রোহিঙ্গা ভোটার: ইসির ১৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-29 21:31:43

মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার অপচেষ্টায় নির্বাচন কমিশনের ১৫ জনের মতো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম। অভিযুক্তদের বেশির ভাগই বিভিন্ন অপরাধে চাকরিচ্যুত বলেও জানান তিনি।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সাইদুল ইসলাম।

ইসি মূল সার্ভার সম্পূর্ণ সুরক্ষিত আছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকেই না জেনে বলছেন—ইসির সার্ভারে রোহিঙ্গা ভোটার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু ইসির মূল সার্ভারে আগামী ২৪ জানুয়ারির পূর্বে ঢোকার সুযোগ নেই। কেননা, আইন অনুযায়ী-মূল সার্ভারে তথ্য সন্নিবেশ করার আগে ১ জানুয়ারি খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়। এরপর দাবি-আপত্তি নিয়ে নিষ্পত্তি করা হয়। আর ২৪ জানুয়ারির পর আবারও যাচাই করে মূল সার্ভারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তাই চলমান হালনাগাদে রোহিঙ্গারা টেম্পোরারি সার্ভারে ঢুকেছে। ৬১ জনের মতো আমরা চিহ্নিত করেছি।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল বলেন, আমরা ফাঁদ পেতে একটি চক্রকে ধরতে সক্ষম হই। সামরিক বাহিনীতে আমরা যেটা অ্যামবুশ বলি। এতে আমাদের ডাবলমুরিং থানা নির্বাচন অফিসের কর্মচারী জয়নালকে প্রথমে চিহ্নিত করা হয়। এরপর অন্যদের চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সংখ্যাটা ১৫ জনের বেশি হবে না।

তিনি বলেন, যারা এই অপচেষ্টার সঙ্গে জড়িত তাদের বেশির ভাগ ইসি থেকে পূর্বে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। তারা ইসির বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করতেন। আমরা ইতিমধ্যে আমাদের সব উপজেলা কর্মকর্তা এবং যারা আমাদের লোকবল সাপ্লাই দেয় তাদের বলেছি—পূর্বে চাকরিচ্যুতরা যেন ভোটার তালিকার কাজে কোনোভাবে সম্পৃক্ত হতে না পারে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলাম বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা নির্দেশনা দিয়েছেন—জিরো টলারেন্স এগেইনস্ট করাপশন। তাই আমরা শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছি। ইসি কর্মকর্তা-কর্মচারী কিংবা পূর্বে যারা কাজ করেছেন তাদের কেউ জড়িত কিনা সেটা দেখা হচ্ছে। আমরা চাকরিচ্যুতদের ওপর কঠোর নজরদারি চালানোর জন্যও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে বলব। রোহিঙ্গাদের ভোটার করার অপচেষ্টায় যেই জড়িত হোক না কেন আমরা সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব। ফৌজদারি মামলা কিংবা বিভাগীয় মামলাও করব। এছাড়া অন্য যে কোনো সংস্থার কেউ যদি জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধেও সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এনআইডি তথ্যভাণ্ডার সুরক্ষিত রাখার জন্য যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার আমরা সব পদক্ষেপ নেব।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রবাসে যখন আমরা ভোটার করব, তখনও রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করা হবে। চট্টগ্রামে ইতিমধ্যে যারা ভোটার হয়েছেন তাদের মধ্যে কেউ রোহিঙ্গা আছে কিনা সেটাও দেখা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ইসির সিস্টেম ম্যানেজার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানান, আগামীতে কেউ যাতে রোহিঙ্গাদের টেম্পরারি সার্ভারেও যুক্ত করতে না পারে, সেজন্য সকল কর্মকর্তার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে দিয়েছি। এছাড়াও সার্ভারে ঢোকার জন্য ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) মেসেজের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ইসির এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) আবদুল বাতেন বলেন, ৬১ জনের মধ্যে আমাদের বিশেষ তদন্ত কমিটি একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়। যার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের এক কর্মচারীর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর