ইয়ংমেনসে দিনে লেনদেন হতো ৫ কোটি টাকা!

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-09-01 22:41:53

রাজধানীর ফকিরাপুলে ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ১৪২ জনকে গ্রেফতার করেছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। ক্লাবটির মালিক যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকেও গুলশান-২ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্র বলছে, আট মাস ধরে অবৈধভাবে চলা ক্লাবটির ক্যাসিনোতে দিনে প্রায় ৫ কোটি টাকারও বেশি হাতবদল হতো। আর ক্লাবের প্রতিদিনের জমার হিসাব খাতা বলছে, দিনে কমপক্ষে ২০-২৫ লাখ টাকা আয় করতো ক্লাবটি।

ক্লাব সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ক্লাবটিতে একটি ভিআইপি রুম আছে। যেখানে ৮ জন একসঙ্গে ফ্লাশ গেম নামের জুয়া খেলতে পারত। সেই আসরেই টাকার লেনদেন বেশি হতো। তাছাড়া ৮টি জুয়ার টেবিল, ৬টি ইলেকট্রনিক ক্যাসিনো মেশিন ছিল।

পুরো ক্লাবটি সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরাতে নজরদারি রাখা হতো। ক্লাব সংশ্লিষ্ট নয় এমন কেউই সেখানে সহজে প্রবেশ করতে পারত না। 

ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

দোতলাবিশিষ্ট ওই ক্লাবের নিচতলায় ছিল ক্যাসিনো। উপরে টিনশেডে তৈরি কক্ষে থাকতেন ক্যাসিনোর কর্মচারীরা। ক্লাবটিতে প্রবেশের মুখেই রয়েছে খালেদের অফিস। দিনে নির্দিষ্ট এক সময়ে খালেদ সেখানে আসতেন।

এই অভিযান সম্পর্কে র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, জুয়া খেলার আসর থেকে ২০ লাখ ৪৪ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। অভিযানে ক্লাব থেকে মদ, ইয়াবা ও সিগারেটসহ ১৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, এর মধ্যে ১৬ জন ক্লাবের স্টাফ। গ্রেফতারকৃত অন্য ১৩১ জনের বিরুদ্ধে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত এক বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন। বাকি ১০ জনকে ৬ মাস করে। অভিযান শেষে ক্লাবটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে।

সূত্র বলছে, শুধুই ইয়ংমেনসে না, মতিঝিল, ফকিরাপুল এলাকায় কমপক্ষে ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করতেন খালেদ। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায়ী সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদা তুলতেন। আর কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালেই তার ডাক পড়ত খালেদের টর্চার সেলে।

ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

যুবলীগ এই নেতার রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের উল্টো দিকে ইস্টার্ন কমলাপুর টাওয়ারে একটি টর্চার সেল আছে।

জানা যায়, টর্চার সেলে নির্যাতনের জন্য অনেক ধরনের যন্ত্রপাতি রয়েছে। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে টর্চার সেলে নিয়ে নির্মমভাবে তার ওপর নির্যাতন চালানো হতো।

এ বিষয়ে অভিযান পরিচালনাকারী র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল শফিউল্লাহ বুলবুল বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘খালেদের একটি টর্চার সেল পাওয়া গেছে। এখানে যা দেখেছি লোম শিউরে ওঠার মতো অবস্থা। কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে তাকে এখানে এনে নির্যাতন করা হতো।’

উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় যুবলীগ নেতাদের অপকর্ম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারপরই বুধবার যুবলীগ এই নেতার ক্যাসিনোতে অভিযান ও তাকে গ্রেফতার করা হয়।

আরও পড়ুন: সন্ধান মিলেছে খালেদের টর্চার সেলের, আছে নির্যাতনের চিহ্ন

এ সম্পর্কিত আরও খবর