মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিতে ডুবেছে খুলনা

খুলনা, জাতীয়

মানজারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, খুলনা | 2023-09-01 14:01:23

শরতের শুরুতে টানা ৬ ঘণ্টার বৃষ্টিপাত হয়েছে খুলনায়। বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতে নগর ও নগর লাগোয়া প্রতিটি এলাকা এখন পানিতে নিমজ্জিত।

শুক্রবার (১৬ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় গুঁড়ি গুঁড়ি বর্ষণ শুরু হয় খুলনায়। রাত ৩টার পরে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। টানা ৬ ঘণ্টা ধরে চলে ভারী বর্ষণ। সকাল ৯টা পর্যন্ত বর্ষণে নগরের প্রতিটি এলাকা ডুবে যায়। বৃষ্টিতে নগরের নিন্মাঞ্চল কোমর পানিতে এবং স্বাভাবিক এলাকাগুলো হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায়।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, রাত ৩টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত খুলনায় ১১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটা এ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ চলমান থাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে আগামী কয়েকদিনের ভেতরে আর ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই।

সরেজমিনে খুলনা শহর ঘুরে দেখা যায়, বছরের সর্বোচ্চ এ বর্ষণে নগরের প্রধান সড়ক রয়েল মোড়, শান্তিধাম মোড়, শিববাড়ী মোড়, কেডিএ এভিনিউ থেকে শুরু করে খানজাহান আলী রোড, শের এ বাংলা রোড, রূপসা স্ট্যান্ড রোড, মতিয়াখালী রোড, টুটপাড়া সেন্ট্রাল রোড, পূর্ব বানিয়া খামার, বাবুখান রোড, মৌলভীপাড়া রোড, টিবি ক্রস রোড, আহসান আহমেদ রোড, হাজী মহসিন রোড, পিটিআই মোড়, কদমতলা রোড, লবণচরা রোড, লবণচরা বান্দাবাজার, দোলখোলা, মিস্ত্রীপাড়া, মিয়াপাড়া, বাগমারা, ইকবালনগর, রায়পাড়া, শামসুর রহমান রোড, ইসলামপুর রোড, বাইতিপাড়া রোড, দেবেন বাবু রোড, শেখপাড়া রোড, বসুপাড়া, নিরালা, করিমনগর, বেনী বাবু রোড, ধর্মসভা রোড, জোড়াগেট, নেভীগেট, বিআইডিসি রোড, বাস্তুহারা, সোনাডাঙ্গা, ছোট মির্জাপুর, গোবরচাকা রোডসহ নিম্নাঞ্চল এবং স্বাভাবিক এলাকাও প্লাবিত হয়েছে।

একই সঙ্গে শহরের নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর পানিতে তলিয়ে থাকায় দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। নগরের অধিকাংশ এলাকার খাবার পানির নলকূপ বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে থাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। এমনকি শহরের প্রতিটি এলাকার বাসা-বাড়ির লোয়ার ট্যাংকি তলিয়ে যাওয়ায় ব্যবহার্য পানি পাচ্ছেন না সবাই।

সকালে বৃষ্টি থেমে গেলেও অটোরিকশা-রিকশার মতো গণপরিবহন সংকটে নগরবাসীকে পোহাতে হচ্ছে আরেক দফা ভোগান্তি। রাস্তাঘাটে দু-একটি রিকশা বা অটোরিকশা চলছে, সুযোগ বুঝে চালকরা কয়েকগুণ ভাড়া হাঁকাচ্ছেন। হাঁটুপানি আর জলাবদ্ধতা মাড়িয়ে কর্মজীবীদের কাজে যেতে দেখা গেছে।

নগরের ডাকবাংলা মোড়ে ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই আমরা ডুবে যাই। আজ তো অনেক বৃষ্টি হলো। জনপ্রতিনিধিরা শুধু আশ্বাস দিয়েই ক্ষ্যান্ত, কাজের কাজ কিছু হয় না।

বয়রা বাস্তুহারা এলাকার সাদ্দাম হোসেন বলেন, বৃষ্টি হবে আর আমাদের এলাকা ডুববে না, এটা ভাবা যায় না। বর্ষা মৌসুমে আমাদের এলাকার ছোট বড় সব সড়ক ডুবে যায়। আর আজ আমার ঘরেই হাঁটু পানি। এ ভোগান্তি থেকে আদৌ কখনও মুক্তি মিলবে কিনা জানা নেই।
https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/17/1566029636847.jpg
রিকশা চালক চাঁন মিয়া বলেন, গোটা শহরই তো নদী হয়ে গেছে। ড্রেন দিয়া পানি যায় না। তার উপ্রে ওয়াসার কাম করতে গিয়া সব রাস্তার পেট কাটছে, তাই ভাঙ্গাচোরায় এক্সিডেন্ট হইতাছে।

এদিকে কেসিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, কেসিসির তত্ত্বাবধানে শহরের নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। তবে শহরের রাস্তার দুই পাশে যেসব নালা রয়েছে, তা পুরনো আমলের। এগুলো আধুনিকায়ন ও প্রশস্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। নালা প্রশস্তকরণে কাজ শেষ হলে শহরে পরিকল্পিতভাবে পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। ইতিমধ্যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশের নালা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর