আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি, চলছে ডিমওয়ালা দেশি মাছ শিকার

, জাতীয়

কান্ট্রি ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 04:41:27

নড়াইল: মাছের ডিম ছাড়ার চলতি মৌসুমে নড়াইলের নদ-নদীগুলো থেকে অবাধে ডিমওয়ালা মাছ ধরা হচ্ছে। সরকার আইনের মাধ্যমে এসব ডিমওয়ালা মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে। অথচ একশ্রেণির অসাধু জেলেরা বছরের পর বছর আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ডিমওয়ালা মাছ ধরে বিক্রি করছে হাট-বাজারে। এ কারণে এখানে বিলুপ্তির পথে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। 
 
জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গোপন যোগসাজসে বেআইনকে বৈধ করে এসব ডিমওয়ালা মাছ ধরা হচ্ছে। আর এ কাজটি বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকায় নড়াইলের নদ-নদীগুলো থেকে কমপক্ষে ২০ প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। 
 
সাধারণত নদ-নদী খাল-বিলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাসের মধ্যে ডিম ছাড়ে। ডিম ফুটে যেসব রেনু বের হয় পরবর্তীতে সেগুলো বড় হয়ে প্রকৃতিতে মাছের ভারসাম্য রক্ষা করে। অথচ কৌশলে এসব ডিমওয়ালা মাছ ধরা হচ্ছে। আর যেগুলো রক্ষা পাচ্ছে সেসব মাছের ডিম ফুটে বের হওয়া রেনুও নতুনভাবে আক্রমণের শিকার হয়। এক শ্রেণির অবৈধ রেনু সংগ্রহকারীরা এসময় নদ-নদী খাল-বিল থেকে রেনু পোনা সংগ্রহে নেমে পড়ে। রেনু পোনা সংগ্রহের জন্য পাতলা জাল, বেউচি জালসহ বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হয়। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল সংগৃহীত বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেনু থেকে শুধুমাত্র কাঙ্ক্ষিত মাছের রেনু পোনা আলাদা করে বাকি প্রজাতিগুলোর রেনু পোনা অযত্নে যেখানে সেখানে ফেলে দেয়ায় সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। 
 
মৎস্যজীবীরা জানায়, ১৫/২০ বছর আগেও নড়াইলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি, নবগঙ্গা, চিত্রা ও কাজলা নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। অথচ বছরের পর বছর ধরে ডিমওয়ালা মাছ ধরা ও রেনু পোনা নষ্ট করার কারণে এসব নদ-নদী থেকে দেশি মাছ সরপুঁটি, ভেদা, পাবদা, টেংরা, টাকি, পুঁটি, শিং, মাগুর, কৈ, খলিসা, বাউশ, কালবাউশ, ভেইশ, চাপিলাসহ কমপক্ষে ২০ প্রজাতির মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। 
 
এদিকে নড়াইলে সর্বত্রই অবৈধ ডিমওয়ালা মাছ ও রেনু পোনা শিকারিদের তৎপরতা চলছে। কালিয়া ও সদর উপজেলায় ডিমওয়ালা মাছ ও রেনু পোনা শিকারির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। নড়াইল সদর উপজেলার কাজলা-আফরা নদীতে আফরা গ্রাম থেকে তুলারামপুর পর্যন্ত এবং চিত্রা নদীর সিংগাশোলপুর থেকে গোবরা পর্যন্ত ও কালিয়া উপজেলার নবগঙ্গা নদীর বড়দিয়া থেকে বারইপাড়া পর্যন্ত এলাকা হতে ডিমওয়ালা মাছ ও রেনু পোনা সংগ্রহের কাজ চলছে। নড়াইল জেলার বিভিন্ন এলাকার অসাধু মৎস শিকারিরা প্রতি বছরই বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত এসব এলাকা থেকে ডিমওয়ালা মাছ ধরে থাকে। এসব মাছ প্রকাশ্যে হাট-বাজারগুলোতে বিক্রি করা হলেও কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
 
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত) এস এম এনামুল হক বলেন, ‘লোকবলের অভাবে প্রয়োজনীয় অভিযান চালাতে পারছি না। তবে ডিমওয়ালা মাছ ধরা বন্ধের জন্য জেলার বিভিন্ন এলাকায় জেলেদের ও স্থানীয় সাধারণ লোকজনকে সচেতন করতে মৎস্য বিভাগ প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।’
 
 

এ সম্পর্কিত আরও খবর