গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর দেশব্যাপী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় সরকার। এ ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয় বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, আপাতত গুটিয়ে থাকলেও তারা আদর্শিকভাবে বেশ শক্তিশালী এবং গোপনে কাজ করছে।
জানা গেছে, র্যাব, পুলিশ ও কমান্ডো অভিযানে ধ্বংস করা হয় একাধিক জঙ্গি আস্তানা। অভিযানে নিহত হয় অনেকে এবং গ্রেফতার করা হয় শত শত জঙ্গিকে। ফলে নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত অনেক জঙ্গি সংগঠন। তবে সম্প্রতি হঠাৎ আবারও সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে কয়েকটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের। সম্প্রতি রাজধানীসহ সারাদেশ থেকে গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের কাছ থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জানতে পেরেছে, গোপনে তারা আবার সক্রিয় হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ ও এপ্রিল মাসে গুলিস্তান এবং মালিবাগে পুলিশ বক্স ও পুলিশ ভ্যানে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। এসব ঘটনাকে জঙ্গিদের সক্রিয়তার আলামত হিসেবে দেখছেন গোয়েন্দারা। তাদের দাবি, জঙ্গি সংগঠনগুলো আগের মতো বড় নয়, তবে ছোট পরিসরে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এক থেকে পাঁচজন একত্রিত হয়ে তারা কাজ করছে। এই গ্রুপগুলোকে ‘লোন উলফ’ বা ‘উলফ প্যাক’ বলা হয়। তাদের টার্গেট পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি) সূত্রে জানা গেছে, তিন বছর পর হঠাৎ করে সক্রিয়তার পেছনে তাদের শক্তিশালী আদর্শিক শক্তি কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে। বিশেষ করে কথিত ‘জিহাদ’ বা জঙ্গিদের ভাষায় ‘হিজরত’ এর বিষয়টি জঙ্গিদের মাঝে কাজ করছে। আর এই শক্তিশালী আদর্শিক ভিত্তিকে কাজে লাগিয়ে বারবার জঙ্গিরা সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। সম্প্রতি কিছু আঞ্চলিক ও বহির্বিশ্বের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবং কথিত জিহাদি মতাদর্শকে কাজে লাগিয়ে জঙ্গিরা ছোট ছোট গ্রুপে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে।
সম্প্রতি জঙ্গিদের সক্রিয় হওয়ার বিষয়ে সিটিটিসির প্রধান ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি জঙ্গিদের ‘‘উলফ প্যাক’’ সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। তারা নিজেদের কথিত জিহাদি মতাদর্শকে কাজ লাগিয়ে সংগঠিত হচ্ছে। জঙ্গিদের আইডিওলজি কিংবা ডগমা বা ডক্ট্রিন এখনো এক্সিস্ট করে। ফলে সাইবার স্পেসে যোগাযোগ করে তারা সংগঠিত হতে চাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হলি আর্টিজানের আগে ও পরে জঙ্গিরা সবচেয়ে বেশি গ্রেফতার বা নিহত হয়। তাই প্রতিশোধ নিতে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলার চেষ্টা করছে। জঙ্গিদের গ্রেফতারে বাঁধা দিতে ও পুলিশের মনোবল ভাঙা তাদের হামলার মূল্য উদ্দেশ্য। তবে তাদের আইনের আওতায় আনতে আমরাও কাজ করছি।’