নারীরাও অংশ নিচ্ছে লাঠি খেলায়

, জাতীয়

কান্ট্রি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 01:23:58

প্রতিপক্ষের হাত থেকে আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বনের প্রচেষ্টা সম্বলিত টানটান উত্তেজনার একটি খেলার নাম লাঠি খেলা। লাঠি খেলা অনুশীলনকারীকে লাঠিয়াল বলা হয়। আর নড়াইলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ নামে একটি মাত্র দলই লাঠি খেলা প্রদর্শন করে থাকে। কারণ লাঠি খেলায় নতুন করে কোনো দল তৈরি না হওয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ এ খেলাটি। 
 
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লাঠি খেলার জন্য সাড়ে চার থেকে পাঁচ ফুট লম্বা বাঁশের একটি লাঠি ব্যবহার করা হয়। প্রত্যেক খেলোয়ার তাদের নিজ নিজ লাঠি দিয়ে রণকৌশল প্রদর্শন করে থাকেন। শুধু মাত্র বলিষ্ঠ যুবকরাই এই খেলায় অংশগ্রহণ করলেও নড়াইলে রয়েছে এর ব্যতিক্রম। এখানে বর্তমানে শিশু থেকে শুরু করে যুবক, বৃদ্ধ পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও লাঠি খেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। 
 
লাঠি খেলার আসরে লাঠির পাশাপাশি যন্ত্র হিসাবে ঢোলক, কর্নেট, ঝুমঝুম ইত্যাদি ব্যবহৃত হয় এবং সঙ্গীতের পাশাপাশি চুড়ি নৃত্য দেখানো হয়। লাঠি খেলার মধ্যে রয়েছে অন্যতম সড়কি খেলা, ফড়ে খেলা, ডাকাত খেলা, বানুটি খেলা, গ্রুপ যুদ্ধ, নরি বারি খেলা এবং দা খেলা ইত্যাদি। 
 
গ্রামের সাধারণ মানুষ বাংলা বর্ষবরণ, সপ্তাহব্যাপী সুলতান মেলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে লাঠি খেলার আয়োজন করে থাকে। এক্ষেত্রে সাধারণত লাঠিয়াল দলকে ভাড়া করে আনা হয়। 
 
এদিকে এক সময় মানুয়ের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছিল এ খেলাটি। দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসত এ খেলা দেখার জন্য। বিভিন্ন জায়গায় মাঝে মধ্যে এ লাঠি খেলা দেখা গেলেও বর্তমানে তা খুব সীমিত। বিনোদনের উৎস লাঠি খেলা এখন আর আগের মতো চোখে পড়ে না।
 
নড়াইলের একমাত্র লাঠি খেলা দলের সদস্য পাপ্পু বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এখন আর আগের মতো আমাদের ডাকে না। এ কারণে আয় কমে যাচ্ছে। সে জন্য আমাদের খেলার প্রতি আগ্রহ কমে যাচ্ছে।’
 
লাঠি খেলা দলের সদস্য পিকুল ও আশিক বলেন, ‘আমাদের যদি আগের মতো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডাকে তাহলে আগ্রহ বেড়ে যাবে। এতে করে আমাদের আয় বেড়ে যাবে। এছাড়া এ লাঠি খেলা টিকে থাকবে।’ 
 
নারী লাঠি খেলোয়ার তানিয়া বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লাঠি খেলা দেখিয়ে মানুষকে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করি।’
 
সাথী খানম বলেন, ‘পুরুষদের সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও বিভিন্ন প্রকার লাঠি খেলা প্রদর্শন করে থাকি।’
 
মোনালিসা খানম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘প্রথম দিকে বাড়ি থেকে লাঠি খেলায় অংশগ্রহণ করতে দিতে রাজি না হলেও এখন আর সমস্যা হয়না। আগে আমাদের খেলা নিয়ে এলাকাসহ বাইরের মানুষ বিভিন্ন প্রকার মন্তব্য করত। তবে এখন আর সমস্যা হয় না। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খেলা দেখাতে ভালো লাগে।’
 
নড়াইলের একমাত্র বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ লাঠিয়াল বাহিনী প্রধান বাচ্চু মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমাদের একটি লাঠি খেলার দল আছে। আমাদের সদস্য সংখ্যা ২৫ জন। এর মধ্যে ৮ জন নারী সদস্য রয়েছে। আমার ৪ পুরুষ লাঠি খেলার সাথে যুক্ত ছিল। আমার বয়স যখন ১২ বছর তখন থেকে লাঠি খেলা শুরু করি। এখন আমার বয়স ৫০ বছর। ৩৮ বছর ধরে লাঠি খেলা করে আসছি।’
 
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি ভাবে সহযোগিতা পেলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ লাঠি খেলা ধরে রাখা সম্ভব। নতুবা এক সময় বিলীন হয়ে যাবে এ খেলাটি।
 
 
 

এ সম্পর্কিত আরও খবর