অসাধু বন্ড ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বিজিএমইএ

, জাতীয়

মাহফুজুল ইসলাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-22 08:04:09

বন্ডেড লাইসেন্সের অপব্যবহার করে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। হাতে নাতে ধরার পর অপরাধ স্বীকারও করেছে। এমন অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে দেশে ও বহির্বিশ্বে সমগ্র বন্ডেড ব্যবসায়ীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

কিন্তু তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যাতে জরিমানা কিংবা বন্ড লাইসেন্স বাতিল করতে না পারে সে জন্য বোর্ডের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

তারপরও এনবিআর ৬৬টি প্রতিষ্ঠানকে কর ফাঁকির অভিযোগে ৩২৪ কোটি ৭৩ লাখ ৪১ হাজার ৭২০ টাকা জরিমানা করেছে। এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর, ঢাকা ও চট্টগ্রাম কাস্টম বন্ড কমিশনারেট এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ মিলে প্রতিষ্ঠানগুলোর বন্ডেড অপব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছে।

পোশাক শিল্প রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিপরীতে বন্ড সুবিধা অপব্যবহারের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিজিএমইএ-কে গত ১৯ আগস্ট চিঠি দিয়েছে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট।

এতে বলা হয়, বন্ড লাইসেন্সপ্রাপ্ত পোশাক রফতানিকারক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর বন্ড সুবিধায় আমদানিকৃত কাঁচামালের ব্যবহার সঠিক নিশ্চিতকল্পে প্রতিরোধমূলক কর্মকাণ্ডে বিজিএমইএ’র সহযোগিতা কামনা করছি। এর প্রেক্ষিতে বিজিএমইএ কেবল প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছেন কার কি অবস্থা।

অবৈধভাবে বন্ডের ব্যবহারের দায়ে সবচেয়ে বেশি জরিমানা করা হয়েছে গাজীপুরের তুরাগের মাসটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজকে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর প্রতিষ্ঠানটিকে ১২০ কোটি টাকা জরিমানা করেছে। মাসটেক্স অনৈতিক ব্যবসার কথা স্বীকার করে এনবিআরকে টাকাও পরিশোধ করেছে। একইভাবে আইম্যান টেক্সটাইলকে ৮৫ কোটি ১২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। প্রতিষ্ঠানটিও দোষ স্বীকার করে টাকা পরিশোধ করছে। 

এভাবে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের টিম, পূর্ব রামপুরার আশিয়ানা গার্মেন্টস লিমিটেডকে ৩৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, টঙ্গীর কেপরি এ্যাপারেলস লিমিটেডকে ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা, খিলক্ষেত নামাপাড়ার নাফ ফ্যাশন লিমিটেডকে ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা রামারবাগের মিশুয়ার হোসিয়ারী মিলসকে ১৭ কোটি ১২ লাখ টাকা, চট্টগ্রামের চট্টশরী রোড, গাজী শাহ লেনের এ্যাপারেলস অপসনকে ৬৮ লাখ টাকা, চট্টগ্রামের লালপাড়ার ফ্যাশন ক্রিয়েট লিমিটেডকে এক কোটি ৪৬ লাখ টাকা, চট্টগ্রামের কালুরঘাটের ডিকে এ্যাপারেলস লিমিটেডকে ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা, ক্যাসিওপিয়া সোয়েটারসকে ৮ লাখ টাকা এবং জেএবি লিমিটেডকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো সব মিলিয়ে ২৭৮ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানার টাকাও পরিশোধ করেছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস: গাজীপুরের পূর্ববাগবাড়ীর এম এইচ এ্যাপারেলস লিমিটেডকে ৩৫ লাখ টাকা, গাজীপুরের কোনাবাড়ির এআরএইচ নীট কম্পোজিট লিমিটেডকে ১৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

একইভাবে টঙ্গীর ক্রস লাইন নীট ফেব্রিক্স লিমিটেডকে ৮ লাখ, আশুলিয়ার ডিজাইনার ফ্যাশনকে এক লাখ ৫০ হাজার, চট্টগ্রামের সরাইপাড়া গার্মেন্টস হোম (প্রা:) লিমিটেডকে দেড় লাখ, রাজধানীর মগবাজারের গ্রীন ওয়ার্ল্ড ফ্যাশনস লিমিটেডকে ১০ লাখ ৫০ হাজার, টঙ্গীর ভাদামের নিট বাজার (প্রা.) লিমিটেডকে ৫০ হাজার, গাজীপুরের ডেগেরচালার মেসার্স লেলফ ইনভেটিভ লিমিটেডকে ২ লাখ, গাজীপুরের মেসার্স স্প্যারো এ্যাপারেলকে ২ লাখ, চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর মেসার্স সুফী অ্যাপারেল লিমিটেডকে ৭৫ লাখ, ময়মনসিংহের ভালুকার মেসার্স সুপ্তি সোয়েটার লিমিটেডকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অপরাধ স্বীকার করে জরিমানা পরিশোধ করে মালামাল খালাস করে নিয়েছে। 

ঢাকা কাস্টম হাউস: মেরিনা এ্যাপারেলস লিমিটেড ও টিএন্ডজেড এ্যাপারেলসকে ২৫ হাজার করে ৫০ হাজার এবং ওসিস ফ্যাশন লিমিটেডকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো জরিমানার টাকা পরিশোধ করে মালামাল খালাস করে নিয়েছে।

কাস্টম বন্ড কমিশনারেট ঢাকা, ১৬টি প্রতিষ্ঠানকে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ১৬ হাজার ৩৭৬ টাকা জরিমানা করেছে।

এগুলো হচ্ছে-রাজধানীর দক্ষিণখানের নীপা নীট ওয়্যারস, সাভারের মেসার্স রেজা ফ্যাশন লিমিটেড, মোহাম্মদপুরের মেসার্স সেলিব্রেটি এক্সপোর্ট গার্মেন্টস ও মেসার্স সেলিব্রেটি এক্সপোর্ট গার্মেন্টস লিমিটেড, কচুক্ষেতের মেসার্স সিনটেক্স টেক্সটাইল, এস এ্যাপারেলস লিমিটেড, মিরপুরের মেসার্স কার্ডিয়াল ডিজাইন লিমিটেড, গাজীপুরের কুনিয়ার মেসার্স ট্রাউজার ওয়ার্ল্ড লিমিটেড, কাশিমপুরের মেসার্স ইউটা নিটিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেড।

এছাড়াও রয়েছে বটম গ্যালারী, মেসার্স আল ইসলাম টেক্সটাইল লিমিটেড, মেসার্স করতোয়া এ্যাপারেলস, মেসার্স কায়সার সানকো জেবিটেক্স, টিএনজেড এ্যাপারেলস, এপেক্স ল্যানজারিং, জেনোসিস ফ্যাশনস এবং লেভেন্ডার গার্মেন্টস লিমিটেড।

এর মধ্যে মেসার্স কার্ডিয়াল ডিজাইন ও মেসার্স সিনটেক্স টেক্সটাইল লিমিটেডের বন্ডেড অপব্যবহার খুঁজে পেয়েছে অডিট কমিটি। আর বাকি ১৪ প্রতিষ্ঠানের বন্ডেড অপব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছেন প্রিভেন্টিভ কার্যক্রম টিম। তাদের কাছে প্রতিষ্ঠানগুলো অপরাধ স্বীকার করে জরিমানার টাকা পরিশোধ করেছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে ৪৪ কোটি ৫ লাখ ৩০ হাজার ৩৪৪ টাকা জরিমানা করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রামের টিকেএম গার্মেন্টস লিমিটেড, আদিল এ্যাপারেলস, ফোকাস এ্যাপারেল, মনটেক্স এ্যাপারেলস, আজমাইন ফ্যাশন, প্রিটি এ্যাপারেলস, সার্ক গার্মেন্টস, ফ্যাশন ক্রিয়েট এ্যাপারেলস, এক্সিয়ম ফ্যাশন, ওসেন এ্যাপারেলস, টিম এ্যাপারেলস, এ অ্যান্ড বি আউটওয়্যার, টিম এ্যাপারেলস, কর্ণফুলী ইপিজেডের হংকং ডেনিম, ভেনকট, বেসটেক এবং বিডি ডিজাইন লিমিটেড।

সার্বিক বিষয়ে বিজিএমইএ’র সভাপতি ড. রুবানা হক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, এনবিআর ও আমরা এক সঙ্গে কাজ করতে চাই। সব সেক্টরের কিছু অসাধু লোক থাকে। এই সেক্টরে ১-২ শতাংশ ব্যবসায়ী রয়েছে, যারা এই কাজ করছে। আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

তিনি আরও বলেন, গার্মেন্টস পণ্য সম্পূর্ণভাবে রফতানিমুখী। সুতরাং দেশের কোন কারখানা নিয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হলে ক্রেতারা অর্ডার বাতিল করে। দেশের উন্নয়নে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।

উল্লেখ্য,বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ এসব প্রতিষ্ঠানের সদস্য বাতিল করলে বন্ড লাইসেন্স সুবিধাসহ সরকারের বেশি কিছু সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর