রংপুর-৩ আসন ঘিরে জাতীয় পার্টিতে চার বিভক্তি

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রংপুর | 2023-09-01 10:01:33

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া আসনটিকে ঘিরে শুরু হয়েছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। প্রার্থী নির্ধারণের বিষয়টি নিয়ে তৃনমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দল চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। চার ভাগের প্রত্যেকেই নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন।

নির্বাচনকে ঘিরে দলের মধ্যে এমন বিভক্তিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে সাধারণ ভোটার ও এরশাদ ভক্তদের মাঝে। তবে জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতাদের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সবকিছু্র সমাধান হবে। কোন্দল, দ্বন্দ্ব ও বিভেদ ভুলে লাঙল প্রতীক পাওয়া প্রার্থীর পক্ষেই জয় নিশ্চিত করতে মাঠে থাকবে সবাই।

আরও পড়ুন: রংপুর-৩ আসনে সাদ এরশাদই পাচ্ছেন লাঙ্গল

রংপুর সদর উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের ৯ থেকে ৩৩নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চারজন রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

এরমধ্যে রংপুর-৩ (সদর) আসনের উপ-নির্বাচনে সাদ এরশাদকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। সাদ ছাড়াও জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক শিল্পপতি এস এম ফখর উজ জামান জাহাঙ্গীর, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসীর ও এরশাদের ছোট ভাইয়ের ছেলে সাবেক এমপি হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফও মনোনয়ন কিনেছেন।

জাতীয় পার্টি, এরশাদ, বার্তা২৪
এরশাদের ভাতিজা সাবেক এমপি হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

এই চারজনের পক্ষে রংপুর জেলা ও মহানগরের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা প্রকাশ্যে আলাদা আলাদা অবস্থানে দাঁড়িয়েছেন।

এদিকে, মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসীর বলেন, 'হাই কমান্ডের নির্দেশে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। দল মনোনয়ন না দিলে তৃনমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে বসে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।'

আরও পড়ুন: ছাড় দিয়ে সমঝোতায় কাদের-রওশন

অন্যদিকে, সাদ এরশাদের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাফিউল ইসলাম সাফি। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‌'আমরা কেন্দ্র থেকে চূড়ান্ত হওয়া প্রার্থী সাদ এরশাদের মনোনয়ন সংগ্রহ করেছি। এনিয়ে দলের মধ্যে কোনো বিভেদ থাকার কথা হয়। তারপরও যদি দলের অন্য কেউ মনোনয়ন সংগ্রহ করে থাকেন, সেটা দলীয় ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।'

জাতীয় পার্টির মধ্যে এমন পৃথকীকরণে হতাশ সদর উপজেলার পালিচড়া এলাকার ভোটার মিলন মিয়া। তিনি নিজেকে এরশাদভক্ত দাবি করে বলেন, 'একটা দল থেকে এতগুলো নেতা ভোট করতে চাইলে কী অবস্থা হবে সেটা বোঝা দরকার। সকলে বসে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু তা না করে চারজন মনোনয়ন সংগ্রহ করেছে। আমাদের মতো সাধারণ ভোটারের কাছে বিষয়টি ভালো লক্ষণ না।'

জাতীয় পার্টি, জাপা, এরশাদ, বার্তা২৪
জাতীয় পার্টি মনোনীত সাদ এরশাদের পক্ষে জেলার নেতৃবৃন্দ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

রংপুর মহানগরের বড়বাড়ি দেওডোবা এলাকার যুবক হারুন অর রশিদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'প্রতিবারই ভোটের সময় এই দলের মধ্যে নানান রকম হাস্যকর ঘটনার জন্ম হয়। এটা রংপুরবাসীর জন্য দুঃখজনক। রংপুরের মানুষ আমরা এরশাদকে ভালোবেসে বারবার ভোট দিয়েছি। কিন্তু দলের নেতারা আমাদের আবেগ ভালোবাসা নিয়ে খেলা করে। তা না হলে এতগুলো প্রার্থী কেন মনোনয়ন সংগ্রহ করবে।'

আরও পড়ুন: মহাসচিব ‘কোন পক্ষে’ জানেন না জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান

এদিকে, স্থানীয় প্রার্থী ছাড়া বহিরাগত অপরিচিত ও কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দেয়া কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী মাঠে না থাকার ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য, রংপুর সিটির মেয়র ও মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজর রহমান মোস্তফা।

সাদ এরশাদের জয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই দাবি করে সিটি মেয়র বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘যারা তাকে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন। তাদেরকেই রংপুরে এসে মাঠে কাজ করতে হবে। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা সাদের সঙ্গে থাকবে না। আমি দলের নীতি নির্ধারকদের কাছে আহ্বান করব এমন একজনকে প্রার্থী করা হোক, যাকে স্থানীয়ভাবে সবাই জানেন, চিনেন এবং ভোট দেবেন।’

এরশাদ

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এর রংপুর জেলা সভাপতি আকবর হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'জাতীয় পার্টির দলীয় কোন্দল নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে রংপুর-৩ আসনের উপ-নির্বাচনটি তাদের দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অভ্যন্তরীণ মতপার্থক্য, দ্বন্দ্ব ও বিরোধ মেটাতে না পারলে নির্বাচনের ফলে বিপর্যয়ও ঘটতে পারে। যদিও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাতীয় পার্টিকে সমর্থন দিতে পারেন বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করছে।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর