মানসিক ভারসাম্য নেই সৌদি ফেরত অনেক নারীর

, জাতীয়

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | 2023-07-19 03:17:33

ঢাকা: ঝর্না আক্তার। স্বামীর প্রতারণার শিকার হয়ে বাপ-ভাইয়ের সংসারে বোঝা হতে চাননি। দালালের মাধ্যমে অন্য নারী শ্রমিকদের মতো স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন সৌদি আরবে। ভেবেছিলেন, নিজেও ভালো থাকবেন, বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিবেন উপার্জনের টাকা।

তিন মাসের মাথায় ঝর্নার স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়ে গত ২৫ মে দেশে ফিরলেন, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে। আত্মীয়-স্বজনদের চিনতে পারছিলেন না। ভারসাম্য হারিয়ে বাবা-মাকেও মারতেন ঝর্না।

দুই দিন হলো চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ। তবে একবারেই কথা বন্ধ করে দিয়েছেন। শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকেন।

গত দুই মাস ব্র্যাকের অধীনেই ঝর্নার মতো মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দেশে ফিরেছে ৬ জন সৌদি ফেরত নারী কর্মী। ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম থেকে পরিবারের তাদের পাঠানো হয়। অসুস্থ থাকায় কয়েকজনকে জাতীয় মানিসক স্বাস্থ্য ইনিস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়েছে। এদের মধ্যে দুই-একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ডিভোর্সী, বিধবা, সহায়-সম্বলহীন অধিকাংশ নারীই দালালের খপ্পরে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে পা বাড়ায়। নানামুখী অত্যাচারে স্বচ্ছলতার আশায় সৌদি আরবে যাওয়া এসব নারী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফিরছেন ‘পরিবারের বোঝা’ হয়ে। অসহায় এসব নারী সাময়িকভাবে অাত্মীয় স্বজনের অাশ্রয় নিলেও কতদিন থাকতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় রয়েই যায়!

ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির তথ্যমতে, ১৯৯১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দুই লাখ নারী কর্মসংস্থানের জন্য সৌদি আরবে গেছেন। নির্মমতার মুখে প্রতিমাসে গড়ে ২০০ নারী শ্রমিক দেশে ফিরছেন। গত ১০ দিনে চাকুরীর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে প্রতারণার শিকার বা নির্যাতনের কারণে দেড়শ নারী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন।

শুক্রবার (২৫ মে) সৌদি ফেরত ৪০ জন নারী দেশে ফিরে। এদের মধ্যে ফেরেন মা-বাবা হারা মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার মনোয়ারা বেগমও। মনোয়ারা এ বছরের ১৭ জানুয়ারি রিক্রুটিং এজেন্সি মার্চেন্ট ওভারাসীজ (আর এল-১১৬০) মাধ্যমে সৌদি আরব যান। মানসিক ভারসাম্য হারানো মনোয়ারা ভাইয়ের বাসায় রয়েছেন।

সাতক্ষীরার কলোরোয়ার মমতাজ বেগম নয় মাসে আগে সৌদিতে যান। নিয়মিত টাকাও পাঠাতেন পরিবারের কাছে। শুক্রবার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় দেশে ফেরেন। বর্তমানে তিনিও জাতীয় মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মমতাজের ভাই আফজাল বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার বোনের অবস্থা যে এত খারাপ বুঝতে পারি নাই। টাকা খরচ করে বিদেশে গেছে। সব কষ্ট সহ্য করে কাজ করে টাকা পাঠাতো। তার উপর এত অত্যাচার হয়েছে সেসব কিছুই বলে নি। শেষের দিকে আর সহ্য করতে না পরে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যায়। শরীর শুকিয়ে কাঠি হয়ে গেছে।

‘ডাক্তার বলেছে আরও কিছুদিন হাসপাতালে থাকতে হবে। সুস্থ হতে কিছুদিন লেগে যাবে। তবে তার মানসিক অবস্থা আর আগের মত ফিরবে কি-না সন্দেহ করেছেন ডাক্তাররা’, বলেন আফজাল।

এক সন্তান রেখে মমতাজের স্বামী পালিয়ে আবার বিয়ে করে। গরীব বাবার সংসারে বোঝা যাতে না হতে হয়- এজন্য দিতে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। তবে ভারসাম্যহীন অবস্থায় আবারও দরিদ্র বাবার সংসারে পড়েছেন।

ঝর্নার ভাই লোকমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'গরীবের সংসারে নিজেদের চলে না, টাকা পয়সা ম্যানেজ করে বিদেশে পাঠিয়েছি। এখন নি:স্ব বলা যায়। ভাগিনা অার বোন বৃদ্ধ বাবা-মা সব অামার ঘাড়ে।

মমতাজ ও ঝর্নাদের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২৬ বছর বয়সী হালিমাও সৌদি যাবার তিন মাসের মাথায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দেশে ফিরেন। গত দুই মাসে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দেশে ফিরেছেন ফরিদপুরের আমেনা ও আকলিমা। তারা দু'জনে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর