প্রতারণা অভিযোগ শ্যামলী এসপি বাসের বিরুদ্ধে, থানায় যাত্রী

, জাতীয়

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 04:45:33

ঢাকা: কলকাতা নিয়ে যাওয়ার নামে যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে শ্যামলী (এসপি) পরিবহনের বিরুদ্ধে। ঢাকা থেকে যাওয়া যাত্রীদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতারণা করে আসছে ‘শ্যামলী এসপি’ পরিবহন নামে বাস সংস্থা’। তবে এই পরিবহন মালিক বলেন, তার মতো একই কাজ করছে, সোহাগ, গ্রীনলাইন, হানিফ সহ ১১ জন পরিবহন মালিক। সরাসরি কলকাতা পৌঁছে দেবে এমন প্রতিশ্রুতিতে যাত্রীদের বাসে তুলে তারা। পরে বেনাপোল নামিয়ে দিয়ে ভারতের আরেকটি লোকাল বাসে তুলে দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগী একজন যাত্রী অবশেষে বিষয়টি নিয়ে থানা পর্যন্ত গেছেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ওই পরিবহনের কাউন্টার থেকে দুজনকে আটক করে নেয়। সাময়িক বন্ধ করে দেয় শ্যামলী এসপি –এর নটরডেম কলেজের বিপরীত পাশের কাউন্টার। 

শুধু কলকাতা নামে প্রতারণাই নয়; অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে শ্যামলী এসপি বাসের বিরুদ্ধে।

সোমবার (৯ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে মতিঝিল থানায় ভুক্তভোগী যাত্রী এ মামলা করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা থেকে একমাত্র ‘শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস’নামে বিআরটিসির ব্যানারে হুন্দাই বাস সরাসরি কলকাতা যায়। এছাড়া অন্য কোন বাস কলকাতা যায় না।

সরাসরি কলকাতাগামী ‘শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস’ -রাকেশ ঘোষের মালিকানাধীন। আর প্রতারণায় অভিযুক্ত বাস সংস্থা ‘শ্যামলী এসপি’ রমেশ ঘোষের মালিকানাধীন। তারা দু’জন সম্পকে চাচা-ভাতিজা হলেও পরিবহন ব্যবসা আলাদা।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মতিঝিল থানায় অভিযোগকারী নারী যাত্রী বলেন, গত ৩০ জুন তিনি ঢাকা থেকে কলকাতার উদ্দেশ্যে শ্যামলী এসপি (কোচ নং ৫০১৫) বাসে রওয়ানা দেন। টিকিট কেনার সময় তিনি বার বার জানতে চান- বাসটি কি সরাসরি কলকাতা যাবে। তখন কাউন্টার থেকে তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলা হয় বাসটি সরাসরি কলকাতা নিয়ে যাবে। এজন্য তিনি ১৭০০ টাকা দিয়ে টিকিট কেনেন। কিন্তু টিকিটের আসল দাম ১৫০০ টাকা।

পরে বাসটি বেনাপোল নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। কাস্টমস-ইমিগ্রেশন শেষ করে ভারত অংশে গিয়ে আর এই বাসটি তিনি খুঁজে পাননি। ভারত অংশে শ্যামলী এসপি বাসের যে কাউন্টার সেখানে যাওয়ার পর তাকে ভারতীয় লোকাল বাসে বাসে তাকে তুলে দেওয়া হয়। অন্য যাত্রীদের বেলায়ও তাই ঘটে বলে জানান অভিযোগকারী বাসযাত্রী।

তিনি আরও বলেন, ‘শ্যামলী ভারতীয় অংশের বাসটি ঢাকার ৬ নম্বর বাসের মতো। সিটে ঠিকমতো বসা যায় না এবং ভাঙ্গাচোরা অবস্থায় চলছে।’

এরপর গত ৮ জুলাই রাতে তিনি কলকাতা থেকে ঢাকা ফেরেন। ৯ জূলাই সন্ধ্যায় তিনি আরামবাগ কাউন্টারে অভিযোগ করতে যান। এসময় টিকিট দেখিয়ে অভিযোগ করলে উল্টো যাত্রীর দিকে টিকিট ছুড়ে মেরে বলা হয়- ভাড়া এটাই। কাটা বাসে টিকিট কেটেছেন, কাটা বাসেই যাবেন। যান যান এখান বেরিয়ে যান। 

এসময় কাউন্টার ম্যানেজার ওই নারী যাত্রীর সঙ্গে অশোভন আচারণ করতে থাকেন। কি করবেন করেন- যান ভাগেন, বের হোন বের হোন –এসব। এক পর্যায়ে তিনি পুলিশকে ডাকতে বাধ্য হন।

মতিঝিল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে প্রাথমিক তথ্য প্রমাণ পেয়ে কাউন্টার ম্যানেজার দু’জনকে আটক করে নিয়ে যায়। যাত্রী থানায় গিয়ে এজাহার (মামলা-১৫) দাখিল করেন।

মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক যাত্রীর অভিযোগ ও এজাহার দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পুলিশ পরবর্তী ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওসি।

ভুক্তভোগী যাত্রী জানান, শ্যামলী এসপি প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রীর সঙ্গে একই রকম প্রতারণা করছে বলেই তিনি থানা পযন্ত অভিযোগ দিলেন।

শ্যামলী এসপি পরিবহনের মালিক রমেশ ঘোষের কাছে রাতে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি পাল্টা বলেন ‘প্রতারণা হবে কেন, একটা যাত্রী বেনাপোলে যাবে। এটাকে ট্রানজিট বলে। বর্ডারে সিল মেরে ওপারে গিয়ে কানেক্টিং গাড়িতে উঠে আগের সিটেই যাত্রী কলকাতা যেতে পারবে।

আর সরাসরি কলকাতা বলে কোন যাত্রীদের কাছে টিকিট বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেন রমেশ ঘোষ।

`দিনে ঢাকা থেকে এরকম ৩৫ টি গাড়ি যায়। তার নিজের ২ টি গাড়িসহ ১১ জন মালিকের  ৩৫টি বাস বেনাপোল পর্যন্ত কাটা সার্ভিসের ব্যবসা করছে বলে জানান রমেশ ঘোষ।

অন্য বাসকোম্পানির নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন ‘একই রকম চলছে সোহাগ, গ্রীনলাইন, এসআলম, সৌদিয়া, হানিফ, দেশ ট্রাভেলস, ঈগল, রয়েল, ন্যাশনাল ও শ্যামলী।’

তিনি স্বীকার করে জানান, কলকাতায় এখন তার কোন বাস যায় না। অতীতে ১৭ বছর চলছিলো। এখন শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস-এর বাস যায়। এটা তার মালিকানাধীন নয়।

অভিযোগকারী যাত্রীর বিষয়ে তিনি বলেন, যাত্রীর অভিযোগ থানা দিয়েছেন থানা ব্যবস্থা নেবে। এখন যাত্রী যদি ক্ষমা না করেন তাহলে শাস্তি পেতে হবে তার কাউন্টার কর্মকর্তাদের।

এছাড়া তার মালিকানাধীন বাসে একাধিক সময়ে মাদক পরিবহন সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মাদক আসতেই পারে। এজন্য কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। শ্রমিক ছাঁটাই করছি। র‌্যাব-পুলিশকে বলেছি।’ 

বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক রুটে গাড়ি চালানো হয় বিআরটিসি’র অধীনে। বিআরটিসি জানায়, বাংলাদেশ থেকে একমাত্র সরাসরি শ্যামলী এন আর ট্রাভেলস-এর বাস কলকাতা যাতায়াত করে। এছাড়া আর কোন পরিবহনের বাস কলকাতা যায় না। সোহাগ পরিবহন, দেশ ট্রাভেলস সহ অনেক পরিবহন সংস্থা প্রতারণার মাধ্যমে যাত্রীদের কাছ থেকে সরাসরি কলকাতা নিয়ে যাবে বলে বাসে উঠাও। এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভারত ও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ে আলাদা লিখিত অভিযোগ দুই দেশের সরকারি বাস সংস্থা দিয়ে রেখেছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর