ঘর গোছানো আর জাতীয় ঐক্যে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি

, জাতীয়

মুজাহিদুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-24 03:08:36

ঢাকা: বেশ কয়েক বছর ধরে জোটের বাইরে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যের চেষ্টা করছে বিএনপি। তার সুফল না মিললেও পুরোপুরি হতাশ নয় দলটি। কিন্তু সেই প্রচেষ্টায় কতটা সফল হবে তা নিয়ে এক ধরনের হতাশা দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিজেদের ঘর গোছাচ্ছে বিএনপি।

ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে বেশকিছু অসম্পূর্ণ কমিটি। এর আগে কয়েক দফায় চেষ্টা করেও সম্পন্ন করতে পারেনি দল পূণর্গঠনের কাজ। সিনিয়র নেতারা বলছেন, জুন-জুলাইয়ে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর কমিটি সম্পন্ন করা হবে। এতে করে একদিকে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি পাবে অপরদিকে নতুন কমিটি আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে ভুমিকা রাখবে।

দল পূণর্গঠন ও জাতীয় ঐক্যের মধ্য দিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায় করতে চায় বিএনপি। তবে জাতীয় ঐক্যের কথা যাদেরকে নিয়ে করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে আদর্শগত অমিল।

সূত্র বলছে, চলতি বছরের জুলাই মাসে দল পূণর্গঠন পক্রিয়া শেষ করতে নীতিগত সিদ্ধন্তে পৌছেছে নেতারা। এর সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবং তৃণমূলে সংগঠন পূণর্গঠনের দায়িত্বে রয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান।

একই সঙ্গে জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে ঐক্যমতে পৌছতে চায় দলটি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে বিকল্প ধারা সভাপতি ডা. অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ কয়েকজনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন। এমনকি সমমনা অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ হচ্ছে বলেও জানিয়েছে দলের একাধিক সূত্র।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তফ্রন্টের মুখপাত্র ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বার্তা২৪.কম কে বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো ফরমাল কথা হয়নি। বিএনপি নেতারা আলাদাভাবে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন এমনকি আমার সঙ্গেও। একটি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইটা করা উচিত।

জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ডা. অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী সম্প্রতি এক ইফতার মাহফিলে বলেছেন, এমন একটা শক্তি দরকার যে ওদিকেও কন্ট্রোল করতে পারে, এদিকেও কন্ট্রোল করতে পারে। তারা যদি উঠে আসতে পারে তাহলে দেশের স্থিতিশীল বজায় থাকবে। তবে তিনিও জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে বেশ কয়েকটি সভা সেমিনারে ইতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন।

অধ্যাপক বদরুদ্দোজার সঙ্গে কথা হয় বার্তা২৪.কম এর। তিনিও জানালেন আশার কথা। বললেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা আমরা প্রত্যাশা করিনা। নির্বাচনের পরে দেশে কোনো সহিংসতা, জ্বালাও পোড়াও যেনো না হয় তার জন্য একটা জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন। এমন একটি ঐক্য যে ঐক্য উভয় দিকে কন্ট্রোল করতে পারবে। যারা বিপথে হাঁটবে আমরা তাদের সঙ্গে নেই।

এদিকে, শনিবার (২ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তফ্রন্ট। নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য দলীয় সরকারের পরিবর্তে নির্দলীয় নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিমূলক সরকার গঠন করা দরকার বলেও মনে করে এই জোট।

তবে জামায়াতে ইসলামী ইস্যুতে জাতীয় ঐক্যে কিছুটা পিছুটান দেখা দিয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা বার্তা২৪.কম কে জানিয়েছে। জামায়াত যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে বিতর্কিত হওয়ায় অনেকের মধ্যে কিছুটা এলার্জি তো রয়েছেই। প্রকাশ্যে না বললেও মনে মনে এমনকি বিভিন্ন ফোরামে এই বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। জামায়াত নিয়ে যেহেতু অনেকের মধ্যে এলার্জি রয়েছে সেহেতু তাদেরকে বাইরে রেখে জাতীয় ঐক্যের পক্ষে মত দিয়েছে বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতারা।

তবে ২০ দলীয় জোট মনে করছে, নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখতে ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে রাজনৈতিক ঐক্য জরুরী। তাই যেকোনো শর্তে সমমনা দলগুলোর মধ্যে ঐক্য হওয়া সময়ের দাবি। তবে সেই ঐক্যে কারা থাকছে তা শীঘ্রই স্পষ্ট হবে বলেও দলের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা গণতন্ত্র পূণরুদ্ধারের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য গড়তে জাতীয়তাবাদী সকল শক্তিকে একত্রিত করার আহবান জানাচ্ছি। যারা গণতন্ত্র চাই তারা আমাদের সঙ্গে কাজ করবে বলে আমরা আশাবাদী। একইসঙ্গে দলের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করছি। সম্মিলিত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করে তাকে সঙ্গে নিয়ে জনগনের ভোটাধিকার রক্ষায় জনগনকে সঙ্গে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবো। এবং নির্দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবি আদায়ের মধ্য দিয়ে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা লাভ করবে এটাই হবে আমাদের লক্ষ্য।

এ সম্পর্কিত আরও খবর