স্বপ্নের কালনা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে

, জাতীয়

কান্ট্রি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 16:09:39

নড়াইল: অবশেষে দীর্ঘদিন পর নড়াইলবাসীর স্বপ্নের কালনা সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে এ মাসেই। স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোটি মানুষের। এই সেতু চালু হলে মধুমতি নদীর উভয় পাড়ের বেশ কয়েকটি জেলার মানুষের ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে। কমবে দুর্ভোগ। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে এমন সংবাদে খুশি এসব অঞ্চলের মানুষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে গোটা বরিশাল বিভাগ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরাসহ আশপাশের আরও কয়েকটি জেলার মানুষ সুফল পাবে। কালনা ঘাটে সেতু নির্মাণ ছিল এসব অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে নড়াইল সফরে এসে কালনা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরবর্তী মেয়াদে সরকার গঠন করে ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সেতুটির ডিপিপি চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গোপালগঞ্জ-নড়াইলের মাঝখানে মধুমতি নদীর ওপর কালনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তবে প্রকল্প অনুমোদন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার পরও নানা জটিলতায় দীর্ঘদিন কাজ আটকে ছিল।

সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, সেতুর নির্মাণ কাজ তদারকি করবেন জাপানি উন্নয়ন সংস্থা জাইকা অনুমোদিত কোম্পানি দি ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্ট গ্লোবাল লি. (ওসিজি)। চুক্তি স্বাক্ষরের তারিখ থেকে তিন বছরের মধ্যে সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে হবে। ‘ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট-লিংক কালনা’ প্রকল্পের আওতায় এশিয়ান হাইওয়ে-১ নামে পরিচিত মহাসড়কের এই সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬৯০ মিটার, প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। ৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং কম গতির যানবাহনের জন্য দুইপাশে দুই লেনসহ ছয় লেনের এই সেতু নির্মাণের জন্য মোট খরচ ধরা হয়েছে ৯৫৯ কোটি টাকা।

বিলম্বের কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প গ্রহণের সময় এ সেতুর সঙ্গে রেললাইন সংযোজনের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। পরে একই সেতুর উপর দিয়ে রেললাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। সে কারণে গত ২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কালনা সেতু এলাকা পরিদর্শনে এসে জানান, কালনা সেতুর সঙ্গে রেললাইন সংযোজনের চিন্তা করা হচ্ছে। কিন্তু পরে পৃথক রেলসেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া প্রকল্প অনুমোদনের সময় চার লেনের সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত ছিল। সে অনুসারে সেতু নির্মাণে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার কথা ছিল জাইকার। কিন্তু চার লেন সেতুর পরিবর্তে ছয় লেন সেতু নির্মাণের বাড়তি অর্থ দিতে জাইকা দেরি করে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির কার্যকরী সভাপতি ছাদেক আহম্মেদ খান বার্তা২৪.কমকে জানান, কালনা সেতুর গুরুত্ব অপরিসীম। সেতুটি নির্মিত হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বেনাপোলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সহজ ও উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে। তাতে প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার জ্বালানি তেল সাশ্রয় হওয়ার সাথে সাথে সময়ও বাঁচবে।

জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি সরদার আলমগীর হোসেন আলম বার্তা২৪.কমকে জানান, পদ্মা সেতু নির্মাণ হলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার দূরত্ব অনেক কমবে। দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল থেকে ঢাকায় পণ্য পরিবহনের খরচও কমে যাবে অনেকাংশে। এক্ষেত্রে বেনাপোল থেকে কালনা সেতু হয়ে ঢাকার দূরত্ব হবে প্রায় ২০১ কিলোমিটার, যশোর থেকে ঢাকা ১৬১ কিলোমিটার, নড়াইল থেকে ১২০ কিলোমিটার এবং খুলনা থেকে বসুন্দিয়া-ধলগাঁ-কালনা সেতু হয়ে ঢাকার দূরত্ব হবে ১৯০ কিলোমিটার। অথচ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে এসব এলাকা থেকে ঢাকার দূরত্ব ২৫০ থেকে ৪৫০ কিলোমিটার। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য স্বল্প সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাজারজাত করা সহজ হবে। সেতুটি বাস্তবায়ন হলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটবে বলেও জানান তিনি।

‘ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের’ প্রকল্প পরিচালক কে এম আতিকুল হক বার্তা২৪.কমকে জানান, কালনা সেতু মেসার্স আবদুল মোনেম লি. ও জাইকার অনুমোদিত নির্মাণ প্রতিষ্ঠান টেককেন কর্পোরেশন ওয়াইবিসি লি. যৌথভাবে গত ২৪ জুন সেতু নির্মাণ কাজের চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর ফলে নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণে আরও একধাপ এগিয়ে গেল।

তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও ব্যতিক্রমী হবে নড়াইলের কালনা সেতু। ইতোমধ্যে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। ঠিকাদারকে ৩৬ মাসের মধ্যে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর