সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে কাঁদলেন, কাঁদালেন ইয়াসীর

রংপুর, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রংপুর | 2023-08-26 06:19:56

রংপুর-৩ আসনে উপ-নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসীর।

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর মহানগরীর সেন্ট্রাল রোডস্থ জাতীয় পার্টির দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ব্যাখ্যা তুলে ধরেন এস এম ইয়াসীর।

কান্না জড়িত কণ্ঠে তৃণমূল পর্যায় থেকে রাজনীতিতে উঠে আসা এই নেতা বলেন, ‘জাতীয় পার্টি করতে গিয়ে আমি অনেকবার মৃত্যুর মুখে পতিত হয়েছিলাম। অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমি ভোট করতে চাইনি। সবার অনুরোধ, উৎসাহ ও পরামর্শে আমি নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু এর মধ্যে আমাকে মৃত্যুর হুমকি দেয়া হয়েছে। মেরে ফেলার ভয় দেখানো হচ্ছে।’

ইয়াসীর বলেন, ‘আমিতো নিজের ইচ্ছাতে ভোট করতে চাইনি। আমিতো লুটপাট করতে দলে আসেনি। আমার তো টাকা পয়সা নেই। আমি ভোট করলে কীভাবে জিতব? তাই নির্বাচন থেকে সরে যাচ্ছি। আমাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি ভোট করতে পারলাম না। আমাকে তারা ভোট করতে দিল না। হয়তো আমাকে আর দলেও রাখবে না। আমাকে দল থেকে বের করে দেবে। আমি এরশাদ স্যারকে ভালোবেসে এই দলে এসেছিলাম। কর্মী থেকে আজ আপনাদের নেতা হয়েছি। তারপরও কর্মীদের নিয়েই আমি থাকতে চাই।’

দলমত নির্বিশেষে সবার মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। এ সময় জাপার কেন্দ্রীয় এই নেতা বলেন, ‘আমি কোনো দিন নির্বাচনের পক্ষে ছিলাম না। আমার কোনো স্বপ্নও নেই। আমি কর্মী হিসেবে দলে আজ এই অবস্থানে এসেছি। আমাকে দলের নেতা-কর্মীরাই ভোট করতে উৎসাহিত করেছিলেন। অটো শ্রমিক, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা, হকার্স সমিতি, হিন্দু সম্প্রদায় নেতারাসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে আমাকে নির্বাচনে অংশ নিতে বলা হয়েছিল। আমি সবার ভালোবাসা ও উৎসাহে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছিলাম। দলীয় মনোনয়ন ও নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় দলের নীতি নির্ধারকরা আমাকে মূল্যায়ন করেনি।’

তিনি বলেন, ‘আমি এরশাদ সাহেবের জন্য দল করেছি। আমি কারো কোনো ক্ষতি করিনি। যারা আমার ক্ষতি করেছে, আমি তাদেরও উপকার করেছি। আজ আমার মতো কর্মীর যদি মূল্যায়ন না হয়, তাহলে আর কোনো দিন কারো মূল্যায়ন হবে না।’

এ সময় তার কান্নায় সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। উপস্থিত নেতা-কর্মীরা তার চোখে অশ্রু দেখে নিজেরাও কাঁদেন। এতে পুরো কার্যালয়ে কান্নার রোল পড়ে।

উল্লেখ্য, জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে রংপুর-৩ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। ওই আসনে উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন এস এম ইয়াসীর। কিন্তু দলের চেয়ারম্যানের পদ, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা নির্ধারণ এবং রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদকে মনোনয়ন দেয়া নিয়ে নানা নাটকীয়তার কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি।

আগামী ৫ অক্টোবর রংপুর-৩ আসনে উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনীত রাহগীর আল মাহি সাদ ছাড়াও এরশাদের ভাতিজা সাবেক এমপি হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার কথা জানিয়েছেন। রংপুর সদর উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের ৯নং থেকে ৩৩নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৪২ হাজার ৭২ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ২১ হাজার ৩১০ জন এবং ২ লাখ ২০ হাজার ৭৬২ জন নারী ভোটার রয়েছে। ইভিএমের মাধ্যমে ১৭৫ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর