আবরারকে পেটানোর কক্ষে চাপাতি ও স্ট্যাম্প

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-31 19:06:30

সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ মুজাহিদের মৃত্যু ঘটনার রহস্য ঘনিভূত হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, রোববার (৬ অক্টোবর) দিবাগত রাতে বুয়েটের শের-ই বাংলা হলের ২০১২ নম্বর কক্ষে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরারকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা৷ পরে হলের নিচতলা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এদিকে, শেরে বাংলা হলের ওই কক্ষে যান আবরারের ঢাকার বসবাসরত স্বজনরা। সেখানে তারা স্ট্যাম্প, চাপাতি সদৃশ স্টিলের চাকু দেখেছেন বলে জানান। ওই রুমে রক্তের ছোপ ছোপ দাগও রয়েছে বলে জানান তারা।

আবরারের ব্যবহৃত মোবাইল ও ল্যাপটপ পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করছেন তার স্বজনরা।

আরও পড়ুন: আঘাতেই আবরারের মৃত্যু

সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুর ১টায় আবরারের মামাতো ভাই আবু তালহা রাসেলের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি সকাল ৬টায় ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে আসি। ওখান থেকে ৭টায় আবরারের হলে যাই। সেখানে আবরারকে মারা হয়েছে। আমি সেখানে গিয়ে দেখি একটা চাপাতি, বেশ কিছু ভাঙা ও ভালো স্ট্যাম্প আর মদের বোতল। আমি ছবি তুলতে চাইলে আমার সঙ্গে থাকা পুলিশ সদস্যরা বাধা দেয়।’

আবরারের আপন মামা মোফাজ্জল হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমরা যখন আবরারকে ঢামেক মর্গে দেখি তখন তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখি। শরীরের প্রায় সব জায়গায় মোটা মোটা ও লালচে আঘাতের চিহ্ন আছে। আবরার যে রুমে থাকে সেখানে গিয়ে তার ল্যাপটপ ও ব্যাবহারের মুঠোফোন খুঁজলে সেগুলো পাইনি। কে বা কারা নিয়েছে সেটাও বলতে পারছি না।’

আরও পড়ুন: আবরারের মৃত্যু: জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২ ছাত্রলীগ নেতা আটক

সিসিটিভি ফুটেজ দেখেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা হল প্রভোস্টের কাছে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে তিনি প্রথমে অস্বীকৃতি জানান। পরে চাপাচাপি করলে দেখাতে রাজি হন। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেখায়নি।’

এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আবরারের মামা মোফাজ্জল হল প্রোভোস্টের সঙ্গে কথা বলতে তার কক্ষ্যে অবস্থান করছেন।

আবরারের স্বজনরা জানিয়েছেন, আবরারের মৃত্যুর খবর এখনো তার বাবা-মা জানেন না। তবে কোনো একটা সমস্যা হয়েছে এমনটা জানিয়ে আবরারের বাবা বরকুতুল্লাহকে ঢাকায় আসতে বলা হয়েছে। তার বাবা কুষ্টিয়ার পিটিআই রোড থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: আবরারের শেষ ফেসবুক স্ট্যাটাস!

উল্লেখ্য, বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরারে রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (৬ অক্টোবর) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) খান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, সকালে কয়েকজন সহপাঠী অচেতন অবস্থায় আবরারকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা আছে।

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন জানান, সোমবার ভোরে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছেন তারা। মধ্য রাতের দিকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আবরারের পায়ে এবং হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

আবরার কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডের বাসিন্দা মো. বরকত উল্লাহর ছেলে। বরকত উল্লাহ ব্র্যাকের নিরীক্ষক কর্মকর্তা আর আবরারের মা রোকেয়া খাতুন একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক।

এদিকে, আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন পুলিশ ও অন্য শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের মধ্যে বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুস্তাকিন ফুয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর