ঝালকাঠির দুই বিচারক হত্যার ১৪ বছর

আজ ১৪ নভেম্বর। ২০০৫ সালের এইদিনে জেএমবির আত্মঘাতী বোমা হামলায় ঘটনাস্থলেই মারা যান জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ সোহেল আহমেদ এবং বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান আরেক জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ জগন্নাথ পাঁড়ে। ঝালকাঠির দুই বিচারক হত্যার ১৪ বছর অতিবাহিত হলেও সেদিনের সেই স্মৃতি মনে করে আজও আঁতকে ওঠেন ঝালকাঠির আদালতপাড়া সহ জেলাবাসী।

সেদিন সকাল ৯টা বাজার পাঁচ মিনিট আগে জেলা শহরের পূর্বচাঁদকাঠি এলাকার সরকারি বাসভবন থেকে আদালতে যাওয়ার জন্য জজশিপের গাড়িতে বিচারক এম আউয়ালের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতের দুই সিনিয়র সহকারী জজ জগন্নাথ পাঁড়ে এবং সোহেল আহমেদ। আর গাড়ির ড্রাইভার সুলতান যান বিচারক আউয়ালকে গাড়িতে তোলার জন্য ডাকতে। এ সময় জেএমবির সুইসাইডাল ইফতেখার হাসান আল-মামুন গাড়িতে অপেক্ষমাণ দুই বিচারকে একটি চিরকুট পড়তে দেন। তারা চিরকুট পড়তে থাকলে মামুন বিচারকদের গাড়িতে শক্তিশালী বোমা নিক্ষেপ করেন। মুহূর্তেই বিকট শব্দে কম্পিত হয়ে গাড়িটি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। আর দুই বিচারকের শরীরে বিভিন্ন অংশ দেহ থেকে উড়ে যায়।

ঘটনা স্থলেই মারা যান বিচারক জগন্নাথ পাঁড়ে বরিশাল নেওয়ার পথে মারা যান সোহেল আহমেদ। বোমা নিক্ষেপের পর আহত অবস্থায় ধরা পড়েন হামলাকারী জেএমবির সুইসাইড স্কোয়াডের মামুন। পরে এ ঘটনায় মামলা হলে ঝালকাঠির তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ রেজা তারিক আহমেদ শীর্ষ জঙ্গিনেতা শায়খ আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাইসহ সাত জঙ্গিকে ২০০৬ সালের ২৯ মে ফাঁসির আদেশ দেন।

উচ্চ আদালতে সে রায় বহালের পর দেশের বিভিন্ন জেলখানায় ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ ছয় শীর্ষ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এরা হলেন- জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, সেকেন্ড ইন কমান্ড সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলাভাই, সামরিক শাখা প্রধান আতাউর রহমান সানি, উত্তরাঞ্চলীয় সমন্বয়কারী আবদুল আউয়াল, দক্ষিণাঞ্চলীয় সমন্বয়কারী খালেদ সাইফুলাহ ও বোমা হামলাকারী ইফতেখার হাসান আল মামুন। ওই সাত জনের মধ্যে পালিয়ে থাকা জঙ্গি সদস্য আসাদুল ইসলাম ওরফে আরিফের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবর খুলনা কারাগারে।

শোক-শ্রদ্ধা আর ভালবাসার নানা কর্মসূচিতে ঝালকাঠিতে বিচারক হত্যা ১৪ তম দিবস পালন করেছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ও আইনজীবীরা। বৃহস্পতিবার ( ১৪ নভেম্বর ) সকাল ৮টায় ঝালকাঠির আদালত চত্বর থেকে একটি শোক র‌্যালি বের হয়ে শহর ঘুরে নিহত বিচারকদের স্মৃতিস্তম্ভে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে পুস্পার্ঘ অর্পণ করেন বিচারকরা। পরে তাদের স্মরণে সভা, দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করা হয়।