শর্ট সার্কিট থেকে আগুন, ক্ষতি ৩ কোটি ৭৭ লাখ

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-30 18:07:27

বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনের বেজমেন্টে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। ইসির তদন্ত কমিটির রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে। এ ঘটনায় আর্থিকভাবে তিন কোটি ৭৭ লাখ ২১ হাজার ১৬৯ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জানা গেছে, নির্বাচন ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে গঠিত ছয় সদস্যদের কমিটির প্রধান ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমানের সভাপতিত্বে মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) প্রথম সভা, বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকালে তৃতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভার শেষে কমিটি ইসি সচিব মো. আলমগীরের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

আগুনে ইভিএম কন্ট্রোল ইউনিট ৫৯টি, ব্যাটারি ৪৭টি, ব্যালট ৭৮৯, মনিটর এক হাজার ২৩৩ হাজার, ক্যাবল ৫৫৭ সেট, মনিটরের ব্যাটারি ৬৪টি, ল্যাপটপ একটি ও বার কোড স্ক্যানার দুইটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কমিশন সূত্র জানায়, বেজমেন্টের যে কক্ষটিতে আগুন লেগেছিল সেখানে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বারবার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেছে- কক্ষটির একাংশে বৈদ্যুতিক লাইনে স্পার্কিং হচ্ছে। বেশ কয়েকবার স্পার্কিং হয়ে আগুন ও ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। এরপর আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সেখানে থাকা ইভিএমের ক্যাবল ও মনিটর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর মেশিনগুলো আগুন নেভানোর সময় ছিটানো পানিতে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে, 'অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। আমরা আজ কমিশনের সচিবের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেছি। তদন্তে ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিট থেকেই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের বিষয়টি উঠে এসেছে। আর্থিকভাবে ৩ কোটি ৭৭ লাখ ২১ হাজার ১৬৯ টাকার ক্ষতি হয়েছে।'

ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি উইং) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, 'বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত, সিসিটিভি ফুটেজসহ সব কিছু যাচাই বাছাই করে সেটিই উঠে এসেছে।'

ঘটনার পর ইসি সচিব মো. আলমগীর জানিয়েছিলেন, ভবনটিতে সাড়ে চার হাজার ৫০০ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) রয়েছে। বেজমেন্টেও কিছু ইভিএম ছিল। আগুন লাগার ফলে সেখানে থাকা কিছু ইভিএমের ক্ষতি হয়েছে। তবে বেজমেন্টে কত ইভিএম মেশিন ছিল, তা পরে জানা যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেছিলেন।

রংপুর-৩ আসনে উপনির্বাচনের জন্য আনা চার হাজারের বেশি নতুন ইভিএম ঘটনার আগের দিন বেজমেন্টে সংরক্ষণ করা হয়। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সেখানে থাকা কিছু ইভিএমের মনিটর ও ক্যাবল পুড়ে যায়। আগুন নেভাতে ছিটানো পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিছু মেশিনেরও।

ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেছুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটির ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটিতে আরও রয়েছেন- জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, গণপূর্তের ই/এম বিভাগ-৮ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হালিম, গণপূর্ত বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহ ইয়ামিন-উল-ইসলাম ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের প্রতিনিধি। কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন ইসির সহকারী সচিব (সেবা-২) খ ম আরিফুল ইসলাম।

কমিটিকে তিনটি বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল। সেগুলো হলো- অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার কারণ ও উৎস নির্ণয়; অগ্নিকাণ্ডের ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ (আর্থিক মূল্যসহ) এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের অগ্নিকাণ্ড যাতে না ঘটে সে সংক্রান্ত সুপারিশ প্রণয়ন।

এর আগে মোখলেছুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ইসির বেজমেন্টে প্রায় সাড়ে চার হাজার ইভিএম ও ব্যালট ইউনিট ছিল। এগুলো বিভিন্ন কক্ষে রাখা হয়। তবে বেজমেন্টে তালা লাগানো ছিল, এটি অতি সুরক্ষিত কক্ষ। সর্বক্ষণ মনিটরিং করা হয়। এখানে কোনো মানুষ অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা নিষিদ্ধ। সুতরাং এটা বলা যায়- বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকেই শুধু মাত্র আগুন লাগতে পারে।

প্রসঙ্গত, গত রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের বেজমেন্টে রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সোয়া ১১টার দিকে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ করে প্রায় দেড় ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

আরও পড়ুন: নির্বাচন কমিশন ভবনে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১২ ইউনিট

এ সম্পর্কিত আরও খবর