ঘরে ফিরলেও সব হারিয়ে অসহায় উপকূলবাসী

বিবিধ, জাতীয়

মানজারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, খুলনা | 2023-08-21 01:49:55

ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবমুক্ত হয়েছে বৃহত্তর খুলনার উপকূলীয় জনপদ। উপকূলে থেমেছে দমকা বাতাস ও বৃষ্টি। সেই সঙ্গে আতঙ্কিত জনপদের বাসিন্দারাও আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজগৃহে ফিরেছে।

ঘরে ফিরলেও সব হারিয়ে অসহায় উপকূলবাসী
সকালে খুলনার আকাশে রোদের দেখা মেলে, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

সোমবার (১১ নভেম্বর) সকালে খুলনার আকাশে রোদের দেখা মেলে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হালকা মেঘে ঢেকে গেলেও আবার কিছু সময় যেতে না যেতেই সূর্যের আবারও দেখা মেলে। এভাবেই মেঘ-রৌদ্র‌ের লুকোচুরিতে বুলবুলের প্রভাবমুক্ত হয়েছে খুলনা।

ঘরে ফিরলেও সব হারিয়ে অসহায় উপকূলবাসী
সাইক্লোন শেল্টার থেকে ফিরে এসে ঘরে কিছুই পাননি এই বৃদ্ধা, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘বর্তমানে খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলের ওপর দিয়ে হালকা মেঘমালা বয়ে যাচ্ছে। তবে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবমুক্ত এখন খুলনা। কিছুটা তাপমাত্রাও বাড়ার সম্ভাবনা আছে। নিম্নচাপের মেঘমালা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।’

ঘরে ফিরলেও সব হারিয়ে অসহায় উপকূলবাসী
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে বিধ্বস্ত একটি ঘর, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টানা দু'দিন উপকূলের বাসিন্দারা ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। রোববার বিকাল থেকেই আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরতে শুরু করেন তারা। তবে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে অনেকে তাদের বাসস্থানটি অক্ষত পাননি। কারো ঘরের উপরে গাছ উপড়ে পড়েছে। কারো ঘরের চাল ও টিন উড়ে গেছে। কারো পুকুর আর মাছের ঘের ভেসে গেছে। আবার কারো ফসল নুয়ে পড়ে নষ্ট হয়েছে। দূর্ভোগের এ অবস্থা থেকে কাটিয়ে উঠতে উপকূলবাসীর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তারা।

ঘরে ফিরলেও সব হারিয়ে অসহায় উপকূলবাসী
বৃদ্ধার বেঁচে থাকার শেষ সম্বলটি বুলবুলের আঘাতে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

সরকারি তথ্যমতে, খুলনায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়া, দমকা বাতাস ও বৃষ্টিপাতে কয়েক হাজার গাছগাছালি উপড়ে পড়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে অনেক ঘরবাড়ি। সবশেষ এ অঞ্চলে পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ঘরে ফিরলেও সব হারিয়ে অসহায় উপকূলবাসী
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে বিধ্বস্ত হয় পুরো বাড়িটি, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক হেলাল হোসেন জানান, খুলনার উপকূলীয় দাকোপ, কয়রায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পেয়েছি। তবে সংখ্যাটি আরো বাড়তে পারে। এছাড়া কয়েক হাজার গাছগাছালি উপড়ে পড়েছে। পুকুর ও মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গতদের সাহায্যে কাজ করা হচ্ছে।

ঘরে ফিরলেও সব হারিয়ে অসহায় উপকূলবাসী
বাড়ির উঠানে এখনো জমে আছে পানি, ভেসে গেছে পুকুরের সব মাছ, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাতক্ষীরার উপকূল। এ অঞ্চলের ৮০ শতাংশ কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার ১৬ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও ৩২ হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া ১৬ হাজার ২০০ হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়েছে। শত শত মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। বিপর্যস্ত জনজীবন থেকে উত্তরণ ঘটাতে জেলা প্রশাসক সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ঘরে ফিরলেও সব হারিয়ে অসহায় উপকূলবাসী
ঝড়ের পর খুঁজে পাওয়া একটি ফ্যান গুছিয়ে রাখছেন একজন উপকূলবাসী, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ জানান, বাগেরহাটে ৪৪ হাজার ৫৬৩টি ঘরবাড়ি, ১৮ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, ৩৫ হাজার ৫২৯ হেক্টর ফসলি জমি এবং সাত হাজার ২৩৪টি মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে ৩৫ হাজার ৭৭৫টি আংশিক এবং আট হাজার ৭৮৮টি ঘর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার ৭৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬২টি ইউনিয়নকে দুর্যোগকবলিত ইউনিয়ন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

ঘরে ফিরলেও সব হারিয়ে অসহায় উপকূলবাসী
ঝড়ের কবলে এখানের সব কয়টি বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

জেলার ১ লাখ ৩২ হাজার ৩০০ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর