বঙ্গোপসাগরের ইলিশের ভাগ পাবে নেপাল-ভুটান

ঢাকা, জাতীয়

খুররম জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-25 08:28:46

শুধু বাংলাদেশের মতো সমুদ্রঘেঁষা দেশই নয় নেপাল-ভুটানের মতো সমুদ্রহীন (ল্যান্ডলক) দেশও বঙ্গোপসাগরের ইলিশের ভাগ পেতে যাচ্ছে।

সমুদ্রসীমায় মাছ ছাড়াও যেকোনো খনিজ আহরণ হলে তা ন্যায্যতার ভিত্তিতে সকল দেশে ভাগ করে দিতে হবে। এ আলোকে সমুদ্রসীমা আইনের খসড়া তৈরি করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট। যা উপযুক্ত সময়ে সংসদে উত্থাপন করবে সরকার।

মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব মোহাম্মাদ খোরশেদ আলম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'জাতিসংঘের সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশন-১৯৮২ এর আলোকে এ খসড়াটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমুদ্রসীমা আইন-১৯৭৪ সংশোধন করা হয়েছে । এ আইনে মাত্র ৯টি ধারা ছিল। যা ছিল সম্পূর্ণ দেশীয় প্রেক্ষাপটকে চিন্তা করে। কিন্তু এখন সময় এসেছে এটি আন্তর্জাতিকভাবে চিন্তা করার। নতুন আইনে প্রায় শতাধিক ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে।'

মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, খসড়া আইনে সমুদ্রসীমা এলাকা, সংলগ্ন অঞ্চল, কৃত্রিম দ্বীপ, মহীসোপান (তলদেশ), জলরাশি (অর্থনৈতিক অঞ্চল), মৎস্য ও খনিজ সম্পদের উৎস, দেশি-বিদেশি নৌ চলাচলের আওতাসহ বিভিন্ন বিষয় আইনের মাধ্যমে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যমান ২, ৩, ৪ (১) (২), ৫, ৬, ৭, ৮, ৯ ও ১০ ধারার আংশিক বা পুরোপুরি বিলুপ্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা দিয়ে সমুদ্রসীমা এলাকা, সংলগ্ন অঞ্চল, কৃত্রিম দ্বীপ, মহীসোপান (তলদেশ), জলরাশিসহ (অর্থনৈতিক অঞ্চল) প্রতিটি বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, যা বিদ্যমান সমুদ্রসীমা আইনে উল্লেখ ছিল না।

খোরশেদ আলম বলেন, 'আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন অনুসারে এক দেশের জলযান বিশেষ কিছু বিধি-নিষেধ সাপেক্ষে অন্য দেশের আঞ্চলিক জলসীমার মধ্য দিয়ে চলাচল করতে পারবে। ১৯৭৪ সালের আইনে এটি ছিল না।'

১৯৮২ সালে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন বিষয়ক জাতিসংঘ কনভেনশনের অনুচ্ছেদ অনুসারে, সকল রাষ্ট্রের জলযান আঞ্চলিক সমুদ্রসীমার মধ্য দিয়ে নির্দোষভাবে অতিক্রম করতে পারবে। এক্ষেত্রে কোথাও থামা, নোঙর কিংবা বন্দরের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে না। কিন্তু সাধারণ নৌ চলাচল প্রসঙ্গে অথবা গুরুতর বিপর্যয় কিংবা দৈব দুর্বিপাকের কারণে অথবা বিপন্ন দুর্দশাগ্রস্ত কোনো ব্যক্তি, বিমান বা জাহাজকে সাহায্য করার জন্য যতটুকু প্রয়োজন কেবল ততটুকুই বিবেচনাধীন রয়েছে এই আইনে। এছাড়া যতক্ষণ পর্যন্ত অতিক্রমণ উপকূলীয় রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলা অথবা নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তা নির্দোষ বলে গণ্য হবে।

তবে কোনো বিদেশি জাহাজ যদি আঞ্চলিক সমুদ্রে এমন কোনো কাজ করে যা উপকূলীয় রাষ্ট্রের শান্তি শৃঙ্খলা অথবা নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর হয়, সেক্ষেত্রে নির্দোষ বলে বিবেচিত হবে না।

সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করতে জাতিসংঘ সমুদ্র কনভেনশন আইন (আনকজ) ১৯৮২ সালে প্রণীত হয়। ১৯৯৫ সালে ভারত এই কনভেনশনে স্বাক্ষর করে। এছাড়া মিয়ানমার ১৯৯৬ সালে এবং বাংলাদেশ ২০০১ সালে স্বাক্ষর করে। এই আইন অনুযায়ী একটি দেশ তার বেজলাইন হতে ১২ নটিক্যাল মাইল (১ নটিক্যাল মাইল সমান ১ দশমিক ৮৫২ কিলোমিটার) রাষ্ট্রীয় সমুদ্রসীমা এবং আরও ১৮৮ নটিক্যাল মাইলসহ মোট ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে। মহীসোপানের আরও ১৫০ নটিক্যাল মাইল যোগ করে (২০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত মহীসোপান) সম্প্রসারিত অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা সর্বোচ্চ ৩৫০ নটিক্যাল মাইলের বেশি হবে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর