৫৫০ টাকার মিটার নিতে ৫ হাজার টাকা ঘুষ!

, জাতীয়

কান্ট্রি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 19:12:02

নড়াইল: জেলার লোহাগড়ায় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২ এর আওতায় নুতন সংযোগে গ্রাহকদের কাছ থেকে উৎকোচ (ঘুষ) নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং একটি দালাল চক্র এই উৎকোচ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে ভুক্তভোগীরা।

জানা যায়, উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের একটি দালাল চক্র বিদ্যুতের মিটারসহ নতুন সংযোগ দিতে গ্রাহক প্রতি ৪ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ৫ হাজার ৩০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। হাতিয়ে নেয়া টাকার কথা অন্য কারো কাছে প্রকাশ না করার জন্য গ্রাহকদের নিষেধ করে দিয়েছেন সংঘবদ্ধ চক্রটি।আর উৎকোচের বিষয়টি প্রকাশ করলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগটি কেটে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, একটি মিটার সংযোগের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ আবেদন ফি ১০০ টাকা, সদস্য ফি ৫০ টাকা এবং জামানত ফি ৪০০ টাকা অর্থাৎ প্রতি মিটার বাবদ সর্বমোট ৫৫০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ হিসাব মতে দেখা যায়, মিটার প্রতি অফিস বা দালাল চক্র ৩ হাজার ৮০০ থেকে ৫ হাজার ৩০০ টাকা অতিরিক্ত উৎকোচ হিসেবে নিচ্ছেন।
অনেক গ্রাহকের কাছ থেকে এর চেয়ে আরও বেশি টাকা নেয়ারও নজির আছে। আর ওই টাকা পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ও দালাল চক্ররা ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন। মাঝখানে গ্রাহকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নোয়াপাড়া গ্রামের মঞ্জুর আলমের ছেলে দালাল বদরুল শেখ নোয়াপাড়া গ্রামের ৭১টি পরিবারের ১২০টি মিটারের মধ্যে ৯৬টি মিটার দিয়ে প্রতিটি নারী গ্রাহকের কাছ থেকে ৪ হাজার ৩০০ টাকা এবং পুরুষ গ্রাহকদের কাছ থেকে ৫ হাজার ৩০০ টাকা হারে কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছেন।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, সংঘবদ্ধ ওই দালাল চক্রটি হাতিয়ে নেয়া টাকার বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন। বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন জড়িতরা।

নোয়াপাড়া গ্রামের গ্রাহক হাই মিয়া জানান, দীর্ঘদিন এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় গ্রাহকদের মধ্যে এর ব্যাপক চাহিদা ছিল। সেই সুযোগে বিদ্যুৎ অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও একই গ্রামের সাখায়াত হোসেন সকুর ছেলে নুর মোহাম্মদ এবং দালাল বদরুল শেখের যোগসাজশে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।

একই গ্রামের উত্তর পাড়ার দিপালী বেগম বলেন, ‘আমার কাছ থেকে বদরুল শেখ মিটার দিয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা নিয়েছেন।’

হাবিবর শেখ বলেন, ‘আমি বিদ্যুৎ পাওয়ার জন্য হাই মিয়ার কাছে ৮ হাজার ১০০ টাকা দিয়েছি। হাই মিয়া সব টাকা নিয়ে দালাল বদরুলকে দিয়েছেন। বদরুল আমার কাছে আরও টাকা দাবি করেছিলেন। কিন্তু আমি তা দেয়নি।’

দোলেনা বেগম বলেন,‘বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কথা বলে কৌশলে ভিন্ন ভিন্ন খাতে টাকার অংক উল্লেখ করে ৫ হাজার ৩০০ টাকা নিয়েছেন। আমার সঙ্গে জুলুম করা হয়েছে।’

দালাল বদরুল শেখ বলেন, ‘আমি বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার কাজ করেছি। তবে গ্রামের কয়েকজন ওই কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাই তারা অনিয়ম করে থাকতে পারেন। আমি কোনো অনিয়ম করিনি।’

এ বিষয়ে যশোর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২ এর আওতাধীন লক্ষ্মীপাশা সাব-জোনাল অফিসের এজিএম শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘যশোর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২ এর ডিজিএম টেকনিক্যাল অরুণ কুমার কুণ্ডুসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা সরেজমিনে অভিযোগটির তদন্ত সম্পন্ন করেছেন। তবে তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে এখনো আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর