আশাবাদী সরকার, হতাশ বঙ্গবন্ধুপ্রেমীরা

ঢাকা, জাতীয়

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-31 02:35:47

বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক বেদনাবিঁধুর দিন ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের এই দিন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে জাতির ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়ের সূচনা করেছিল একদল বিপথগামী সেনা।

আজ সে কালরাত্রির ৪৪ বছর পেরিয়ে গেল। অথচ এখনো বিদেশ বিভূঁইয়ে খোলা আকাশের নিচে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। যা দেখে হাতাশ মুজিবপ্রেমী সাধারণ মানুষ। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত সেসব খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার আইনি জটিলতায় সাজা কার্যকর হওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে তাদের মধ্যে।

অন্যদিকে সরকার বলছে, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে।

দেশ স্বাধীনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, হত্যার বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ঘৃণ্য ইনডেমনিটি অ্যাক্ট জারি করেছিল তখন। ৭৫ পরবর্তী সরকার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিদেশের বিভিন্ন দূতাবাসের মিশনে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে। দীর্ঘ ২১ বছর বিচারের বাণী নিভৃতে কেঁদেছিল। বিচারহীনতার কলঙ্ককের বোঝা বহন করে বাঙালি জাতি।

অবশেষে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকার বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ মামলায় ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড হয়। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি পাঁচ আসামির ফাঁসির সাজা কার্যকর করে জাতিকে আংশিক দায়মুক্ত করা হয়। তারা হলেন- ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ ও একেএম মহিউদ্দিন।

এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর সাতজনের মধ্যে আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, মোসলেমউদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও আবদুল মাজেদ বিদেশে পালিয়ে আছেন। এছাড়া আসামি আবদুল আজিজ পাশা পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান।

পলাতক এসব খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিলম্বে হতাশ মুজিবপ্রেমীরা। বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) সকালে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে আসা আহসান উল্লাহ মনি বার্তাটোয়ন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সমস্ত খুনিদের সাজা কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত বাঙালির কলঙ্ক সম্পূর্ণ মোচন হবে না।’

অধ্যক্ষ সুজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার যে আইনি জটিলতা সেটি খুবই হতাশাজনক। বিদেশি রাষ্ট্রগুলো একজন আত্মস্বীকৃত খুনিকে কিভাবে আশ্রয় দেয়! এর মধ্য দিয়ে কি তারা খুনিদের প্রশ্রয় দিচ্ছে?’

শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া খুনিরা নয়, তাদের পেছনের ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের।

আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য রুবিনা হক মীরা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে হুকুমের আসামি হিসেবে খুনি জিয়ার মরণোত্তর বিচার হওয়া দরকার। আর তাতে করেই প্রকৃত ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

তবে পলাতক খুনিদের দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনার আশার কথা জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বার্তাটোয়ন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘পলাতক ছয় জনকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। যেকোনো মূল্যে এই খুনিদের ফিরিয়ে এনে দণ্ড কার্যকর করব।’

বিদেশে পলাতক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত খুনিদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সাজাপ্রাপ্ত সেসব খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করা হয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর