রহমতের নগরীতে উল্টাপাল্টা করলে সর্বনাশ!

, জাতীয়

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 12:59:21

সৌদি আরব (মদিনা) থেকে "আমার দেখা প্রায় ১'শ ব্যবসায়ী মদিনা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্র শহর এই মদিনা। মুসলমানদের শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওযা ঘিরে বছরজুড়েই ব্যস্ত এই শহরে প্রবাসীরা গড়ে তুলেছিলেন নানা ধরনের ব্যবসা বানিজ্য। একটা সময় ব্যবসা জমজমাট করেও শেষ অবধি তারা টিকে থাকতে পারেন নি। সব কিছু গুটিয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে।

কারণ তারা সঠিকভাবে,নীতি নিয়ে ব্যবসা করেন নি।দ্রুত বেশি লাভ করতে গিয়ে ব্যবসায় গড়বড় করেছেন।হয়তো মানুষকে ঠকাতে চেয়েছেন।ফলাফল ব্যবসায় কোন বরকত পাননি।এটা একটা দৃষ্টান্ত। আর সেটা মাথায় রেখেই আমি ব্যবসা পরিচালনা করি।আলহামদুলিল্লাহ, যেখানে হাত দিয়েছি, সেখানেই বরকত পেয়েছি। মানুষের আস্থা ও সন্তুষ্টি অর্জন করেছি"- মদিনায় নিজ কার্যালয়ে বসে বার্তা২৪.কমকে এমনটিই বলছিলেন সালাহউদ্দিন সোহেল (৩২)।

৬২২ খ্রিষ্টাব্দে অনুসারীদের নিয়ে মহানবী মক্কা থেকে মদীনায় আগমন বা হিজরতের পর হযরত মুহাম্মদ (সা) নির্মাণ করেছিলেন "মসজিদে নববী"। অন্যতম সেই বৃহৎ মসজিদের চারপাশে বাংলায় চোখ ধাঁধানো সাইনবোর্ডের ছড়াছড়ি। প্রবাসীদের কেউ এখানে হোটেল,কেউ বা রেষ্টুরেন্টে কেউ বা রকমারী খেঁজুর,অনেকেই আবার বোরকাসহ নানা ধরনের ব্যবসা খুলে নিজেরাই গড়ে তুলেছেন ভিন্ন আরেক বাংলাদেশ।

মাত্র ১৭ বছর আগে সামান্য ক্লিনার হিসেবে এ দেশে এসেছিলেন সোহেল।সঙ্গী ছিলো পরিবারের অসীম দারিদ্রতা। সেই মানুষটি আজ রহমতের এই নগরীতে বেশ কয়েকটি হোটেল ও নামকরা একাধিক অভিজাত রেষ্টুরেন্টের ছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসা করছেন।নিজের সফলতায় প্রবাসীদের মাঝেও গড়ে তুলেছেন অনন্য অবস্থান। নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার জয় নারায়নপুর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সালাহউদ্দিন সোহেল। ২ ভাই ২ বোনের মধ্যে সবার বড়।

মসজিদ নববীর কাছে বাংলাদেশী মার্কেট এলাকায় অভিজাত "মোহাম্মদীয়া হোটেল" নামের বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্টে বসেই কথা হয় সোহেলের সাথে। এই যে ঈর্ষনীয় সাফল্য। এর মূলমন্ত্র কি? এক কথায় আদর্শ। আরেকটু গভীর ভাবে বলতে গেলে সততা আর কঠোর পরিশ্রম। এই বরকতের নগরীতে কেউ যদি ঈমানের সাথে সততা নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেন তবে কেউ শূন্যহাতে ফিরবে না এই পূণ্যভূমি থেকে। এটা এখানকার সাধারণ বিশ্বাস।

"আমি কিন্তু এখনো সাধারণ একজন ক্লিনার। প্রয়োজনে নিজেই নেমে পড়ি কোমড় বেঁধে। রেষ্টুরেন্টে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজে। কারণ, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। মদীনায় দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা আসেন।আগে এখানে মান সম্পন্ন কোন খাবারের হোটেল ছিলো না। আমি পরিবর্তনের সূচনা করেছি মাত্র।এখান অনেকেই আমাকে অনুসরণ করছেন।এটাই আমার প্রাপ্তি - জানান সালাহউদ্দিন সোহেল।

২০০১ সালে শ্রমিক হিসেবে মদিনায় আসেন তিনি।মাত্র ১২'শ রিয়াল বেতনে ক্লিনার হিসেবে কাজ নেন মদিনার বদরুদ্দিন সুপার মার্কেটে। টানা ১০ ঘন্টার কাজ। তারপরও বাড়তি আয়ের আশায় খন্ডকালীন কর্মী হিসেবে কাজ নেন একটি ক্যান্টিনে।সেখানে ৬ ঘন্টার কাজে বানাতে হতো স্যান্ডউইচ আর বার্গার।

সেই মানুষটি এখন সাফা ডায়মন্ড গ্রুপ নামের শিল্প পরিবার খুলে পরিচালনা করছেন সাতটি হোটেল,একটি বাংলাদেশী ও একটি পাকিস্তানী রেষ্টুরেন্ট।পাশাপাশি আরো ভিন্ন ধরনের ব্যবসা। যেখানে কাজ করেন ১৩ জন সৌদি,১২ জন পাকিস্থানী ও ৭০জন বাংলাদেশী। এ ভাবেই প্রবাসে নিজের সফলতার আলো ছড়াচ্ছেন এই প্রবাসী।

এ সম্পর্কিত আরও খবর