এনআইডি’র সার্ভার সুরক্ষায় চালু হচ্ছে ওটিপি

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-24 11:49:54

রোহিঙ্গা ভোটার ঠেকাতে এসএমএস ভিত্তিক ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) পদ্ধতি চালু করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য ভান্ডারের (সার্ভার) সুরক্ষায় নতুন এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি। আগামী রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) থেকে ওটিপি পদ্ধতি চালু হচ্ছে।

ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের খসড়া ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা ভোটার শনাক্ত হওয়ার পর দেশব্যাপী সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ইসি এই পদ্ধতি প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি চালু হওয়ার পর ওটিপি কোড ছাড়া ইসির কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী ভোটার তথ্যভান্ডারে ঢুকতে পারবেন না। এমনকি ইসির কাজের সঙ্গে যুক্ত কোনো ল্যাপটপ এই কোড ছাড়া খোলা যাবে না। নির্ধারিত এই কোড থানা নির্বাচন অফিসারের কাছে যাবে, সেটি ইনসার্ট দেওয়ার পরই কাজ করা যাবে। এ ক্ষেত্রে যতবার তথ্য ভান্ডারে প্রবেশ করবে, ততবার ওটিপির প্রয়োজন হবে। ফলে বিষয়টি থানা নির্বাচন আফিসারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

রোহিঙ্গারা যেন ভোটার তালিকায় আসতে না পারে সেজন্য গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে সাতদিন সার্ভারে নতুন ভোটারদের তথ্য আপলোড করার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তিতে সতর্কতা জারি করে সব আঞ্চলিক, জেলা ও থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছে কমিশন। আর সার্ভার ও ডেটা সেন্টারগুলোকে সুরক্ষিত করার জন্য ৫১৮টি উপজেলার সমস্ত সার্ভার এবং যতগুলো ল্যাপটপ আছে সেগুলোর পাসওয়ার্ড এবং সিকিউরিটি ফিচার বদলে দেওয়া হয়েছে। ফলে নতুনভাবে নতুন পাসওয়ার্ড সেখানে চালু করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের সার্ভার ইসির কাছে, ভোটার হওয়ার সুযোগ নেই

কমিশন সূত্র আরও জানায়, ডেটা এন্ট্রি অপারেট, প্রুফ রিডার বা উপজেলা/থানার কোনো কর্মকর্তা সার্ভারে ঢুকতে চাইলে তাকে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে হবে। ফিঙ্গার প্রিন্ট অনুমোদিত হলে তাকে পাসওয়ার্ড দিতে হবে। পাসওয়ার্ড অনুমোদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা/থানা নির্বাচন কর্মকর্তার ই-মেইল অথবা মোবাইল ফোনে ওটিপি যাবে। সেই ওটিপি সংশ্লিষ্ট কর্মী বা কর্মকর্তা দিলে তবেই ওই ব্যক্তি সার্ভারে ঢুকতে পারবেন। পূর্বে শুধুমাত্র পাসওয়ার্ড দিয়ে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর বা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সার্ভারে প্রবেশ করতে পারতেন।

এ বিষয়ে ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক সাইদুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমরা সকল সার্ভার এবং ল্যাপটপ থেকে আগের পাসওয়ার্ড বদলে দিয়েছি। আগের সিকিউরিটি পাসওয়ার্ড নিয়ে যাতে, কোনো কাজ করতে না পারে সেজন্য এটা করেছি। ল্যাপটপে ঢুকতে হলে ফিঙ্গার প্রিন্ট তো দিতে হবে পাশাপাশি আগামী রোববার থেকে নতুন ভোটার তালিকা হালনাগাদে প্রয়োজন হবে ওটিপি। থানা নির্বাচন অফিসার ওটিপি ছাড়া ঢুকতে পারবে না। ওটিপি ছাড়া কোনো ল্যাপটপ আর ওপেন করতে পারবে না। ওপেন করতে হলে থানা নির্বাচন অফিসারের কাছে ওটিপি যাবে। সেই ওটিপি ইনসার্ট দিবে। এছাড়া আমাদের অন্যান্য যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার সেটা কিন্তু আমরা নিয়েছি।’

আরও পড়ুন: রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট প্রাপ্তিতে সহযোগিতায় কাউকে ছাড় নয়

তিনি আরও বলেন, ‘যারা বাইরে থেকে বিভিন্ন ল্যাপটপ ব্যবহার করছে তারা কারা, তাদের খুঁজতে আমরা সন্দেহের দৃষ্টি সবদিকে রাখছি। এখানে আগে যারা কাজ করতো তারা কারা বা যাদের চাকরি চলে গেছে দুর্নীতির দায়ে, তারা কোথায় কি করছে সে বিষয়েও আমরা নজর রাখছি। আমাদের নির্বাচন কমিশনে যারা ডাটা এন্ট্রির কাজ করছে তাদের বাড়ি কোথায় তারা কে কি করছে। দু- একজনের জন্য আসলে অর্গানাইজেশনের এত বড় বদনাম আমরা সহ্য করতে পারব না।’

এদিকে, রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবে ভোটার না হতে পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। অঞ্চলভিত্তিক যে মনিটরিং টিম রয়েছে তারা যাতে সজাগ থাকে সেজন্য তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিশেষ এলাকার ভোটার আবেদন প্রাইমারি সার্ভারে যাচাই-বাছাই করে রোহিঙ্গা সার্ভারে যাচাই বাছাই করা হবে। এরপর যাচাই-বাছাই করা হবে মেইন সার্ভারে।
বাংলাদেশে আসা ১১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গার আঙুলের ছাপ ও তথ্য নিয়ে ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা সার্ভার প্রস্তুত করা হয়েছে। ফলে কেউ চাইলেই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে না বলে মনে করছেন ইসির কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের একটি তথ্য ভান্ডার (সার্ভার) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আছে। এখন যারা নতুন ভোটার হবেন, শুদ্ধতা যাচাইয়ের জন্য তাদের তথ্য ওই রোহিঙ্গা–সার্ভারের সঙ্গে মেলানো (ক্রস ম্যাচিং) হবে। রোহিঙ্গা–সার্ভারে তথ্য ঢোকানোর (ইনপুট) পর কোনো ব্যক্তির দেওয়া তথ্য সঠিক প্রমাণিত হলে, তবে সেই তথ্য জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সার্ভারে ঢোকানো হবে। এরপর তিনি বাংলাদেশের ভোটার হিসেবে বিবেচিত হবেন, পাবেন স্মার্ট কার্ড।’

ইসির কর্মকর্তারা জানান, এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের খসড়া ভোটার তালিকায় ৬১ জন রোহিঙ্গা চিহ্নিত হয়েছে। যাচাই করতে গিয়ে দেখা গেছে, এদের ভোটার তথ্য ফরমের একটি পাতা স্ক্যান করে সার্ভারে আপলোড করা হয়েছে। অন্য পাতাটি আপলোড করা হয়নি। চূড়ান্ত খসড়া তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে নেওয়া রোহিঙ্গাদের সার্ভারে ঢোকানো হলে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর