‘পাখি সব করে রব, রাতি পোহাইল’ এই ছড়ার মতোই একটা সময় পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙত সবার। তবে পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ায় সেই দৃশ্যপট এখন আর নেই। আর তাই বিলুপ্তপ্রায় পাখিদের ফিরিয়ে আনার জন্য দরকার নিরাপদ নিবাস, পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করা।
এমন ভাবনা থেকেই পাখির নিরাপদ নিবাস গড়ে তুলতে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার গাছে গাছে ঝুলানো হয়েছে মাটির হাঁড়ি। উপজেলার একটি পৌরসভা ও চারটি ইউনিয়নে গত ৩৯ দিনে আট হাজার পাখির নিরাপদ আবাসন স্থাপন কার্যক্রম চালানো হয়েছে।
পাখির প্রতি এমন ভালোবাসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন ‘অভ্যুদয়’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। আর কাজর পেছনের কারিগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ কামাল। তারই উদ্যোগে ‘পাখি বাঁচাও, পরিবেশ বাঁচাও’ স্লোগানকে সামনে রেখে ওই সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা উপজেলা জুড়ে চালিয়ে যাচ্ছেন পাখির নিরাপদ নিবাস তৈরির কাজ। গত ৪ আগস্ট এই কর্মসূচির অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান।
জানা গেছে, পাখির বংশবিস্তার বৃদ্ধি, জীববৈচিত্র ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখিদের বাঁচাতে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন গাছে হাঁড়ি ঝুলিয়ে নিরাপদ আবাসন স্থাপন করে যাচ্ছেন সেচ্ছাসেবীরা। পর্যায়ক্রমে বাকি আরও সাতটি ইউনিয়নে এ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
অভ্যুদয়ের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার জুনায়েত হোসেন রিপেল বলেন, ‘আমাদের বৈচিত্রময় বাংলাদেশ দিন দিন পাখি শূণ্য হয়ে পড়ছে। পাখি আমাদের সমাজের অত্যন্ত উপকারী একটি প্রাণি। কিন্তু এরা সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। বিষয়টি আমাদের ইউএনও স্যার উপলব্ধি করতে পেরেছেন।’
সংগঠনটির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান সুমন বলেন, ‘আমাদের সদস্যরা খুবই আনন্দের সঙ্গে কাজটি করছে। পাখির জন্য কিছু করতে পেরে নিজেদেরও গর্বিত মনে করছি। পুরো উপজেলায় ২০ হাজার হাঁড়ি বাধার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’
স্থানীয় শিক্ষক ও সমাজকর্মী শফিকুল ইসলাম খাঁন বলেন, ‘আমাদের দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখির গুরুত্ব অপরিসীম। এত বৃহৎ পরিসরে মহৎ এ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।’
ব্যতিক্রমী এ কাজের উদ্যোক্তা ভালুকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ কামাল বলেন, ‘দিন দিন আমাদের দেশের বন-জঙ্গল মারাত্মকভাবে উজাড় হচ্ছে। তাই পাখির বংশবিস্তার বৃদ্ধি, জীববৈচিত্র ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই উপজেলাজুড়ে গাছে গাছে ও নির্জন স্থানে পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল স্থাপনের এ পরিকল্পনা। আর এ কঠিন কাজটি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘অভুদ্যয়’র সদস্যরা। আমাদের আশা, গাছে পাখির এই হাঁড়ির বাসা বাঁধায় আগামী বছর ভালুকায় শালিক, টিয়া, চড়ুই ও ঘুঘুর সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।’