দেশজুড়ে সিরিজ বোমা হামলার ১৪ বছর

ঢাকা, জাতীয়

মবিনুল ইসলাম, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-28 04:36:26

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ জেলা বাদে দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)।

আধাঘণ্টার ব্যবধানে দেশের ৬৩ জেলার সাড়ে ৪শ’ জায়গায় ৫শ’ বোমা হামলা চালায় সংগঠনটি। আদালত প্রাঙ্গণ, প্রেসক্লাবসহ শুধুমাত্র ঢাকারই ১৮ স্থানে বোমা হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় দুজন নিহত ও ১০৪ জন আহত হন। বিষ্ফোরণস্থলে বিচারকদের হুমকি দিয়ে লিফলেট ছড়িয়ে দেয় জঙ্গিরা।

বিষ্ফোরণের ঘটনায় দেশব্যাপী ১৫৯টি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাগুলোর মধ্যে ৯৩টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ১০টি মামলায় চূড়ান্ত রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। বাকি ৫৬টি মামলা এখনও বিচারাধীন আছে।

চার্জশিট হওয়া ১৪৯ মামলায় ১ হাজার ১০৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। আর নিষ্পত্তি হওয়া ৯৩ মামলায় ৩৩৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন আদালত। এর মধ্যে ২৭ জনকে দেওয়া হয় ফাঁসির দণ্ড। ফাঁসির দণ্ড পাওয়া ৮ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। এসব মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ৩৪৯ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

৬৩ জেলায় বোমা হামলার পর একই বছরে সারাদেশে ধারাবাহিকভাবে বোমা হামলা চালায় জেএমবি। এতে বিচারক ও আইনজীবীসহ ৩০ জন নিহত হন। আহত হন ৪ শতাধিক বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। একই বছরের ৩ অক্টোবরে চট্টগ্রাম, চাঁদপুর এবং লক্ষ্মীপুরের আদালতে বোমা হামলা চালায় জেএমবি।

সিলেটে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক বিপ্লব গোস্বামীর ওপর বোমা হামলা করে জেএমবি। এতে তিনি ও তার গাড়িচালক আহত হন। ওই বছরের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে বিচারক বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায় আত্মঘাতী জঙ্গিরা। এতে ঝালকাঠি জেলা জজ আদালতের বিচারক জগন্নাথ পাড়ে এবং সোহেল আহম্মদ নিহত হন।

একই বছরের ২৯ নভেম্বর আইনজীবীর বেশে গাজীপুর বার লাইব্রেরিতে প্রবেশ করে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায় জেএমবি। এতে আইজনজীবী বিচারপ্রার্থীসহ ১০ জন নিহত হন। এভাবে একের পর এক বোমা হামলা চালাতে থাকে জেএমবি। ৮ ডিসেম্বর নেত্রকোনায় বড়পুকুর পাড়ে উদীচী শিল্প গোষ্ঠীর অফিসের সামনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় জেএমবি। সেখানে স্থানীয় উদীচীর দুই নেতাসহ ৮ জন নিহত হন। আহত হন শতাধিক।

একের পর এক বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা দেশে ও বিদেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। ২০০৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সিলেট থেকে গ্রেফতার করা হয় জেএমবি’র শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমানকে। এর চার দিন পর ৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে সিদ্দিকুর ইসলাম বাংলাভাইকে গ্রেফতার করে র্যাংব।

২০০৫ সালের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় ২০০৬ সালের ২৯ মে ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালত জেএমবির ৭ জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এদের মধ্যে ৬ জন কারাগারে আটক থাকায় ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ দেশের বিভিন্ন কারাগারে অন্য ৪ জঙ্গির সঙ্গে শায়খ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইয়ের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর