ইউরোপ চামড়া না কিনলে ব্যবসা চাঙা হবে না

ঢাকা, জাতীয়

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-26 21:52:21

সকাল থেকেই বৈরী আবহাওয়া। কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আবার কখনো মাঝারি বৃষ্টি। তবে এ বৃষ্টি রাজধানীবাসীর মনে শীতল পরশ বুলিয়ে দিলেও চামড়া ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। বৃষ্টিস্নাত দিনে নগরবাসী যখন কোরবানির গরুর মাংসের সঙ্গে খিচুরির স্বাদ নিতে ব্যস্ত, তখন বিনিয়োগের টাকা তুলে আনার ভাবনায় চামড়া ব্যবসায়ীরা।

৫০ বছর ধরে চামড়ার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত মোহাম্মদ মোস্তাকিম। আইয়ুব খানে আমলে ৯ টাকা দামের গরুর চামড়া ৩ টাকায় বেচা-কেনা হতে দেখেছেন। তখনও কোনও চামড়াই নষ্ট হত না। অথচ বিগত কয়েক বছর ধরে চামড়ার দামের পতন ও এবার তাঁর চূড়ান্ত রূপ দেখে ভীষণ হতাশ তিনি। হতাশাগ্রস্ত কণ্ঠে মোস্তাকিম বলেন, ‘এতদিন ধরে ব্যবসার সঙ্গে আছি কিন্তু এত বাজে ব্যবসা আর কখনো দেখিনি।’

বুধবার (১৪ আগস্ট) মোস্তাকিমের সঙ্গে কথা হয় দেশের সবচেয়ে বড় কাঁচা চামড়ার বাজার রাজধানীর পুরান ঢাকার পোস্তায়। ব্রিটিশ আমল থেকেই এই পোস্তায় কাঁচা চামড়া বেচা-কেনা হয়। বিশাল এলাকা জুড়ে ছিল আড়তদারদের আড়ত। সময়ের সঙ্গে চামড়ার ব্যবসায় যুক্ত অনেকেই দেউলিয়া হয়ে এই পেশা ছেড়ে চলে গেছেন।

মোস্তাকিম বলেন, বাংলাদেশের চামড়ার বড় বাজার ছিল ইউরোপ। অথচ গত কয়েকবছর ধরেই তারা চামড়া নিচ্ছে না। আমেরিকাও বিমুখ। ইউরোপ আমেরিকা যদি চামড়া না নেয় তাহলে কোন কিছু করেই ব্যবসায় চাঙাভাব ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, ইউরোপের ক্রেতারা যখন এদেশে চামড়া নিত তখন একটি মাঝারি গরুর কাঁচা চামড়া এই পোস্তায় ২/৩ হাজার টাকায় কেনা-বেচা হত। অথচ এখন ১০০ টাকাতেও গরুর চামড়া কেউ কিনছে না। ছাগলের চামড়া ৫ টাকা ১০ টাকা। ভেড়া মহিষের কোন কথাই নেই।

ঈদের পর যে পোস্তায় কাঁচা চামড়া কেনা-বেচা, প্রক্রিয়াজতকরণে শ্রমিকরা থাকত ব্যস্ত, এবার তারা অতীতের দিনগুলোর স্মৃতিরোমন্থন করে দিন কাটাচ্ছেন। রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে গরু, ছাগলের চামড়া। কোথাও কোথাও চামড়া এখনও স্তূপ করে রাখা হয়েছে। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের থেকে কেনার লোক নাই।

বৃষ্টিতে পচা চামড়া থেকে কটু গন্ধ ছড়াচ্ছে। অনভ্যস্ত যে কারো জন্যে সেখানে নিশ্বাস নেওয়াটা দায়। চামড়া নেওয়ার ক্রেতা নেই দেখে অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া সিটি করপোরেশনের গাড়িতে তুলে ডাম্পিংয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছেন।

শ্রমিক আব্দুর রহিম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, আগে যখন কাজের ব্যস্ততা ছিল তখন এখানকার পরিবেশ থাকতো একদম ভিন্ন। এই যে রাস্তায় চামড়া পড়ে থাকতে দেখছেন, দাম থাকলে রাস্তায় একটা চামড়াও থাকত না। ছেঁড়া ফাটা সবই তখন বিক্রি হয়ে যেত। চাহিদা নাই, দামও নাই।

এদিকে চামড়ার দাম না থাকায় উপযুক্ত মূল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু হঠাৎ করে সরকারের নেওয়া এই সিদ্ধান্তে এ শিল্প খাতের কোনও উপকার হবে না বলে মনে করেন আড়তদাররা।

আড়তদার হাজী সমীরউদ্দিন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, কোরবানির কমপক্ষে ৩৬ ঘণ্টা পর সরকার কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্তের কথা জানালো। অথচ ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার সেটা হয়েই গেছে। কমপক্ষে ৪/৫ মাস আগে থেকে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রচারণা চালাত তাহলে সমূহ লোকসানের হাত থেকে ব্যবসায়ীরা বেচে যেত।

কাঁচা চামড়ার ক্রেতা ব্যবসায়ীদের মতে, চামড়া দেশের সম্ভাবনাময় একটা শিল্প। গুণগতমানের দিক থেকেও বাংলাদেশের গবাদি পশুর চামড়া উন্নতমানের। আর সে কারণে এক সময় বিদেশি বায়াররা এদেশ থেকে চামড়া কিনত। অথচ এখন তারা বাংলাদেশ বিমুখ। এর কারণ সরকারকে অনুধাবন করতে হবে। চামড়াশিল্পকে টিকিয়ে রাখা শুধু নয় বিকশিত করতে হলে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা না হলে পাটশিল্প যেমন ধ্বংস হয়ে গেছে, চামড়া শিল্পও ধ্বংস হয়ে যাবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর