শিশুর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে ২০ শতাংশ

ঢাকা, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-27 00:00:28

দেশে নারী ও শিশু নির্যাতন আইন থাকলেও তার সঠিক প্রয়োগ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনরা। শিশু অধিকার ফোরামের এক জরিপ অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৫৩ জন শিশু নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিমাসে গড়ে সহিংসতার শিকার হয়েছে ৪৫৭ জন শিশু।

গত বছর প্রতিমাসে নির্যাতনসহ শিশু সহিংসতার সংখ্যা ছিল ৩৮১ জন। একবছরের ব্যবধানে শিশুর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে ২০শতাংশ।

বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদ ভবনের আইপিডি সম্মেলন কক্ষে বর্তমান শিশু অধিকার পরিস্থিতি ও করণীয় নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় উত্থাপিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ এ সভার আয়োজন করে।

শিশু অধিকার বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন- ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। এছাড়া বক্তব্য দেন- সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, আব্দুল মজিদ, আছলাম হোসেন সওদাগর, সংসদ সদস্য ওয়াশিকা আয়শা খানম, অ্যারোমা দত্তা প্রমুখ।

আইনি প্রতিকারের তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে ধর্ষণের শিকার ৯০ শতাংশ শিশু এবং কিশোরী। আইনি প্রতিকার-ঢাকা জেলার পাঁচটি নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রায় ১৫ বছরে ২০০২-২০১৬ সাল পর্যন্ত ধর্ষণ সংক্রান্ত ৫ হাজার মামলার নিষ্পত্তি হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশের সাজা হয়েছে।

শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করার পরামর্শ দিয়েছেন বক্তারা। তারা শিশু নির্যাতনে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন।

বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের চাইল্ড রাইটস গর্ভমেন্ট প্রকল্পের ম্যানেজার রাশেদা আক্তার উপস্থাপিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৬৯৭ জন শিশু। ধর্ষণ চেষ্টা করা হয়েছে ১০৪ জনকে। যৌন হয়রানি হয়েছে ১৬১ জন, হত্যা করা হয়েছে ২৮৫ জন, আত্মহত্যা করেছে ১৩৩ জন, অপহরণ করা হয়েছে ১৪৫ জন, নিখোঁজ হয়েছে ১০৪ জন ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৯২ জন শিশু। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৩৯০ জন এবং পানিতে ডুবে মারা গেছে ৩৯৫ জন শিশু।

শিশু অধিকার বিষয়ে রাশেদা আক্তার বলেন, ‘৭ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুরাই বেশি নির্যাতনের শিকার। আইন ও সালিম কেন্দ্রের ৫ বছরের পরিসংখ্যান বলছে, ধর্ষণের শিকার ৯০শতাংশই শিশু এবং কিশোরী। ঢাকা জেলার পাঁচটি নারী নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ১৫ বছরে (২০০২-১৬) ধর্ষণ সংক্রান্ত ৫ হাজার মামলার পরিস্থিতি অনুসন্ধানে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার মধ্যে সাজা হয়েছে মাত্র ৩ শতাংশের।’

শিশু অধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, অগ্রগতি এবং যেসব বিষয়ে মনোযোগী হওয়া দরকার সেগুলোকে চিহ্নিত করে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ছয়টি আর্ন্তজাতিক সংস্থা, তিনটি নেটওর্য়াক ও একটি বেসরকারি সংগঠনের সমন্ধয়ে ২০১৩ সালে এই জোটের যাত্রা শুরু হয়।

জোটের পক্ষ থেকে শিশু অধিকার বিষয়ক সংসদীয় কমিটি ককাসের কাছে বিদ্যমান পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য একটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, ‘আমরা সবাই ঐক্যমত হয়ে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে শিশু শ্রমমুক্ত দেশ গড়তে চাই। এজন্য বছরব্যাপী শিশু অধিকার নিয়ে আরও বেশি অ্যাডভোকেসি প্রোগ্রাম করতে হবে। তিনি চর এলাকার উন্নয়নের জন্য পৃথক চর উন্নন বোর্ড গঠনের দাবি করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিশু অধিকারের বিষয়টি তৃণমূলে পৌঁছাতে না পারলে কোনো সফলতা আসবে না। বছরজুড়ে উপজেলা পর্যায়ে অ্যাডভোকেসি সভা করতে হবে। গ্রামের কর্মজীবী মায়ের সন্তানের জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার চালু করতে হবে। শিশু আইন সংশোধনের জন্য অংশীজনদের সঙ্গে বসে সুপারিশগুলো সংশ্লিষ্টদের কাছে তুলে ধরতে হবে।’

শিশু অধিকার বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু বলেন, ‘শিশু নির্যাতন রোধে পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। সবাই নিজেদের নিয়ে যেভাবে ভাবে, দেশ নিয়ে ভাবলেই এসব নির্যাতন বন্ধ হবে। এজন্য ককাস থেকে সবধরনের সহায়তা করা হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর