্যবহার হয়। পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ায় হুদা কমিশনের স্থলে বিধির নিয়মে নতুন কমিশন হিসেবে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদায়ী রকিব উদ্দিন কমিশন দায়িত্ব নেয়। তাদের মেয়াদে রাজশাহী সিটিতে ২০১৩ সালে ইভিএম ব্যবহার করে বিতর্কে মধ্যে পড়েন। পরে কমিশনার হিসেবে মেয়াদ পূর্ণের আগে ইভিএম ব্যবহার করেনি। তবে, নতুন ইভিএমের প্রচলন চালু রেখে যান।

ফেব্রুয়ারিতে কেএম নূরুল হুদার কমিশন দায়িত্বে এসে কমিটি করে পুরনো ইভিএমকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। নতুন প্রবর্তিত ইভিএমে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ১৪১ নং কেন্দ্রের ৬টি কক্ষে ব্যবহার করে। কিন্তু সেখানে কিছুটা ত্রুটি দেখা দেয়। পুরনো ইভিএমের মতো ত্রুটি নিয়ে সেই নির্বাচন শেষ করে। এরপর গাজীপুর নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ধীরগতিতে ভোটগ্রহণ ও ভোটারদের ভোগান্তিতে ফেলার অভিযোগ আসে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর