হজে অব্যবস্থাপনায় জিরো টলারেন্স নীতি জেদ্দা হজ মিশনের

, জাতীয়

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-30 18:23:19

সৌদি আরব (জেদ্দা) থেকে: আর মাত্র ১ মাস পর ঢাকা থেকে শুরু হবে হজফ্লাইট। এবার হজপালন করতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৭ হাজারসহ সৌদি আসছেন ১ লাখ ২৭ হাজার ১শ’ ৯৮ জন।

নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে হজপালন নিশ্চিত করতে আগাম প্রস্তুতি শুরু করেছে সৌদি আরবের বাংলাদেশ হজ অফিস। দিনরাত ২৪ ঘন্টা অফিস খোলা রেখে প্রাথমিকভাবে হজ এজেন্সিগুলোকে প্রয়োজনীয় সেবা দিচ্ছে এই মিশন।

হজযাত্রীদের সঙ্গে অনিয়ম ও প্রতারণা ঠেকাতে আগেভাগেই কোমড়বেঁধে নেমেছে জেদ্দার হজ অফিস।

জেদ্দার কাউন্সেলর (হজ) মো. মাকসুদুর রহমান বার্তা২৪.কমকে জানান, বাংলাদেশ থেকে আসা নারী হজযাত্রীরা আমার কাছে ‘মা’। এ ছাড়া সন্মানিত সকল হজযাত্রীদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে ধর্ম মন্ত্রণালয় এখানে সার্বক্ষণিক কাজ করছে। সৌদি আরবে হজে আসা বাংলাদেশিদের সংখ্যা বিশ্বে চতুর্থ।

হজ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের আগাম প্রস্তুতির বিষয়টি এখানে প্রশংসিত হয়েছে।

ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের যে বৈঠক ও চুক্তি হয়েছে, সেখানে আমাদের আগাম ব্যবস্থাপনা আর তৎপরতাকে স্বাগত জানিয়েছে সৌদি আরব।

বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীর কোটা ১০ ভাগ বাড়ানোর অনুরোধ করেছি আমরা। সেই প্রস্তাব বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে সৌদি হজ মন্ত্রণালয়। হজযাত্রীদের সঙ্গে অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার ব্যাপারে আমাদের নীতি- জিরো টলারেন্স। সৌদি আরবের হজ মন্ত্রণালয়ের অবস্থানও বেশ কঠোর।

তাদের পরিদর্শন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গতবার ৪৭টি এজেন্সিকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি আমরা ৬'শ ৩৫টি এজেন্সির মধ্যে ১শ' এজেন্সির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এবারও ৫শ'২৮টি এজেন্সিকে আমরা কড়া বার্তা দিয়েছি, হজযাত্রীদের সঙ্গে কোনো ধরনের অনিয়ম বরদাশত করা হবে না।

জনসংখ্যার অনুপাতে ইন্দোনেশিয়া,পাকিস্তান ও ভারতের পর হজযাত্রীর সংখ্যায় আমরা এখানে চতুর্থ বৃহত্তম দেশ।

‘অন্যান্য দেশ যেভাবে হজযাত্রীদে গাইড করে আমাদের তা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। সৌদি আরব এসে অনেকেই গাইডদের পরামর্শ মানতে চান না, নিজেদের মতো চলতে চান; বিপত্তি দেখা দেয় তখনই।’ বলছিলেন জেদ্দার কাউন্সেলর (হজ) মো. মাকসুদুর রহমান।

জনপ্রশাসনের অষ্টম ব্যাচের মেধাবী এই কর্মকর্তা আগে ছিলেন কাতারে। সততা ও একাগ্রতায় তাকে সমীহ করেন এখানকার কমিউনিটির নেতাসহ দেশটির মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

এখানে যোগদানের পর থেকেই হজযাত্রীদের হয়রানি, তাদের সঙ্গে প্রতারণা ও অনিয়মের কারণগুলো নিজ তাগিদেই অনুসন্ধান করেন তিনি।

অতীতে এজেন্সির প্রতিনিধির (মোনাজ্জেম) দায়িত্ব পালন না করায় কিংবা তাদের অবহেলায় যাতায়াত, আবাসন ও খাবারসহ নানা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে হজযাত্রীদের।

হাজীদের ক্রুটিপূর্ণ,চুক্তিহীন বা মানহীন বাড়িতে রাখা, এক বাড়িতে অতিরিক্ত হাজী রাখা এবং মানব পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে তার সুপারিশেই বাতিল করা হয় অসংখ্য এজেন্সির লাইসেন্স।

হজে আসার আগে হজযাত্রীদের পুলিশ ভেরিভিকেশন নামের "হয়রানি’ তুলে দেওয়া হয় তারই পরামর্শে।

আরবি ভাষায় অত্যন্ত পারদর্শী হওয়ায় কোনো দোভাষী ছাড়াই তিনি সরাসরি কথা বলেন সৌদি আরবের বিভিন্ন মন্ত্রণলয়ের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।

যে কারণে সৌদি সরকারের হজ মন্ত্রণালয়ের মনোভাব তিনি যেমন সহজেই বুঝতে পারেন, তেমনি বোঝাতে পারেন সৌদিতে অবস্থানকালীন সময়ে হাজীদের প্রয়োজনীয় চাহিদার কথাও। বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টিও। আর এভাবে তিনি অন্যদের তুলনায় একটু বাড়তি সুবিধা আদায় করতে পারেন সহজেই।

হজ গাইড সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা এক অর্থে ইমাম সাহেবের মতো। তাদের এ দেশে আসার আগে নূন্যতম তিনটি বিষয় সম্পর্কে ধারনা থাকা অত্যন্ত জরুরি।

প্রথমত: এখানকার পথঘাট চিনতে হবে, হজের রীতি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে। একইসঙ্গে আরবি ভাষা জ্ঞানও থাকতে হবে- নচেৎ হজযাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হবে।

৭ জন স্থায়ীসহ বর্তমানে ১২ জনের জনবল দিয়েই জেদ্দার হজ মিশনের অধীনে চলছে মক্কা ও মদিনার অফিস। হজ মওসুমে হজযাত্রীদের সেবায় চিকিৎসক, নার্স, আইটি বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ সহস্রাধিক গাইড নিয়োগ চূড়ান্ত করেছে মন্ত্রনালয়। সেই ছক ধরেই সমন্বয় সাধন করে ব্যস্ত সময় পার করছে এখানকার হজ মিশন। জেদ্দা, মক্কা ও মদিনায় বাংলাদেশের হজ অফিস দিনরাত ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকছে। হাজীদের জন্যে বাড়িভাড়া ছাড়াও সৌদি সরকারের নিয়মানুযায়ী দেশের বৈধ হজ এজেন্সির মোনাজ্জেমরা (হজ এজেন্সির মনোনীত প্রতিনিধি যিনি সৌদি আরবে দাপ্তরিক কার্যাবলী করবেন) সৌদি আরবের মোয়াল্লেমদের সঙ্গে সমন্বয়ের কাজটিই করছেন এই হজ মিশনের মাধ্যমে।

জাতীয় হজনীতির আলোকে হজ এজেন্সিগুলোকে হজযাত্রীদের হজের আরকান, সৌদি আরবের আইন কানুন, ভ্রমণের নিয়ম- কানুন, নাগরিক জ্ঞান,ব্যাগেজ রুল প্রভৃতি বিষয়ে নিজ উদ্যোগে জানার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন জেদ্দায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি কাউন্সেলর (হজ) মো. মাকসুদুর রহমান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর