ঢাকা: আগষ্টের প্রথম সপ্তাহে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হচ্ছে বিশ্বের সর্বাধুনিক বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। এবার প্রথম দিন থেকেই নিজস্ব বৈমানিকেররা এই উড়োজাহাজ পরিচালনা করবেন। এজন্য ১৪ জন বৈমানিককে প্রস্তুত করা হচ্ছে।
এই বৈমানিকেরা সবাই সিঙ্গাপুরে বোয়িংয়ের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নেবেন। নির্ধারিত সময়ের আগেই তারা প্রশিক্ষণ নিয়ে তৈরি হবেন, স্বপ্নের বোয়িং ৭৮৭ উড়োজাহাজ চালনায়।
এবারই প্রথম ফ্লাইট থেকেই বিদেশি বৈমানিক ছাড়া বিমান নিজস্ব বৈমানিক দিয়ে নতুন উড়োজাহাজ চালনার পরিকল্পনা নিয়েছে। এতে করে বিমান কোটি কোটি টাকা অর্থ সাশ্রয় করতে পারবে।
ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই চারটি উড়োজাহাজের নাম দিয়েছেন আকাশবীণা, হংসবলাকা, গাঙচিল ও রাজহংস। উড়োজাহাজটিতে মোট আসন রয়েছে ২৭১টি। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাসের আসন ২৪টি।
জ্বালানি সাশ্রয়ী বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক এই উড়োজাহাজ চালনার জন্য রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স ১৪ জন বৈমানিককে চুড়ান্ত করেছে। তালিকায় স্থান পাওয়া সবাই জাতীয় এয়ারলাইন্সের সবচেয়ে দক্ষ ও জৈষ্ঠ্য বৈমানিক। বৈমানিকেরা মোট ২১ দিনের প্রশিক্ষণ নেবেন। এছাড়া সহ-বৈমানিক হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে আরো ১০ জন ফার্স্ট অফিসারকে।
বিমানের জেনারেল ম্যানেজার (পিআর) শাকিল মেরাজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা যে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছি এটি তারই প্রমাণ। প্রথম থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল নিজস্ব বৈমানিক দিয়েই ড্রিমলাইনার পরিচালনা করবো এবং সেই অনুযায়ী বৈমানিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।”
এর আগে ২০১১ সালে যখন বিমানের বহরে প্রথম চতুর্থ প্রজন্মের উড়োজাহাজ ৭৭৭ ৩০০ ইআর যুক্ত হয়, তখন পরিস্থিতি এরকম ছিল না। বিদেশি বৈমানিক দিয়েই এই উড়োজাহাজ পরিচালনা করতে হয়েছিল। জনপ্রতি বৈমানিকের পেছনে থাকা-খাওয়া ও অন্যান্য সুবিধাসহ রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্সের পেছনে প্রতি মাসে খরচ ছিল প্রায় ১৬ লাখ টাকা। এভাবে তিনজন বিদেশি বৈমানিককে প্রায় তিন বছর বিপুল অংকের টাকা বেতন দিতে হয়েছে।
নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানের একজন জৈষ্ঠ্য বৈমানিক বার্তা২৪.কমকে বলেন, পরিকল্পনা থাকলে এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকলে দেশীয় বৈমানিক দিয়েই সব কিছু করা সম্ভব। এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ পরিকল্পনা নিয়েছে এবং আমরা বৈমানিকেরা সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সফলতা দেখিয়েছি। এতে নিজস্ব বৈমানিকদের সক্ষমতা যেমন বেড়েছে, তেমনি বহু অর্থও সাশ্রয় করা সম্ভব হচ্ছে।
বোয়িং ৭৭৭ ৩০০ ইআর উড়োজাহাজ পরিচালনার অভিজ্ঞতা থেকে আগে ভাগেই পুরোপুরি সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে। যে কারণে ঢাকায় এই উড়োজাহাজ আসার আগেই প্রস্তুত থাকবেন ১৪ জন বৈমানিক। প্রাথমিক অবস্থায় ১৪ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও পরবর্তীতে এই সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে। সেইভাবেই পরিকল্পনা করে কাজ এগোচ্ছে বিমানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
সূত্র জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল থেকে উড়োজাহাজটি নিয়ে আসবেন একজন দেশীয় বৈমানিক। সঙ্গে একজন বোয়িং এর বৈমানিক থাকবেন। এরপর প্রথম কমার্শিয়াল ফ্লাইট পরিচালনা করবেন দুজন দেশীয় বৈমানিক।
২০০৮ সালে বিমান চারটি ড্রিমলাইনারসহ মোট ১০টি বোয়িং উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক উড়োজাহাজ নির্মাতা কোম্পানি বোয়িং এর সঙ্গে। চুক্তি অনুযায়ী এরই মধ্যে তারা বোয়িং ৭৭৭ ৩০০ ইআর এর চারটি এবং বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এর দুটি সহ মোট ৬টি উড়োজাহাজ বিমানকে সরবরাহ করেছে। ড্রিমলাইনারের দ্বিতীয় উড়োজাহাজটি নভেম্বরে এবং বাকি দুটি আসবে আগামী বছরের (২০১৯) নভেম্বরে।