পারিবারিক বলয় থেকে মুক্তি চান জাপার তৃণমূল নেতারা!

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রংপুর | 2023-09-01 03:43:28

এরশাদ আছে, এরশাদ নেই। এই বিশ্লেষণে রংপুর-৩ আসনে উপ-নির্বাচনকে ঘিরে জমে উঠেছে ভোট প্রস্তুতি। মাঠে নেমেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) বেশ ক’জন তৃণমূল নেতা। পরিবার থেকেও মনোনয়ন দৌড়ে আলোচনায় আছেন এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ, ভাতিজা সাবেক এমপি হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, ভাতিজা মেজর (অব.) খালেদ আখতার, ভাগনি মেহেজেবুন্নেছা রহমান টুম্পা। তবে পারিবারিক বলয় থেকে মুক্ত হয়ে স্থানীয় পর্যায় থেকেই প্রার্থী চূড়ান্ত করার দাবি তৃণমূল নেতা-কর্মীদের।

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবর্তমানে এ আসনটিতে উপনির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থী নির্ধারণে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে দলটি। ব্যক্তি এরশাদের জনপ্রিয়তা আর রংপুরবাসীর আবেগে ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে ছিল। এখন এরশাদ নেই, পাল্টে যেতে পারে ভোটারদের আবেগ আর ভালোবাসার সমর্থনও। তাই পারিবারিকভাবে নাকি স্থানীয় পর্যায় থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে, তা নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে চলছে নানা বিশ্লেষণ।

এ নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদও আছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে। যদিও রওশন এরশাদ চাইছেন তারপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদকেই প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করতে। তবে তৃণমূলের দাবি আর সাদ এরশাদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে চিন্তিত গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

তৃণমূলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা নেই এমন বহিরাগত কাউকে নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্ত করলে বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে মনে করছেন জাতীয় পার্টির অনেক নেতাই। আর বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মনোনয়ন তালিকায় এগিয়ে থাকা জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। প্রার্থী চূড়ান্তে ভুল হলে দীর্ঘদিনের জয়ের ধারাবাহিকতা থেকে ছিটকে পড়বে দলটি।

এদিকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসীর, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক শিল্পপতি এস এম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও রংপুর জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক এমপি ও এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ স্থানীয় পর্যায়ে ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। ভোট প্রার্থনা, গণসংযোগসহ প্রচার প্রচারণায় এগিয়ে আছেন তৃণমূলের এই নেতারা।

এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ প্রচারণার মাঠে না থাকলেও এখন নিয়মিত রংপুর সফর করছেন। আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দলের মহাসচিবের সঙ্গে এখন তার সংখ্যতাও বেড়েছে। এ কারণে ঘুরে ফিরে সাদ এরশাদকে নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তৃণমূল নেতা-কর্মী ও এরশাদভক্তদের মাঝে। যদিও দলের মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার দাবি, দলের জন্য নিবেদিত, ত্যাগী ও গ্রহণযোগ্যতা আছে এমন নেতাকেই রংপুর-৩ আসনে প্রার্থী করার প্রস্তুতি চলছে।

মনোনয়ন প্রত্যাশী রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসীর বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘আমি তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে আসছি। দলের চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ অনেকেই আমাকে উপনির্বাচন করতে বলছে। তাই আমি প্রস্তুতি নিয়েছি। মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। আমার বাসা ঢাকায় নয়। আমি রংপুরের সন্তান, রংপুরেই থাকব। নির্বাচিত হলে স্যারের (এরশাদ) স্বপ্ন পূরণে কাজ করব।’

অন্যদিকে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, হাজী আব্দুর রাজ্জাক বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘রংপুরের সর্বস্তরের মানুষ উপনির্বাচনে লাঙ্গলের প্রার্থীকে জয়ী করবে। তারা আবারো ভোট দিয়ে প্রমাণ করবে এরশাদকে ভালোবেসে ছিলেন।’

স্থানীয় সিনিয়র সাংবাদিক রশীদ বাবু বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘পরিচিত প্রার্থী দিতে যদি জাতীয় পার্টি ব্যর্থ হয়, তাহলে এর মূল্যায়ন ও খেসারত দিতে হবে। এমনকি পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। তাই প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের দাবির প্রতি খেয়াল রেখে দলটিকে সতর্ক হতে হবে।’

গত ১৪ জুলাই এরশাদের মৃত্যুর পর শূন্য হয় রংপুর সদর উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের ২৫টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটি। আগামী ১১ অক্টোবরের মধ্যে এ আসনে উপনির্বাচন সম্পন্ন হবার প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

এদিকে গত সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ছয়টি আসনে জাতীয় পার্টি মাত্র দুটি আসনে জয় পেয়েছিল। টানা ২৮ বছর পর এবার এরশাদের অবর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ এ সদর আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে রাখা কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে দলের ভেতরে-বাইরে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর