রাজশাহীতে দুর্গাপূজার প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-08-28 14:47:10

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আগামী ৪ অক্টোবর থেকে এই পূজা শুরু হওয়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসেবে পূজা শুরু হতে এখনও দেড় মাস বাকি। অথচ প্রতিমা তৈরির কারিগররা এখন থেকেই দিন-রাত ব্যস্ত সময় পার করছেন।

রাজশাহী নগরীর মন্দির ও পাল বাড়িগুলো ঘুরে এমন চিত্র চোখে পড়েছে। আসন্ন দুর্গা পূজাকে সামনে রেখে নগরীর মিয়াপাড়ার ধর্মসভা, গণকপাড়ার বৈষ্ণবসভা, ঘোড়ামারা, শেখেরচক, কুমারপাড়া ও মিয়াপাড়া এলাকায় পুরোদমে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে।

কারিগররা বলছেন- অধিকাংশ কারিগরই ৫ থেকে ২০টি প্রতিমা তৈরির কাজ হাতে নিয়েছেন। দলবদ্ধভাবে এসব কাজ সম্পন্ন করবেন তারা। ফলে দেড় মাস আগে থেকেই ব্যস্ততার ছোঁয়া লেগেছে রাজশাহীর পাল বাড়িতেও।

তারা জানান, ঐতিহ্যগতভাবে রাজশাহীর নগরীর ও আশেপাশের উপজেলার বেশ কয়েক’টি বাড়ির লোকজন বাবা-দাদাদের আমল থেকে এই পেশার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। যার সংখ্যা ক্রমেই কমছে। ফলে যারা এখনও এই পেশায় টিকে আছেন, তাদের ওপর প্রতিমা তৈরির জন্য চাপ বাড়ছে। ফলে কারিগররা আগেভাগেই নেমে পড়েন কাজে। সঙ্গে রাখেন পরিবারের সদস্যদের। স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ সবাই মিলে এ কাজ সম্পন্ন করেন।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) সকালে নগরীর বেশ কয়েকটি মন্দিরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কাঠ-বাঁশ দিয়ে ফ্রেম তৈরি করে খড় (ধানের আউড়) দিয়ে সাজিয়ে কাঁদা-মাটি লাগানো হচ্ছে। কারও কারও প্রতিমা রূপ এসেছে। কারওটার আবার শুধুই কাঠামো দেখা যাচ্ছে। বাকি পড়ে আছে পোশাক ও গয়না পরানো।

২৫ বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন নগরীর কুমারপাড়ার সুধীর পাল। তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, হাতে এখনও এক মাসেরও বেশি সময় আছে। তবে প্রতিমা তৈরির প্রক্রিয়াটাই এমন যে, আপনাকে সময় নিয়ে কাজ করতে হবে। একদিনে ১২ ঘণ্টা কাজ করে আপনার কোনো লাভ হবে না। বরং টানা ১৫ থেকে ২০ দিনে প্রত্যেক দিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা কাজ করলে প্রতিমার রূপ সুন্দর হবে।

তিনি বলেন, ‘ভাদ্র মাস শুরু হয়েছে, অথচ এখন রাজশাহীতে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। হঠাৎ আকাশে মেঘ করে বৃষ্টি আসলে বাইরে থেকে প্রতিমা ঘরে তুলতে হচ্ছে। এতে সময় ও শ্রম দুটো যাচ্ছে।’

নগরীর আলুপট্টির কুমারপাড়া এলাকার প্রতিমা কারিগর গণেষ চন্দ্র পাল বলেন, ‘আমি আরও এক মাস আগেই প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছি। এবছর এখনও পর্যন্ত ২০টি প্রতিমা তৈরির অর্ডার পেয়েছি। সবগুলোর কাঠামো তৈরি করে মাটি লাগিয়ে রূপ আনা হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে ফিনিশিং শুরু করবো। আশা করি- পূজা শুরুর এক সপ্তাহ আগে ডেলিভারি করতে পারবো।’

এদিকে, বিগত বছরের তুলনায় এবার সবাই পারিশ্রমিক একটু বেশি নিচ্ছেন বলে জানান কারিগর এবং বিভিন্ন মন্দিরের পূজা উদযাপন কমিটির সদস্যরা। প্রতিমা ভেদে ২৫ থেকে ৮০ হাজার টাকা মজুরিতে অর্ডার নিচ্ছেন কারিগররা।

নগরীর গণকপাড়া মন্দিরের পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অরবিন্দ রায় বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, প্রতিমা তৈরির অর্ডার যত দেরিতে দেওয়া হয়, মজুরি ততই চড়া হয়। তাই এবার আগেভাগে প্রতিমা অর্ডার করেছি। তবে অন্যবার একই মাপের প্রতিমা তৈরিতে ৫৫ হাজার টাকা লাগলেও এবার কারিগররা চেয়েছিল ৭০ হাজার। আমরা কথাবার্তা বলে ৬২ হাজারে অর্ডার করেছি।

রাজশাহী হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার ঘোষ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, রাজশাহীর জেলায় প্রায় ৫০০ মন্দিরে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। আর রাজশাহী মহানগরীর এলাকায় পূজা উদযাপন করা হয় প্রায় ৮০টি মন্দিরে। তবে এবার এখনও সঠিক হিসাব আমাদের হাতে আসেনি।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে, তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে- তারা যেন নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। কারণ অনেক সময় প্রতিমা তৈরিকালে সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী প্রতিমা ভেঙে ফেলার ঘটনাও ঘটিয়ে থাকে। যাতে ধর্মীয় সম্প্রতি নষ্ট হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর